বহুদিন ধরেই ভাবছিলাম একটা যুত করে প্রেম করতে হবে- মানে প্রেম নামের বিষম বস্তুটি কি আমার জীবনে আদৌ আছে না গেছে তা বুঝতে টুঝতে পারছিলাম না তো, তাই!
যেমন ভাবা তেমন কাজ! একটা মেয়েকে বেশ কিছুদিন ধরেই তাক করে ছিলাম বটে। তা আজ তাকে বেশ বাগে পেলাম। মানে আজ দিনটাও বেশ ছিল, মুডটাও আর বেহালা, ক্ল্যারিওনেট আর চেলোটেলো নিয়ে কিছু অপাংক্তেয়ও জুটে গেছিল।
তাই ফ্যাট ফ্যাটে আকাশের নীচে ক্যাট ক্যাটে একটা লাল জামা পড়ে মেয়েটিকে ফুটপাথে কব্জা করে তার সামনে হাঁটু মুড়ে বলে বসলাম, “ভালোবাসি তোমায়”। সে বলল, “সে তো আমিও আমাকে বাসি, আমার মা বাবা দাদাও বাসে কিন্তু তাতে টাটকা কিছু ঘটনা ঘটছে কি?”
এর কোন উত্তর হয়? তারপরেও সে বলে বসল, “তা প্রেম নিবেদন করলে, এনেছ টেনেছ কিছু? নাকি ধরেই নিয়েছিলে যে চিঁড়ে ভিজবে না?” “এই যাঃ” আমার সাড়ে পাঁচ ইঞ্চির জিভটা ছ হাত বার করে বললাম “সে তো ভাবিই নি কিছু, মানে কিছু কিনে আনতে হবে নাকি?” “থাক আর কেরদানি ফলাতে হবে না! দেখি আমার ঝোলায় কিছু আছে কি না?” বলে সে তার ছোট্ট ঝোলা থেকে জুতো সেলাইএর স্বপ্ন থেকে শুরু করে চণ্ডীপাঠের গল্প বের করে আমায় দেখিয়ে বলল, “দেখ দেখ, উলটে পালটে দেখ, যদি কিছু পাওয়া যায়!”
বুঝলাম ঠাট্টা করছে, গোমড়া মুখে বললাম, “থাক তালে, যাই বরং!” সে লাফিয়ে উঠে বলল, “সে কি কথা হে? যাবে কি গো? প্রেম নিবেদন করলে! করেই চলে যাবে? তা হয় না কি? তা আছে কি পকেটে?”
মুখ কাচুমাচু করে বললাম, “ইয়ে বাম পকেটে রুমাল আর পিছনের পকেটে আছে পার্স!” সে আমার হাত ধরে বলল, “বাহ এই তো চাই! চল ম্যাকডোনাল্ডস যাই, তোমার প্রেমের ব্যর্থতা সেলিব্রেট করি গিয়ে!”
আমি গোমড়া মুখে বললাম, “কিন্তু আজ তো সোমবার, গুরুদেবের বারণ ছিল যে!” সে হতাশ হয়ে বলল, “তাহলে আর কি? ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও!” মাথা নীচু করে হাঁটা লাগাবো অমনি সে এসে আমার হাত ধরে বলল, “এক কাজ কোরো বরং কাল একটা গোলাপ নিয়ে এস, ঠিক তোমার জামার মতো রঙ! আবার আমায় প্রেম নিবেদন কর! এত সহজে হাল ছাড়লে চলে? তাহলে হাত ধরবে কি করে?”
আমি দেখলাম ব্যাপারটা মন্দ না, টুক করে হেসে বললাম, “সেই ভালো!” আর মেয়েটা মুখটাকে খুশীতে ভরিয়ে ঝিকমিকিয়ে চলে গেল।
তারপর? তারপর আর কি? মরসুমী গোলাপের গন্ধে আমার ঘর বারোমাস মাতোয়ারা। আর সেই মেয়েটি? থাক সে কথা না হয় পরে বলা যাবে। না হলে যদি গোলাপের গল্পটা গল্পই থেকে যায়?