• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় প্রদীপ্ত দে

ফেরা

২২শে মার্চ, ২০২০

দিল্লি এয়ারপোর্টে চেক আউট করে বেরোতে গিয়েই সামনে লম্বা লাইন দেখলো তুহিনা। করোনা সতর্কতায় একে একে থার্মাল টেস্ট করে যেতে দেওয়া হচ্ছে । ঋতব্রতর ইনকামিং কলটা ধরেই তুহিনা বলল
– হ্যালো রন্টি, ড্রাইভারের নাম্বারটা হোয়াটস্অ্যাপ করে দাও ।
– হোয়াটস্অ্যাপে ব্লক করেছো প্রায় একবছর হয়ে গেছে ম্যাডাম।
চটজলদি উত্তরটা পেয়ে একটু থমকে যায় তুহিনা। তারপর গলায় বিরক্তির সাথে ব্যস্ততা মিশিয়ে বলে
– ঠিক আছে । নাম্বারটা এস.এম.এস করে দাও ।
– যে নাম্বার থেকে কল করছি সেটাই ড্রাইভারের নাম্বার ।
– মানে ?!!
– এই দুর্দিনে ড্রাইভার পাওয়া যায় ?
– হোয়াট দা হেল !! এতো ভণিতার কী আছে ? সোজাসুজি বলাটা তোমার এজন্মে আসবে না । অদ্ভুত !!
বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটেই দিল তুহিনা। এখন আর কোনোকিছুই সহ্য হয়না ছেলেটার । অথচ কোনো এক রাতে এই ছেলেটার হাত ধরেই এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল । লাইনের প্রথম দিকে চলে আসায় চিন্তার মেঘ সরিয়ে বর্তমানে মনোযোগ দিল। টেস্টে ছাড় পেয়ে বাইরে বেরিয়ে খুঁজতে লাগল গাড়ি। দশটা মিনিট পরে ফোন এল ঋতব্রতর
– তোমার ঠিক অপোজিটে দেখ । ব্লু ডিজায়ার ।
রাস্তার অপরদিকে তাকিয়েই ফোনটা কেটে দিল তুহিনা। ওপারে গিয়ে গাড়ির পেছনের দরজা খুলে ব্যাগটা নিয়ে ঢুকে পড়ল । ঋতব্রত ড্রাইভারের সিট থেকে পেছনে ঘুরে তুহিনার হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে বলল
– হাতটা অন্তত স্যানিটাইজ করে নাও । এখন এয়ারপোর্টেই বেশি চান্স ইনফেকশনের।
ঠান্ডা স্যানিটাইজারে দুটো হাত ঘসতে ঘসতে বললো তুহিনা
– আমি তখন থেকে আমাদের পুরনো স্যান্ট্রোটাই খুঁজে যাচ্ছি। একবারও বলবে না যে নতুন গাড়ি কিনেছো ?
– বাঃ রে , নতুন গাড়ি কিনলে তোমাকে বলে কিনতে হবে নাকি ?
– ওফ্… ইউ আর সো আনবেয়ারেবল । আমি বলেছি আমাকে বলে কিনতে হবে ? আমি বলছি, তুমি বলে দিলে আমাকে দশ মিনিট ফালতু দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না।
– বলার জন্যেই ফোনটা করেছিলাম। রেগে ফোনটা কেটে দিলে আমি কী করবো !
– বাই দ্য ওয়ে, কথা যখন তুললেই , পুরোনো স্যান্ট্রোটার ইনিশিয়াল ডাউন পেমেন্টটা কিন্তু আমার ছিল।
– হাসালে! দেওয়াথোয়ার কথা তুলে তোমাকে লজ্জা দেওয়ার মতো মানসিকতা আমার নেই।
এভাবেই কথা চললো কম, তর্ক বেশি।
বাড়িতে ঢুকেই সোফায় ব্যাগটা রেখে বললো তুহিনা
– তাড়াতাড়ি পেপারসগুলো দাও স‌ই করেই চলে যাবো।
– কোথায় ?
– বাবুয়ার ওখানে থাকবো। পরশুর ট্রেনের টিকিট কাটা আছে ।
– আর লকারের গয়নাগুলোর কী হবে ? নয়ডা থেকে এখানে আসতেই তো প্রচুর সময় লেগে যাবে। আর আমি সব কাজ ছেড়ে এখন ড্রাইভারিও করতে পারবো না ।
– তোমাকে আমি বলেছি রন্টি আমাকে পিক আপ করতে ? আজকেও জানলে আসতাম না। এইরকম এমার্জেন্সির সময়ে ভাবছিলাম সব ক্যান্সেল‌ই করে দেবো।
– তো করতে, করলে না কেন ?
– করতে পারলাম না তোমার তাড়াহুড়োর জন্য। একটা ডিভোর্স পাওয়ার জন্য যেরকম তাড়া লাগাচ্ছো যেন মনে হচ্ছে গার্লফ্রেন্ডের প্রেগনেন্সি এসে গেছে । হয়তো তিনমাস হয়েই গেছে। তাড়াতাড়ি বিয়ে নাহলে জারজ সন্তান হয়ে যাবে যে !
– শুরু হয়ে গেল তো ফালতু কথা! আমাকে এক্ষুনি অফিসে যেতে হবে। মিডিয়ায় এখন যা কাজের চাপ তাতে তোমার এসব কথা শোনার সময় নেই। কালকে এখানে থেকেই ব্যাঙ্কের কাজটা করে তারপর ওখানে চলে যেও। সমস্ত পেপার এই টেবিলে চাপা দেওয়া আছে। পেনসিলমার্ক করে রেখেছি। দেখে দেখে সাইন করে রেখো। বেরিয়ে গেলাম।

