• Uncategorized
  • 0

“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় গৌতম বাড়ই

গুরুদেব

এক একটা গাঢ় কালো দুশ্চিন্তাময় দিনরাত গড়িয়ে যাচ্ছে যেন।আমার ঘর আরও আঁধার করে রেখেছি আজ।আলোর এক টুকরো প্রত্যাশায়।এখন গভীর রাত্রি।এই রাত আঁধারে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমি সদর দরজার বাইরে বারান্দায় এসে বসি।এখন কি হয়েছে প্রতিদিন উনি চুপটি করে আমার বারান্দার বাইরে আরাম কেদারায় বসে থাকেন।গতকাল বলেছি গুরুদেব ভেতরের ঢাকায় এসে বসুন।উনি জ্বলজ্বলে সেই দীপ্তিময় চোখে গভীর হাসলেন।স্পষ্ট দেখলাম।জাম জামরুল কাঁঠালের আবছা অন্ধকারের ফাঁক দিয়ে অষ্টমী বা নবমীর চাঁদ।ঘোলাটে একখন্ড মেঘের পাশে সেও বড় রহস্যময়!
প্রকৃতির রহস্যময়তায় আমি খোয়াইয়ের হাটে পৌঁছে যাই।ক’দিন আগে থেকেই আমার ঘরের ভেতরে শিয়রে দাঁড়িয়ে ছিলেন গুরুদেব।আমি চমকে উঠি।গুরুদেব বললেন– জীবনের বেঁচে থাকাটা তো কর্ম চঞ্চলতায় উপভোগ করলে না বা উপভোগ করাও যায়না।তবে মৃত্যুকে কেন এত ভয়!মৃত্যুকে উপলব্ধি করো।ঐ সত্য।ঐ শাশ্বত।দুয়ার খুলে বাইরে এসো। আমি তোমায় খোয়াই নিয়ে যাবো।সোনাঝুড়ি  বলো তো তোমরা। সাঁওতাল পাড়া।অনন্ত আকাশের নিচে নিশীথের রহস্য অনুভব করতে হবে তো!
আমি চেঁচিয়ে বলতে গিয়েছিলাম গুরুদেব!পারলাম না।
গুরুদেবের সাথে দূরত্ব বজায় রেখেই কথা হয়।বেশ কিছুদিন হলো।আমি বাইরে এলেই উনি কথার তোড়ে ভেসে যান।বলছেন–দিনের কোলাহল তোমার ভাবনা চিন্তা অনেকটাই কেড়ে নেবে,রাতের নির্জনতায় তুমি উপলব্ধি করবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।
গুরুদেব সে তো আপনার আকাশ ভরা সূর্য তারা শুনলে আমি যেকোন মুহূর্তে কোন গভীরে ডুবে যাই।
ডুবে যাও মনে মনে।আর উপলব্ধি করবে এর সত্যতা রাতের অনন্ত আকাশের তলে।
যেন কাঁঠাল গাছে সড়সড়।একটা সরীসৃপ সেও শিকারে বেড়িয়েছে। পেঁচা ডানা ঝাপটাচ্ছিলো।
আমি খোয়াইয়ের হাটে।সত্যি তো ঐ একটু দূরে মাদল বাজিয়ে আদিবাসী নৃত্য। গুরুদেব কোথায়?গুরুদেব তো নেই।কেউ একজন বললে দূর থেকে—-তুমি একাই আনন্দ উদযাপন করো।আমি শান্তিনিকেতনের মাঠ থেকে ঘুরে আসি।ভয় পেয়োনা এখানে কোন অতিমারী নেই।এখানে আমার খোয়াই জীবন।শাল পলাশ শিমূলের ইউক্যালিপটাসের।কোপাইয়ের ঠান্ডা বাতাস পাবে।প্রাণে সে বাতাস মাখিয়ে রেখো সারাজীবন,আমার মতন।
কে বললে?দূর থেকে এই গলার স্বর তো গুরুদেবের মনে হলো না।আবার গুরুদেবও পাশে নেই।তা নিয়ে ভাবছি না।দ্রিম দ্রিম মাদল ধামসায় হারিয়ে গেলাম সোনাঝুড়িতে।এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে মাটির ঘ্রাণ খোয়াইয়ের পাদদেশ থেকে।আমি জুতো খুলে পায়ে কাদা মাটি মাখলাম।
কে যেন বলে ওঠে সজোরে ঐ রতনকুঠির ওধার থেকে।গম্ভীর স্বরে খোলা আকাশ থেকে নেমে আসে সে শব্দ—
দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে
এসেছে আমার দ্বারে;
একমাত্র অস্ত্র তার দেখেছিনু
কষ্টের বিকৃত ভান,ত্রাসের বিকট ভঙ্গি যত–
যত বার ভয়ের মুখোশ তার করেছি বিশ্বাস
ততবার হয়েছে অনর্থ পরাজয়।
দুঃখের পরিহাসে ভরা ।
ভয়ের বিচিত্র চলচ্ছবি–
মৃত্যুর নিপুণ শিল্প বিকীর্ণ আঁধারে।(শেষ লেখা)
এই মৃত্যু পুরী গোটা বিশ্বময়।কে তুমি কে দেও আমায় অভয়?
গুরুদেব হাসছেন দূর থেকে।বলছেন— উপলব্ধি হলো জীবনের সার সত্য।তোরা তো এই প্রকৃতির ওপর খবরদারি চালাচ্ছিলি!আমি নগর প্রান্তর ছেড়ে কেন এলাম প্রকৃতির কোলে নিতে ঠাঁই?উত্তর পেলি কিছু?বিশ্বব্রহ্মান্ড আর বিশ্বভ্রাতৃত্ব খুঁজে গিয়েছি তাই।আজ মানুষ তার উত্তর পাচ্ছে।একটা অণুজীব তোদের করেছে গৃহবন্দী পুরো বিশ্ব।লাখো লাখো মানুষ মারছে।অথচ তোরা মানুষ, ছুরি ছোরা বোমায় বারুদে লাখো লাখো মানুষ মারিস।ভ্রাতৃহত্যা করিস।
ভোর হয়ে আসছে যেন।আমি যেন সম্বিত ফিরে পাচ্ছি।আমি বলে উঠি—–
তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ
তাই তব জীবনের রথ
পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমার।
(২৫শে বৈশাখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলী)
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।