• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় সুপ্তশ্রী সোম

লকডাউনের অভিমন্যু

সাত মাসে পড়েছে সোহাগীর পোয়াতি হওয়ার।
আজ সকাল থেকেই তার শরীর টা ঠিক নেই।গা হাত ঢিস ঢিস করছে। পুকুরের শোল মাছটার
মতো ইদিক সিডিক ঘাই মারছে তার পেটের টা।
পালান ওর সোয়ামী , ওকে বলেছিলো ” যেওনি আজ! কিন্তুক কাজে সে যাবেই।”  না গেলি তোর পেট দেখে ঠিকেদার  পয়সা দেবে” ! চল থালে “। উত্তর শুনে সোহাগী আর কিছু বলতে সাহস পায়নি। সারা বছর খেটেদুটো পয়সার মুখ দেখবে বলেই গেরাম ছেড়ে তাদের আসা।সোহাগী আর পালানের  দুজনের ই কিছু নেই। পালান একাই আসতে চেয়েছিল, সোহাগী আসতে দ্যায়নি। বাগদি ঘরের মেয়ে বলেপালানের মা বাপ সোহাগী কে ঘরে নেয়না। তো সেই ইস্তক দুজনেই কাজ করে। এখন রাস্তার কাজে দিল্লির কাছাকাছি। তাদের মত জনা পঁচিশের এই দল একই ঠিকেদারের কাছে কাজ করছে। টানা কাজ। পয়সা টা বেশি খরচা হয়না। শুধু ধু ধু মাঠের মধ্যি খানে ঝুপড়ি তে থাকতে হয় । কষ্ট না করলি গরিব মানষের চলবে ?কিছু টাকা জমিয়ে আয়লায় ভেঙে পড়া চালা টায় আবার নতুন করে বাস করবে। এই ছিল পালানের ইচ্ছে। মাঝ খানে এই সোহাগী টা পোয়াতি হলো পালান বেরিয়ে যায়।বালিশ কাঁথার ভিতর থেকে ছেঁড়া কানি গুলো গুছিয়ে রাখে সোহাগী। বিয়োনোর পর লাগবে।”আহা , আজ এত ঘাই মারতেছ কেনো বাপ” ।সোহাগী তার পেটে হাত বোলায়।  তার মা বাপ নেই। কি করে যে সব সামলাবে। হাঁফায় সোহাগী।   এই মাস থেকে কাজ করতে একদম পারছেনা সে।বেলা পড়ে এলো। সোহাগী উঠে দুটো জল দেওয়া ভাত খেয়ে ফের গা এলায়। হঠাৎ একটা গোলমাল এর আওয়াজে উঠে ঝুপড়ি র বাইরে এসে দ্যাখে দলে দলে রাস্তার কুলি রা ফিরে আসছে ছুটে ছুটে। ” হে ভগমান কি হলো আবার ! নেসচয় কোনো গোলমাল। ” ভয়ে বুক টা ঢিব ঢিব করে ওঠে সোহাগীর। আজ ওর শরীর টা খারাপ আর আজই কিনা! হে মা ওলাবিবি , তোমারে সোয়া টাকার পুজো দেব মা” । কিছু খারাপ না হয়। ওই তো পালান ! ” কি হইছে গো , এরম আগে আগে চইলে এলে” । পালান টিনের বাক্সটা টেনে যা পারে তুলতে লাগলো। মুখে কথা নেই।” কি হইছে বলবানা”।
“শহরে মড়ক লেগেছে রে সোহাগী। আজ রাতের মদ্দি যেমন করে হোক ঘরের গাড়ি ধইরতে হবে। আমাদের একেনে থাকতে দেবে নি রে। চল চল। আর দেরি করলে “
“কিন্তুক আমার শরীল টা যে ” ” বলতিচি ওট , তা না হেঁকাতি করতিছিস ” পালান হাত ওপরে তোলে।
” বিয়োবি তো!  চল রাস্তায় বিয়ো”শালা বিয়োচ্ছে ” । এক্ষুনি  বেরোলি কাল সকালের ভিতর ইস্টিশনের ছাউনি জুটবে ”  সোহাগীর অবিশ্বাসী মুখে অনীহা খেলা করে।পালান ততক্ষণে মাথায় তুলেছে টিনের বাক্স, তার মাথায় তাদের ময়লা কাঁথা কানির বিছানার পোঁটলা। আধ ঘন্টার মধ্যেই দল টা বেরিয়ে পড়েছে। সহরছাড়িয়ে তাদের অস্থায়ী আস্তানা। সরকারের হুকুম।অল্প কিছু খাবার আর ছেঁড়া ন্যাকড়া র পোটলা নিয়ে সোহাগী পিছন পিছন হাঁটে। অন্ধকার হয়ে এসেছে এখনো কাছের শহরের আলো চোখে পড়েনি। দল কে আর নজরে পড়েনা পালানের। কি বিপদেই না পড়লো। পোয়াতি বউ টার কষ্ট হচ্ছে বোঝে। ঠিকাদারের কথাটা তার মাথায় ঢোকেনি। কি মড়ক , কেনো এলো সে মড়ক, আর কেনই বা তাদের বাড়ি ফিরে যেতে হবে সে সব প্রশ্নের উত্তর পালানের কাছে নেই। তাদের মরণ তো কত ভাবেই হয়। গরিব মানসের আবার মরার ভাবনা!! তাও কিনা সরকার ভাবতেছে  । এক গাদা প্রশ্ন তার মনে উঁকি মারছে। তারা হুড়োয় পাওনা টাকার সব টাই প্রায় রয়ে গেলো ঠিকেদার এর কাছে।সাপের মত পড়ে থাকা রাস্তা হালকা চাঁদের আলোয় তাদের পথ দেখায়। দিগন্তের দিকে খালি চোখে পালান আর সোহাগী শহরের আলো খুঁজতে থাকে। সোহাগীর পেটের বাচ্চা টাও অভিমন্যুর মত জেনে নিচ্ছে তার অনাগত জীবনের গলি ঘুঁজি। সামনে তাদের অনেক অনেক পথ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।