অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় অনির্বাণ চ্যাটার্জী
আশা
আশীষবাবু এই আবাসনে একাই থাকতেন।স্ত্রী নেই বহুদিন।ছেলে,মেয়ে দুজনেই সপরিবারে আমেরিকায় থাকে।ঠিকার একটি বউ এসে রান্নাবান্না অন্য কাজ করে দিয়ে যায়।
আজ সকালে এই আবাসনের সবাই দেখলো,আশীষবাবুকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে করোনা টেষ্ট করতে।উনি নিজেই খবর দিয়েছিলেন হেল্পলাইনে।
অ্যাম্বুলেন্স চলে যেতে আবাসনের সবার মধ্যে একটা ভয়ের,আতঙ্কের ছায়া নেমে এল।বাসুবাবু বললেন,কদিন ধরেই বিশ্রী কাশছিলেন।বয়সও তো হলো আশির বেশী।মিসেস মিত্র হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,বাবার মতো ছিলেন,আর কখনও কি দেখতে পাবো!
হেলথ ডিপার্টমেন্ট থেকে ফ্ল্যাট সিল করে দেওয়া হয়েছে। অজানা এক আশঙ্কার কালো ছায়া ‘সোনালি’ আবাসনের ওপর পড়েছে।মানুষগুলোর প্রানশক্তি যেন এক নিঃশ্বাসে কেউ কেড়ে নিয়েছে।
পাশের ফ্ল্যাটের মান্না বাবুর কাছে আশীষবাবুর ছেলে মণীশের নম্বর ছিলো,বারবার কল করেও তাকে পাওয়া যায় না।
ভবেশবাবু বললেন
আমেরিকায় সাংঘাতিক ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ।
রাত্রে শুয়ে মান্না বাবুর বুকটা চাপ,চাপ লাগছে।জিভটা শুকনো।একটা ব্যথা শুরু হয়ে ক্রমশঃ ছড়িয়ে যাচ্ছে পিঠের দিকে।দরদর করে ঘাম।
লোকটা গেছে ছদিন হয়ে গেলো।কেমন আছে,কোন হাসপাতালে কে জানে! সকালে ডাক্তারবাবু ই,সি,জি করে বললেন,দশ দিন রেস্ট।একটা মাইল্ড স্ট্রোক হতেও পারে এখন বোঝা যাবে না।
কাজের মেয়েটি মাঝে মাঝে খবর নিয়ে যায় লক ডাউনের মাঝেই।সে
পাড়ার কমিশনারকে ধরে “বুড়াবাবুর খবর নেওয়ার চেষ্টা করে।
দশ দিনের মাথায় ছেলে,মেয়ে সপরিবারে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে ভারতে এসেছে।তারা চোদ্দদিন কোথায় কোয়ারেনটাইনৈ আছে কেউ
জানে না।আশীষবাবু মারা গেলে তাঁর
বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকার তো চাই।
সোনালি আবাসনও অপেক্ষায় আছে।আজ চোদ্দ দিনের শেষদিন।আশীষবাবু যেনো ফিরে আসেন, আসবেন তো…..