গেট খুলে ভেতরে এসে খানিকটা থমকাল জবা। ভাবতে পারল না ওপরে বারান্দায় উঠে আসবে কিনা। তুলিকাদিদি তাকে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার দিনদুয়েকের মধ্যেই ছুটি দিয়েছেন। বলেছিলেন, এই লকডাউনের সময়টা যদি এখানেই থাকতে পারতে তাহলে তোমাকে ছুটি দিতে হত না। রোজ তো কাজশেষে বাড়ি যাচ্ছ দিদি। এখন এভাবে রাখাটা ঝুঁকি হয়ে যাচ্ছে। সব কিছু মিটে গেলে তবেই নাকি আবার ডেকে পাঠাবেন। তার বাড়িটা খুব দূরে নয়। চিকুর জন্যে মনখারাপ করছিল, ভাবল একবার দেখা করে যায়। নাহয় বাড়ির বাইরে থেকেই দেখে যাবে। জন্ম থেকেই মেয়েটা তার কোলে পিঠে মানুষ। তুলিকাদিদি, বিমানদা মেয়েকে তার কাছে রেখেই স্কুলে যান। এই সময়টা সে চিকুকে খাওয়ায়, স্নান করায়, ঘুম পাড়ায়। এখন মেয়ে সাড়ে চার। স্বাভাবিক একটা মায়াবন্ধন। সমবয়সি একটা নাতনিও আছে জবার। ছুটির দিনগুলোয় বাড়িতে তাকে দেখলেই চিকুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এতো লম্বা ছুটিও এই প্রথম।
তুলিকাদিদিই তাকে বারান্দায় গ্রিলের ভেতর থেকে দেখতে পেলেন। হেসে বললেন, ভালো আছো গো জবাদি? ভাবছিলাম ডেকে পাঠাবো। এলে ভালোই হল। বলেই ভেতরে চলে গিয়ে অল্পক্ষনেই পলিথিনের প্যাকেটে চাল, আলু, কিছু মসলাপত্তর এনে বললেন, এগুলো নাও, তোমার জন্যে সাজিয়েই রেখেছিলাম। তোমার ছেলেরও তো এখন কাজ নেই। জানি অসুবিধে হচ্ছে খুব।
জবা বুঝতে পারল না তার কী করা উচিত। সে যে এসব কিছু চেয়ে আসে নি সেটাও বলতে পারল না। বলল, চিকু কোথায় দিদি?
তুলিকাদিদি বললেন, ঘুমোচ্ছে। জেগে থাকলে এক্ষুনি তোমার সঙ্গে যেতে চাইত, সে আর এক হাঙ্গাম। জবার মনে পড়ল, বিকেলের এই সময়টা তার সঙ্গে লুডো খেলত চিকু।
গ্রিলের বাইরে দাঁড়িয়েই তুলিকাদিদির হাত থেকে জিনিসগুলো নিল জবা। এই সময় সত্যিই কাজে লাগবে। রেশানের সামান্য চালে সারা মাসে ক’টা দিনই বা চলবে তাদের।
বাড়ি ফিরে তুলিকাদিদির দেওয়া জিনিসপত্তরগুলো দাওয়ায় নামাতেই খুশিতে ডগমগ ছেলের বউ তার হাতে খানিকটা সাবানের গুঁড়ো ঢেলে দিয়ে বলল, নাও হাতখানা ধুয়ে নাও তো। সবাই বলছে রোগটা বড়োলোকেরাই নাকি ছড়িয়েছে।
একটা ঘোরের মধ্যে জবা হাত ধুতে ধুতে নামানো প্যাকেটগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবল, তনিকাদিদি বলেছিলেন, ভাইরাসটা প্লাস্টিকের ওপর তিনদিন বাঁচে।