মহামানব কি জিনিস!
“বুঝি গো রাত পোহালো!
বুঝি ওই রবির আলো!
আভাসে দেখা দিলো—-
গগন পারে।”
বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতিতে ওতোপ্রোতো ভাবে মিশে আছে এক মহামানব রবীন্দ্রনাথ। যিনি সত্যি মহামানব এর সংজ্ঞা। যার নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে হাজারো এক্সপ্রেশন কিংবা ইমপ্রেশন। এই নামের মধ্যেই একটা গোটা জীবনের প্রতিটা পর্যায় থেকে প্রতিটা অধ্যায় খুঁজে পাওয়া যায়। জন্ম থেকে মৃত্যু প্রত্যেকটা ধাপ উপভোগ করার নাম হলো রবীন্দ্রনাথ।
স্মৃতির পাতা উল্টালে দেখা যাবে ‘আলো আমার আলো’ দিয়ে আমার প্রথম ‘রবি’-খড়ি। সেই প্রথম তাঁকে জানার চেষ্টা বোঝার চেষ্টা উপভোগ করার চেষ্টা অথবা ভালোবাসা ,যাই বলা হোক না কেন! এর পর প্রতি টা পর্যায়ে তাঁকে ধরার চেষ্টা। কখনো বা ‘তুমি রবে নীরবে’ তো কখনো ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে’। আবার যদিবা কখনো লেগেছিল বসন্তের হওয়া মনে জেগেছিল দুকলি কবিতা–
‘ঘুমাবি যখন স্বপন দেখিবি ,কেবল দেখিবি মোরে—–
এই অনিমেষ তৃষাতুর আঁখি চাহিয়া দেখিছে তোরে।’
শিল্পের বুকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সত্যি এক আলোর মতো এসেছিলেন। যার প্রস্ফুটন বা ব্যাপ্তি কখনোই শেষ হওয়ার নয়। নাচ ,গান ,কবিতা-আবৃত্তি ,নাটক কি নেই তাঁর ঝুলিতে! প্রত্যেকটির মধ্যেই যেন এক মোহের অভূত ছোঁয়া। রবি-র গান যেমন সুখের অবলম্বন ঠিক তেমনি অসময় এর ব্যাথার বাঁশি। তাঁর স্মৃতিচারণা মানেই মনের উথাল পাথালে এক অদ্ভুত ভালোলাগার ছোঁয়া। মনে মনে তখন—-
খড় বায়ুর সাথে ভেসে যাই মেঘেরই বুকে ,
ফিরবো মোরা মনের ঘাটে সন্ধ্যে নামার আগে।
কলেজে জীবনের ‘সখী ভাবনা কাহারে কয়’ থেকে শেষ জীবনের ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’ সবেতেই যেন ‘রবি’ ছোঁয়া বাঙালির আবশ্যকতা। আবার যখন জীবনের ওঠা-পড়ায় ভেঙেছে মন তখন ‘রবির’ সুরে বেজে উঠেছে—-
“বুঝেছি আমার নিশার স্বপন হয়েছে ভোর।
মালা ছিলো তার ফুলগুলি গেছে ,রয়েছে ডোর।
নেই আর সেই চুপি চুপি চাওয়া ,
ধীরে কাছে এসে ফিরে ফিরে যাওয়া—
চেয়ে আছে আঁখি ,নাই ও আঁখিতে প্রেমের ঘোর।
বাহুলতা শুধু বন্ধনপাশ বাহুতে মোর।”
পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা রবির যেমন কোনো অন্ত নেই সেরমই শিল্পের সৃষ্টিকর্তা রবির কোনো দিন অন্ত হবে না। যতদিন এগোবে রবি ততই আরো নতুন রূপে প্রতিষ্ঠিত হবে। তাঁর প্রত্যেকটি জন্মতিথিতে শিল্পের আলোক ঝর্ণায় ভেসে যাবে সকল মানুষ এর মন। তাই—
এ রবির উদয় আছে অস্ত নাই ,
এ রবি মানুষ হয়েও ঠাকুর তাই।