মানুষ ও জন্তুদের দেহের অভ্যন্তরীণ শব্দ শোনার জন্য এখন নানান ধরনের যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে। আমরা তাই শুনছি সে সব শব্দ। কিন্তু আমরা উদ্ভিদদের অভ্যন্তরীণ শব্দ শুনতে অক্ষম আজও।
আমার অধিক শ্রবণশক্তি দ্বারা আমি ওদের অঙ্গে কান পাতি আর শুনি নানান ধরনের শব্দ। কিন্তু মানে বুঝি না।
ফুলের পাপড়ি যখন খোলে, তখন আমি ওখানে কান ঠেকিয়ে শুনি সেই প্রকাশিত হওয়ার খুশির শব্দ। কখন পাতা খসে পড়বে, তার অপেক্ষা করি। আর তখন কান লাগাই ওই জায়গায়। শুনি চির বিচ্ছেদের শব্দ। ফল পেকে ঝরে পড়ার সময়ও শুনি জীবন পরিপূর্ণ হয়ে সফলতার সঙ্গে সঠিক সময়ে বিদায় নেওয়ার সন্তুষ্টির শব্দ। ফুল, ফল, পাতা, ডাল ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি অসময়ে কেউ তুললে তখন উদ্ভিদদের ব্যাথা, বেদনা ও কষ্টের শব্দ শুনি। যখন কেউ গাছ মাটি থেকে তুলে ফেলে, তখন মূল, শিকড় ও ডাল, পাতার আর্তনাদ শব্দ শুনি। কেউ কাটলে, ছিঁড়লে, ভাঙলে আঘাত করলে ওদের যন্ত্রণার শব্দ শুনি। প্রজাপতি, অলিরা এলে তাদের উচ্ছ্বসিত হওয়ার শব্দ শুনি। বীজ থেকে অঙ্কুরিত হওয়ার শব্দ শুনি।
গ্রীষ্মের প্রখর রোদ্রে ওদের তৃষ্ণার করুন শব্দ শুনি। বৃষ্টির জলে ভিজে যাওয়ার সময় ওরা যে তৃপ্তি পায়, তার আনন্দের শব্দ শুনি। শরৎকালে ওদের পুলকের শব্দ শুনি। হেমন্তের শিশির ও কুয়াশার চাদরে ঢেকে ওরা যে শব্দ সৃষ্টি করে, আমি তা শুনি। শীতের কনকনানি ঠান্ডায় তাদের কম্পনের শব্দ শুনি। বসন্তের ওদের পরম সুখ পাওয়ার শব্দ শুনি।