৩১শে মার্চ, ২০২০

– হ্যালো,রন্টি , তুমি কখন ফিরছ ?
– গাড়িতে অলরেডি বসে গেছি । কেন ?
– তোমার কী আছে ? তুমি তো মাঝেমধ্যেই অফিসে যাচ্ছ। দিব্বি খাচ্ছ-দাচ্ছ, ঘুরে বেড়াচ্ছ। আমি তো আসার পর থেকে লকডাউন। পুরো ফেঁসে গেলাম। আমি এখন কী করি ?
– তুহিনা, মিডিয়ার এখন আরাম করার সময় নেই । বাড়িতেও তোমার হাতে হাতে যতটা সম্ভব করছি । ফালতু কথা ছেড়ে কাজের কথা বলো।
– যাক্ গে, রোজ রোজ ডিম আর খেতে পারছি না । ফেরার সময় দুকিলো চিকেন, এক কিলো মটন, আর কিছু গ্রসারির লিস্ট হোয়াটস্অ্যাপে পাঠিয়েছি । সব নিয়ে বাড়িতে ঢুকবে। আজকে ভাবছি বিরিয়ানি বানাবো।
– হুম, পথে আসো। দেখেছো ফ্রিজে কিছু নেইতাই হোয়াটস্অ্যাপ আনব্লক করে বাজারের লিস্ট ধরাচ্ছো। সেই বাজারের লিস্ট , যার জন্য এতো অশান্তি।
– ফালতু কথা ছেড়ে যা বলছি করো। শুনছি কারফিউ জারি হবে।
– হুম, সেটা আমিও জানি। তাই বলে এতো লিস্ট ! এতো পুরো তিনমাসের বাজার !!
– অনেক কম করে লিখেছি । জুন অবধি লকডাউন চলতে পারে।
– তাহলে কী এখন আর ফিরবে না কলকাতা ?
– কীকরে ফিরব ? আর আমার তো আগামী একটা মাস ওয়ার্ক ফ্রম হোম‌ই চলবে। না ফিরলেও ক্ষতি নেই।
– আর ডিভোর্স ?
– এখন সব লকডাউন । তুমি তাড়াতাড়ি বাজারটা নিয়ে ঢো‌কো।
– বিরিয়ানিতে আলু দিও ।
– হ্যা,জানি। আর লেবু চা খেলে কটা লেবু নিও। তুমি এলে জল চাপাবো।
– তাহলে ,এখন ফেরার পথ বন্ধ।
হাসি চেপে রেখে উত্তর দেয় তুহিনা
– হ্যা বন্ধ। সম্পূর্ণ লকডাউন । ফেরা হলো না । তুমি তাড়াতাড়ি ফেরো।
একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে ঋতব্রত
– মাঝপথেই আছি। আসছি ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।