• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় তৃষ্ণা বসাক

হুতোমের নতুন নকশা

গিন্নি লোকনাথ সুইটসের কচুরি, ছোলার ডাল ও জিলাবির সন্ধান করিতে বলিয়াছিলেন। রোজ দুগ্ধ ও ভুট্টা চূর্ন খাইতে খাইতে তাঁর জিহবায় চড়া পড়িয়াছে।কিন্তু লোকনাথে গিয়া দেখিলাম কচুরি, ছোলার ডাল নিঃশেষিত, চারটি শীর্ণ জিলাবি পড়িয়া আছে, তাহাদের বুকের ওপর দিয়া একটি পিপীলিকা উদাসীন মুখে তীর্থযাত্রায় যাইতেছে। দেরি না করিয়া ওই চারখানি হস্তগত করিলাম। তারপর ভাবিলাম একটু হাবুদার চা-দোকান খুলিয়াছে কিনা দেখিয়া যাই। গিন্নির একদিন দেরিতে প্রাতরাশ খাইলে মহাভারত অশুদ্ধ হইবে না। কিন্তু এই হাবুর চায়ের দোকান খুলিতেছে না বলিয়া দেশে শিক্ষাব্যবস্থা ভাঙ্গিয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছে। আমি ভাবিলাম হাবুদাকে বলিয়া যাই, চা না বিক্রয় করুক, অনলাইনে জ্ঞানবাণীটা অন্তত চালু করুক।
না, হাবুদার দোকান খোলে নাই, কিন্তু বামদিকের ‘কাটাকুটি’ সেলুনটি খুলিয়াছে। তাহার সামনে গুচ্ছ গুচ্ছ বৃদ্ধ যুবা প্রৌঢ় ঘেঁষাঘেঁষি করিয়া দাঁড়াইয়া আছে। আমি সবিস্ময়ে বলিলাম ‘সেলুন খুলিল কেন?’
একটি বৃদ্ধ বলিলেন ‘কারণ পুলিশের চুল দাড়ি ভয়ানক বাড়িয়া গিয়াছে’
অকাট্য যুক্তি। এমন সময় ফোন আসিল। ভাবিলাম জলযোগে বিলম্ব ঘটিতেছে দেখিয়া গিন্নি ফোন করিতেছেন। না , সজল বেরা। ব্যাংককে ইনি আমাদের সফরসঙ্গী ছিলেন। বৈঠকখানা বাজারে ইঁহার মৎসের পাইকারি ব্যবসা। সজল বেরা সহর্ষে  কহিলেন ‘ বিগত কয়দিন বিজনেস খুব ডাল ছিল দাদা। আজ অনেক দিন পর একটা বড় অর্ডার পাইয়াছি’
‘বড় অর্ডার!’
‘হ্যাঁ দাদা, একটা শ্রাদ্ধ বাড়িতে ১০০ জনের  অর্ডার।’
‘শ্রাদ্ধ বাড়ি! এখন! ১০০ জন একস্থানে! পুলিশ কী করিতেছে?’
একটি যুবা আমার দূরালাপ শুনিতেছিল, আমি খেয়াল করি নাই। সে ফুট কাটিল ‘কেন, সেলুনে কেশ কর্তন করিতেছে’ অবশ্য কেশের পরিবর্তে সে আর একটি সুললিত দুই অক্ষর ব্যবহার করিয়াছিল, তাহা লেখা আমি সমীচীন বোধ করিলাম না।
একইসময়  সজলবাবু বলিলেন ‘পুলিশ বলিয়া কি মানুষ নহে? উহারা কি মৎস খাইবে না? শরীর ঠিক না থাকিলে উহারা কাজ করিবে কী উপায়ে? তবে কাঁচা মৎস লইবে না। ফ্রাই পাঠাইতে বলিল’
‘তাহা বেশ। এক মিটার দূর হইতে দিবেন কিন্তু।  আমি ভাবিতেছি একস্থানে ১০০ জন, অনুষ্ঠান পরে করিলে ভালো হইত না কী?’
‘তাহা বলিলে হয়? পরকালের কাজ। ইহা কি উম্বল্ডন ম্যাচের ন্যায় ছেলেখেলা? কত লোক তো অ্যাডভান্স শ্রাদ্ধ করিতে চায়।  ধাপার মাঠে না কোথায় নিক্ষেপ করিবে, জাত ধর্ম কিছুই রক্ষা পাইবে না, কিন্তু এত মৎস আমি এই বাজারে পাই কোথা বলুন তো? যাহা হউক। রাখি দাদা। স্টে হোম স্টে সেফ’
সজলবাবু রাখিতে না রাখিতে গিন্নির ফোন ‘হ্যাঁগো, কচুরি মিলিয়াছে? আমার যে পিত্ত পড়িয়া যাইল’
‘কচুরি পাই নাই, চারখানি জিলাবি। আর ইয়ে মানে মৎস, মানে মৎসমুখীর মৎসের অর্ডারটা দিয়াই আসিতেছি। তুমি চা তৈয়ারি করো’
সেই যুবাটি আবার ফুট কাটিল ‘চাহিলে পুষ্পের  অগ্রিম অর্ডারও দিতে পারেন। পুষ্পবিপণিগুলিও পুনরায় খুলিতেছে’    
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।