• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় কল্যাণ কুণ্ডু

প্রস্থান

ঢোল পিটিয়ে ঢ্যাঁড়া দিয়ে গেল পঞ্চায়েতের লোক। ভয়ংকর জীবাণুর আক্রমণ হয়েছে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে নিদান — ঘরের বাইরে বেরোনো চলবে না।মেলামেশা, আড্ডা, আত্মীয় কুটুমের যাতায়াত বন্ধ। পুকুরের জলে সমবেত স্নান, জমায়েত সব বন্ধ। অন্যথায় জেল জরিমানা করা হবে।
সব শুনে বিমূঢ় হয়ে যায় শম্ভু কাহার। কাম কাজের কি হবে? তার মতো দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ কোথায় খাবার পাবে? গাড়ি ঘোড়া বন্ধ। দোকান পাট বন্ধ। আপিস, কাছারি বন্ধ। কি ঝকমারিরে বাবা! পেটের চিন্তা হাওয়ায় ভাসতে থাকা চিলের মতোই বিপত্নীক শম্ভুর মনের মধ্যে চক্কর খেতে থাকে।
তাছাড়া, সামনে শিবের গাজন। বাপ ঠাকুর্দার আমলের পেশা। শম্ভু চিন্তিত হয়ে পড়ে। এবার আলকাপের সং সাজতে পারবে তো? গাজনের এই ক’টা দিনে চাল, আলু আর সিধের টাকায় মাস দুয়েকের খোরাক জোগাড় হয়ে যায়। ঘরের থেকে না বের হলে, পাঁচ গাঁ না ঘুরলে গাজনের আদায় হবে কি করে?
দিন দশেক গৃহবন্দী থাকার পর উশখুশ করতে থাকে শম্ভু। প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায় এসে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন। ঘরে চাল নেই। রেশন তোলার টাকা নেই। কানাঘুষো শুনছে শহরের বড়লোকেরা জায়গায় জায়গায় চাল, চিড়ে, মুড়ি বিলি করছে। ছবি তুলছে। গ্রামে কোথায় কি? একবার কোনক্রমে শহরে যেতে পারলে হয়। কিভাবে যাবে, কখন যাবে, কপালের ভাঁজ দীর্ঘ হয় শম্ভুর ।
চৈত্রমাস শেষ হতে চললো। মনের উশখুশানি দ্বিগুণ হতে থাকে। গতবছর এতদিনে প্রায় দু হাঁড়ি চাল, আলু আদায় হয়ে গিয়েছিল। সাঙাৎ রতন সাজতো মা কালী আর শম্ভু মহাদেব।
মেক আপের জটাজুটি, নকল বাঘছাল, রুদ্রাক্ষ, প্লাস্টিকের সাপ, টিনের ত্রিশূল, ডম্বরু, পায়ের ঘুঙুর, গায়ে মাখার সাদা পাউডার সব জোগাড় করে রাখা আছে মরচে পড়া তোরঙ্গে। সারাদিন অলস যাপনে, একবার বের করে। একবার ঢুকিয়ে রাখে। মন বড় চঞ্চল হয়ে পড়ে শম্ভুর।
ম্লান চাঁদের আলোয় গ্রামের মাঠ, ঘাট, পুকুর জুড়ে ভুতুড়ে অন্ধকার। মোরগ হয়তো এখনো ডেকে ওঠে নি। ভোর হতে আনুমানিক ঘন্টা খানেক দেরী। এই ভুষো কালি আঁধারে উষাখুড়ি গোয়াল পরিস্কার করতে ওঠে। এখনো সবুজ হয়ে জ্বলছে গবাদিপশুর চোখ। হঠাৎ শুনতে পায় দূরে মিলিয়ে যাওয়া ঘুঙুরের আওয়াজ। উষাখুড়ি কুলিরাস্তায় এসে দাঁড়ায়।
আবছা আলো-আঁধারে দেখে, শিবমেলার নাটমন্দির থেকে পূবের বাস সড়কের দিকে হেঁটে চলে যাচ্ছে অপসৃয়মান একটা ছায়া। একহাতে ত্রিশূল, অন্য হাতে ডম্বরু। পিঠে লোটাচ্ছে জটাজাল, গলায় রুদ্রাক্ষ মালা।
উষাখুড়ি ডুকরে কেঁদে ওঠে। গ্রামে বোধহয় ঘোর অমঙ্গল নেমে আসছে। এই ক’ দিন শিবমেলার তালাও খোলেনি। সামান্য গঙ্গা জল আর বেলপাতা দেওয়া হয়নি শিবশম্ভুকে।
অভূ্ক্ত দেবতা গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।