• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ঃ জয়ন্ত দত্ত

কবি, অনুগল্পাকার, প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে শিল্পাঞ্চলে খ্যাত। দেশ, নন্দন, তথ্য কেন্দ্র ইত্যাদি ছাড়াও অনেক ছোট পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়।

লাশ

স্বাভাবিক ভাবেই আমরা যে ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যেতে চাই, ভুলে থাকতে চাই –সেই মৃত্যুকে নিয়েই লোকটি ঘর করে।সকাল বেলা স্নান করে ।মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে অফিসে যায়।আমাদের মতই বাসে-ট্রামে ঘেমে নেয়ে অফিসে পৌঁছয়।খাতায় সই করে কাজ শুরু করে।বডি কাটবার জন্য টেবিলে তোলে।নামায়।পরিষ্কার করে।কখনো ডাক্তার বাবুর সাথে সেলাই করে।কখনো মাথার খুলিটাকে খুলে ফেলার কাজে হাত লাগায়।
এই তো সেদিন –জ্ঞানেশ্বরী কান্ড বা পোস্তা ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর,দলা পাকানো মৃতদেহগুলো এখানেই আনা হয়েছিল।লোকটির সামনেই বডিগুলো ব্যাকরণ মেনে পোস্টমর্টেম করে রিপোর্ট দেওয়া হয়।তবু চব্বিশ ঘন্টা বডি নিয়ে ঘর করা মানুষটার সব গুলিয়ে গিয়েছিল।বুঝতে পারছিলেন না –কোনটা হাত,পা,বুক কিংবা চোয়াল!
তবে আজ চার বছরের বাচ্চার নিথর শরীরটাকে পোস্টমর্টেমের জন্য টেবিলে তুলতে গিয়ে লোকটার শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে।কোন কালে শুকিয়ে যাওয়া চোখের জল সবার অলক্ষ্যে বাঁধ ভাঙে।তখনকার মত মুছে নিলেও যন্ত্রণাটা বুকের ভেতর থেকে যায়।তাকে চেপে রেখেই ব্যস্ত শহরের সব ভিড় অগ্রাহ্য করে লোকটি বাড়ি ফেরে।
বাবার বাড়ি ফেরার শব্দ পেয়ে চার বছরের ছোট মেয়েটি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে।লোকটি অনুভব করে তাঁর শরীরটা তখনও শরীর –বডি নয়!!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।