চমকে উঠলেন প্রবীর বসাক।এ.এস.এম. চালসা রেল স্টেশন।একটু আনমনা হয়ে সবে নিজের অফিস ঘর ছেড়ে বাইরে স্টেশনের বেঞ্চে বসেছেন। আলিপুরদুয়ার-শিলিগুড়ি ইন্টারসিটি পাস করিয়ে রেলের খবর অনুযায়ী যা বুঝেছেন,আপাতত ঘন্টাখানেক আপ ডাউনে কোন ট্রেন নেই।গরম একটু আধটু পড়েছে।তবে বাইরেটা এখনও মনোরম ডুয়ার্সের এই প্রকৃতিতে মধ্য এপ্রিলেও।সেই মনোরম প্রকৃতির স্বাদ নিতে আর দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে সবে বসেছেন।রাত ঘনিয়ে আসছে আরো।তার গায়ে প্রায় ঠেস দিয়ে হঠাৎ এক মহিলা এসে বসলেন।তাই প্রবীর বাবু চমকে উঠলেন।
আমি?কেন চিনতে পারছেন না?সুজাতা মন্ডলকে মনে পড়ে?
না তো!
ভাবুন।আর একটু ভাবুন।অত তাড়াতাড়ি আমি উত্তর চাইনি।
সেই পাশে বসা নারী প্রবীর বসাককে বলেন।স্টেশন ম্যানেজার ভাবতে ভাবতে হারিয়ে গিয়ে চমকে ওঠেন।আরে সেই সুজাতা মন্ডল!তা এতো বছর পরে হঠাৎ কেন এখানে?কি মতলবে?অবশ্য কোথায় এখন থাকে তাও তো জানে না।তড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন প্রবীর বাবু।আর লাফিয়ে উঠতেই হাত ধরে ফের বসতে বললেন।
বললেন—
আমাদের যা বয়স এখন মন খুলে পাশে বসে কথা বললে কেউ কিছু মনে করবে না।যদি না তোমার নিজের মনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য থাকে।
আমি তোমার সব কথাই জানি, খোঁজ খবরও রাখি।এই ব্যাগটা নাও কাজে লাগবে।বলে,একটা ছোটো মাপের ব্যাগ হাতে দেয়।আমি জানি মেয়েদের একঢালা ভালোবাসা বুকে বেঁধে লাভ নেই। সঙ্গে রূপ আর লক্ষ্মীর বণার্ঢ্য ঝাঁপিও প্রয়োজন।তাই না?এই নাও।ভেতরে নাম ঠিকানা দেওয়া আছে প্রয়োজনে যোগাযোগ করো।
বিনা বাক্যব্যয়ে সেই ব্যাগ নিলেন,এই নারী! নাকি আধো আলোর মায়াবী ডুয়ার্সের প্রকৃতির বুকে এক অশরীরীর কাছ থেকে প্রবীর বসাক।আধো আলোর সেই স্টেশনের মায়াবী রাতে রহস্যময়ী হঠাৎ দূরে হারিয়ে গেলেন।
প্রবীর বসাক অনেক রাতে যখন একলা হলেন রেস্টরুমে ব্যাগ খুলে দেখলেন,তাতে অন্ততপক্ষে লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না আর পঞ্চাশ হাজার টাকা।এই এপ্রিলের শেষেই তার বড় মেয়ের বিয়ে। কিছুই এখনো যোগাড় হয়ে ওঠেনি।আগে এইজন্য কত মেয়ের বিয়েই হতো না।খুব সাবধানে ব্যাগটি সরিয়ে রাখলেন।কাল মর্নিং শিফটের ডিউটি সেরেই বাড়ি ফিরে যাবেন।