প্রচন্ড জ্যামে ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে গেল ডানলপ ছাড়তেই।সামনে কি একটা গন্ডগোল চল। বাস,গাড়ি সব ছন্নছাড়া ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।চতুর্দিকে একটা হইচই কান্ড।এটা অবশ্য নতুন নয় আমার কাছে।তবে আজকের দিনটা একটু অন্যরকম।রহড়া যেতে হবে এবং একটু তাড়াতাড়িই যেতে হবে বলে বালি থেকে ট্যাক্সিই নিয়ে নিলাম।কিন্তু বিধি বাম।আজই এতো জ্যাম যে কহতব্য নয়।নাও এখন চুপচাপ এই গরমে বসে থাকো,আর ফুসফুসে ধূলোময়লা ভরো! ট্যাক্সিওয়ালার সাথে একটু বেশী ভাড়া দিয়ে শর্তই ছিলো তাড়াতাড়ি পৌঁছাবার।
আমি ছাপোষা ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী মটরসাইকেলই আমার বাহন,কিন্তু রহড়ার সুকুমার বাবুর সাথে আমার পরিচয় বহুদিনের,তাই তার বাড়ীর কাজটাতে না করতে পারিনি,যদিও ও জায়গাটা আমার কাজের আওতায় পরেনা।আর হাজার চল্লিশেক টাকা বাকি আছে,জানি সুকুমার বাবু এক কথার লোক,টাকাটা মার যাবেনা।তাই আমার তরফেও একটু গড়িমসি ছিল।
সুকুমার বাবুর সাথে শর্তই ছিলো পুরো টাকার আর্দ্ধেক প্রথমবার, আর বাকিটা তিনটে মাসে মিটিয়ে দেবেন এবং সেটা আমার দোকানে এসে।ভদ্রলোকের এক কথা।তাই হচ্ছিল।এ মাসে টাকা দেবার দিন মানে গতকাল হঠাৎই একটা ফোন এলো ‘ ভাই অভিজিত, আমার ছেলের খুব শরীর খারাপ।কাল ওকে নিয়ে চেন্নাই যাচ্ছি।টাকাটা আমি গিয়ে দিতে পারছিনা,যদি তুমি এসে নিয়ে যাও ভালো হয়।’
‘দাদা আজ তো যেতে পারবোনা।পরে নিয়ে নেবো,ভালোভাবে ফিরে আসুন।’
‘দেখো অভিজিত,আমার জীবনটা একটা শর্ত মেনে চলে।আমি এক কথার মানুষ। তোমাকে টাকাটা না দিয়ে যেতে পারলে গিয়েও শান্তি পাবোনা।এক কাজ কর কাল সকাল দশটার মধ্যে এসে নিয়ে যেও,পারবে তো?’
‘ঠিক আছে দাদা কাল পৌঁছে যাবো।আপনার যখন এতই ই, না হলে ঘুরে এসে দিলেও চলতো।’
তা হয়না ভাই,শর্তের খেলাপ আমার ধাতে নেই।
ও কে,দাদা কাল দেখা হবে।
সকাল সকাল বাড়ির বাজার করা সম্ভব নয় তাই কমলা মানে আমার বউকে বল্লাম ‘ আজ নান্টুকে( আমার দোকানের সহকারী) দোকানটা খুলতে বোলো,আমি রহড়া যাচ্ছি সুকুমারদার কাছ থেকে টাকা আনতে।’
‘নান্টুকে পাঠালে হয় না।বাড়িতে কত কাজ?বাজারও তো নেই কিছু, কে করবে? মোটরসাইকেলেে অতটা যাবে?ট্যাক্সি নিয়ে নাও একটা ‘।
‘না,সুকুমারবাবুকে চেনোনা? এক কথার মানুষ। নেহাৎ এবার বিপদে পড়েছেন বলে —
ঠিক আছে ট্যাক্সিই নিয়ে নিচ্ছি। ফিরে এসে
আজ চলো সি সি টুতে ঘুরে আসবো,ওখানে খাওয়া দাওয়া,সিনেমা দেখে সন্ধ্যাতে ফিরবো।আজ রান্নাঘর থেকে তোমার ছুটি। ‘
‘বাবাঃ,প্রেম উথলে উঠছে দেখছি,’
বেরিয়ে ট্যাক্সি ধরে আসতেই এই বিপত্তি।দশটার মধ্যে পৌঁছাতে পারবো তো? ধুর এর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হলেই ভালো হোতো।
এই সব সাতপাঁচ ভাবছি,হঠাৎ জানালা দিয়ে একটা হাত ভিতরে এলো,চমকে উঠলাম। একজন ভিখারিনী ‘বাবু সকাল থেকে কিছু খাইনি।কিছু দিন,তাহলে ভগবান আপনার মঙ্গল করবেন।’
ওকে দশটা টাকা দিয়ে ভাবতে বসলাম আমাদের এই আধুনিক জীবনে ভগবানও কি শর্তসাপেক্ষে আমাদের ভালো করেন? কে জানে?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন