মধ্যরাত। অমর্ত্য বাবু মেয়ের ঘরে আলো জ্বালিয়ে বসেছিলেন। কোলে রিমির ছবি। মন উথাল পাথাল। আজ দু বছর হল স্ত্রী মারা গেছেন ক্যানসারে। বেশ কিছুখন ধরে নিচে রাস্তায় লোকজনের গলা শুনতে পাচ্ছেন। আসলে আজ ৪ দিন হল সারা দেশ করোনায় তোলপাড়। লকডাউন চালু হয়ে যাবে যে কোনদিন। কাল লাস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট মধ্যরাতে নেতাজী বিমান বন্দরের মাটি ছুঁয়েছে । ভোর রাতে কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলে দেখেন ফাঁকা, কেউ আসেনি। তাহলে স্বপ্ন দেখেছিলেন। মেয়েটার আসার কথা, সে রকমই ঠিক ছিল। সে দেশে করোনার মড়কে উজাড় হয়ে যাচ্ছে মানুষজন। তাঁর নিজের শরীর ও ভাল যাচ্ছেনা মাস খানেক ধরে। থ্রি বেড রুম ফ্ল্যাট খাঁ খাঁ করছে। মেয়ে বিদেশে রিসার্চের ডাক পেয়ে চলে গেল। লাস্ট তার মায়ের শেষকৃত্যে এসেছিল। বিছানায় বসে সারাজীবনের জার্নির কথা ভাবছিলেন। সরকারি চাকরি থেকে রিটায়ার করে এই ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। মেয়ে বরাবরই পড়াশুনায় ভাল। স্কলারশিপ পেয়ে বাইরে পড়তে চলে গেল। বেলায় কাজের মেয়ে এসে চা জলখাবার, দুপুরের খাবার রান্না করে রেখে গেছে। খেতে ইচ্ছে করছিল না। মনটা উতলা হয়ে ছিল। শালি দুপুরে ফোন করে বকাঝকা করায় দু মুঠো খেয়েছিলেন । ভাবছিলেন মেয়েটা কি টিকিট পেল না? টিভিতে দেখছিলেন বিদেশ থেকে যারাই আসছে তাদের সরকার কোয়ারাইন্টাইনে পাঠাচ্ছে। তা হোক, তবু তো ১৩-১৪ দিন পরে বাড়ি আসতে পারবে। এখন কত রাত হবে?১২ টা বোধ হয়। এবার সত্যিই কলিং বেল বাজল। দরজা খুলে দেখেন পুলিশ । লোকাল থানার। তারা জানতে চাইল তাঁর মেয়ে ইতালি থেকে ফিরেছে কি না? পাড়ার লোকজন সন্দেহ করছে, কারন তাঁর মেয়ের ঘরে আলো জ্বলছে। তিনি কঠিন থমথমে মুখে জানালেন, না– তাঁর মেয়ে ফেরেনি। পুলিশ চলে গেল। নিচের প্রতিবেশিরাও আস্তে আস্তে চলে গেল।
এবার তিনি মেয়ের বিছানায় উপুড় হয়ে ছবিটা বুকে নিয়ে ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগলেন। রাত ১১ টায় ফোন এসেছিল মোবাইলে । ইতালি থেকে পুলিশ প্রশাসনের। তাঁর মেয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে হসপিটালে ভর্তি। বাঁচতেও পারে আবার না ও পারে। অবস্থা বিশেষ সুবিধার না। ফোনে মেয়ের গলাটা শুনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ডাক্তার জানিয়েছিলেন সেন্স নেই। এক অসহায় বাবার গুমরানো কান্না চার দেওয়ালে অনুরণন হয়।