অণুগল্পে অমিতা মজুমদার

চোরাস্রোত

পাঁচ ভাইয়েরব একমাত্র বোন অনু। অনুপমা রায়। স্বচ্ছলই শুধু নয় ধনাঢ্য পরিবারের একমাত্র মেয়ে বলে অনু আর পাঁচজন মেয়ের চেয়ে একটু বেশি যত্নে ভালোবাসায় বড় হয়।শুধু মা বাবাই নয় ভাইয়েরাও তাকে মাথায় করে রাখে। একটু বড় হতে হতে পাড়া প্রতিবেশিরাও অনুকে খুব ভালোবাসে।কারণ অনুকে ভালো না বেসে পারা যায়না। অনুর ব্যবহার,আচার ,আচরনে সবাই তাকে পছন্দ করে। মোটের উপর অনুর বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগ নেই। অনু লেখাপড়ায়ও ভালো।ঘরের কাজকর্মেও সে মাকে সবসময় সাহায্য করে। এই অনুর বয়ঃসন্ধি পেরুতে না পেরুতে কি এক বিষণ্ণতায় পেয়ে বসে তাকে। সে যেন সবার কাছে থেকেও সবার সাথে নিজেকে মেলাতে পারেনা। হঠাৎ হঠাৎ কেমন উদাস হয়ে যায়।
বিষয়টা মা বাবা বা ভাইয়েরাও তেমন একটা খেয়াল করতে পারেনা।অনুও কেমন যেন কাউকে বলতে পারেনা। এভাবে কেটে যায় আরো কয়েকটা বছর। এখন অনু পূর্ণ নারী একজন। বাবা মা বিয়ের কথা ভাবছে। এতোদিনে লেখাপড়াও শেষ। ইচ্ছা আছে চাকুরি করার।কিন্তু বাবা মা বলছে চাকুরি তুমি করবে তাতে বিয়েতে তো সমস্যা নেই। তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে,তোমাকে পাত্রস্থ করাটাও আমাদের কর্তব্য।
এভাবেই একসময় প্রবীরের সাথে অনুর বিয়ে হয়ে যায়। প্রবীর সুপ্রতিষ্ঠিত সরকারি আমলা। দেখতে শুনতেও ভালো,পরিবারেও শুধু বাবা মা আর একমাত্র বোন। তাই অনেকটা নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের মধ্যেই পড়ে । বিয়ের দিনগুলো,পেরিয়ে অষ্টমঙ্গলা শেষ করে শ্বশুর বাড়ি যায় অনু। এবারে হানিমুনে যাওয়ার পালা। প্রবীর কক্সবাজারের ফ্লাইটের টিকেট বের করে অনুর হাতে দেয়। টিকেট সে আগেই কেটে রেখেছিল। মেয়ে দেখা বিয়ে সবকিছু এতো দ্রুত হয় যে অনুর সাথে তেমন করে আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ হয়নি। প্রবীরের অনুকে দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিল তাই সে আর দেরী করেনি।
টিকেট দুটো হাতে পাওয়ার পরই কেমন যেন অনুর হাতপা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া শুরু করলো। এতোকাল মা বাবা,দাদারা বা বন্ধুদের যে কথা সাহস করে বলতে পারেনি,এখন সে কথা গোপন করবে কি করে ? প্রবীর তো আর দশটা স্বাভাবিক স্বামীর মতোই আচরন করছে। কিন্তু সে কি পারবে একজন স্বাভাবিক স্ত্রীর মতো আচরন করতে ?
তার যে অপরাধ বোধ হচ্ছেনা তা নয়, কিন্তু তার কথা শোনার মতো কেউ কি ছিল ? কেমন করে বলবে সে ,তার পুরুষ শরীর ভালো লাগেনা।তার মেয়েদের শরীরই ভালো লাগে ।
( আমাদের সমাজে এরকম অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা নিজের এই সমস্যার কথা পরিবার তথা আপনজনদের কাছেও বলতে পারেনা। আর এই না বলতে পারাটাই আরো গভীর সংকট তৈরি করে সমাজে,সংসারে।)
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।