ওরা এখন পৃথিবী থেকে অনেক দূরে….. ওরা মানে নাসার চারজন বিজ্ঞানী…আগের থেকেই তৈরি করা বিশেষ মহাকাশ যানে করে ঠিক সময়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল ওরা…. নাসা শেষ চেষ্টা করেছিল…. কিন্তু আটকাতে পারেনি…. চার কিলোমিটার লম্বা গ্রহানু…. আছড়ে পড়েছিল উত্তর মেরুতে – তারপর প্রবল জলোচ্ছ্বাস, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, বিশাল ভূমিকম্প- শেষ মুহুর্তে দৌড়ে মহাকাশ যানে উঠতে গিয়ে দেখেছিল সোফিয়া – রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা উঠে গিয়েছে 20 তে। জীবনে প্রথম দেখল সে। নাসার বড় বড় পর্দায় তখন পৃথিবীর বীভৎস দৃশ্য, ঘর বাড়ি পুড়ে যাচ্ছে…কোথাও পাহাড় সমান উঁচু জলের তলায় সাধের সভ্যতা তলিয়ে যাচ্ছে, চারিদিকে মানুষ আর জীব জন্তুর হাহাকার…আর দেখতে পারেনি লিণ্ডাও – চোখ ঢেকে ফেলেছিল – বিহ্বল হয়ে গিয়েছিল জর্জ আর অমিত । নাসার বিশেষ ভাবে তৈরি স্ট্রং রুম, যেটা কিনা পৃথিবী ধ্বংস হলেও অনেকক্ষণ টিকে থাকার কথা( যদিও অবশেষে ধ্বংস পিণ্ডই হবে- তবুও কম্পন, উত্তাপ ইত্যাদি সহনের ক্ষমতা অনেক বেশি ) সেটাও জোরে জোরে দুলে উঠছিল।
নাসার সর্বময় কর্তা রবার্ট তাড়া না দিলে ওরা আবেগপ্রবণ হয়ে ওরা আরো দেরী করত। হয়ত মহাকাশ যানে উঠতেই পারত না। কারন, মহাকাশ যান যেই মাত্র আকাশে উড়ল ওরা চারজন ( সোফিয়া, অমিত, লিণ্ডা আর জর্জ ) দেখল নাসার স্বপ্নের গবেষণাগার , স্পেস সেন্টার সব ধুলায় মিশে যাচ্ছে। লিণ্ডা বেশি আবেগ প্রবণ – তাই হাউ হাউ করে কেঁদে উঠেছিল – আবেগের উর্দ্ধে ওঠার জন্য নাসার এত ট্রেনিং কোনো কাজে আসেনি। অমিত স্পেস শাটলে বসে নীচে দেখছিল পৃথিবীর ধ্বংস লীলা…. যে শক্তি তৈরি করেছিল, সেই শক্তিই ধ্বংস করে দিল পৃথিবী যে শক্তির সঠিক নাগাল এত গবেষণার পরেও পায়নি তথাকথিত বিজ্ঞান – হয়ত যাঁরা তৈরি করেছিল তাঁরাই সাময়িক ভাবে ধ্বংস করে দিল পৃথিবী – হয়ত তাঁদের প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা মানব সভ্যতা তাঁদের স্বপ্ন পূর্ণ করতে পারেনি। হয়ত মানব সভ্যতার বেহিসাবী বাড়াবাড়ি আর অনাচার তাঁদের ভালো লাগেনি। চোখের জল গড়িয়ে পড়ল অমিতের – কয়েকদিন পরেই বোন নতুন জীবনে প্রবেশ করত। বাড়ি যাবে ভেবেছিল…. বেহালা কোলকাতায়। এরকম কত জনের স্বপ্ন, বিয়ে, আশা, জীবন চিরতরে শেষ হয়ে গেল। এরপর হয়ত আবার নতুন করে জীবন শুরু হবে এই গ্রহে…. হয়ত মানুষের মত বা সম্পূর্ণ আলাদা দেখতে – উন্নতমানের জীব শাসন করবে এই গ্রহ । বেদ, কোরান,বাইবেল, গীতা, উপনিষদ চিরতরে হারিয়ে যাবে।
তবু একটা শেষ চেষ্টা নাসা করেছে – এই গ্রহানুকে যে আটকান মুশকিল হবে নাসা আগেই বুঝতে পেরেছিল। বুঝতে পেরেছিল পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই দীর্ঘ প্রচেষ্টায় পৃথিবীর অনুরূপ ছোট্ট একটি গ্রহের মত বস্তু তারা অনেক বছরের চেষ্টায় তৈরি করেছে। নাম দেওয়া হয়েছে “ড্রীম ওয়ার্ল্ড”।ছেড়ে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছর আগে পৃথিবীরই কক্ষপথে। সেটা চাঁদের সঙ্গে ঘুরে যাচ্ছে পৃথিবীর চারপাশে। জল হাওয়া সব পৃথিবীর মত। কিন্তু জায়গা খুব কম। সাধারণ মানুষকে এসব ঘটনা কিছুই জানানো হয়নি প্যানিক তৈরি হবার আশঙ্কায়। স্পেস শাটল ক্রমশঃ এগিয়ে চলেছে সেই ড্রীম ওয়ার্ল্ড এর দিকে। অমিত, লিণ্ডা, সোফিয়া আর জর্জ পরস্পরের দিকে বারবার তাকাচ্ছিল- ওদের এখন অনেক দায়িত্ব – অনেক কাজ। সোফিয়া পেছনে ফিরে সযত্নে রাখা বাক্স গুলোর দিকে বারবার তাকাচ্ছিল – যেখানে রাখা আছে কিছু অমূল্য জিনিস – উন্নত মানের স্পার্ম আর ওভারি( মানুষ আর প্রয়োজনীয় পশুপাখির )। জর্জ বুকে আগলে ধরে বসে আছে একটা বাক্স যেখানে সযত্নে রক্ষিত আছে বিভিন্ন গাছ আর শস্যের বীজ, এমনকি কিছু চারাও। দেখা যাক ড্রীম ওয়ার্ল্ডে রক্ষিত পৃথিবীর মাটিতে ওরা বেড়ে ওঠে কিনা। ওদের শেষ স্বপ্ন সফল হয় কি না!