• Uncategorized
  • 0

“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় চার অক্ষর

পচনশীলতা ও রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ ড্রয়িং খাতায়। আর কিছু না হোক তাঁকে ঝট করে এঁকে ফেলা জল্ভাত ! হোক না কিছুটা সান্টা দাদু তাতেও দিব্যি চলে যায়।তবে জানি না কেন, আমার বেশীর ভাগ ছবিতেই ওনার মুখটা কেমন রাগী রাগী দেখাতো। ড্রয়িং টিচারকে আমার অসহায়তা জানাতে উনি নিদান দিয়েছিলেন সাইড ফেস আঁকতে আর ফিনিশিং টাচ স্বরূপ একটা চশমার আভাস … ব্যাস! আমার গোটা স্কুলবেলা স্যার দিদিমণিদের ঘরে গান্ধী দাদুর স্মিত মুখের পাশেই উনি শান্ত চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে থাকতেন। অবশ্য প্রাইমারি থেকে সেকেন্ডারিতে যখন উঠলাম, উনি তখন চলে গেলেন নেতাজী আর স্বামীজি-র মাঝখানে। মনে আছে আমার ইলেভেন চলাকালীন বাংলার মাষ্টার মশাই অক্ষয় কুমার বড়ালের লেখার ট্রেন্ড বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন ” শোন, রবীন্দ্রনাথ হচ্ছেন সূর্যের মতন। সূর্য জানিস তো, যখন ওঠে, সব ঢাকা পড়ে যায় আর নামলে চাঁদ ফাদ ওঠে… তারা ফারা দেখা যায়।“ খাঁটি সত্য বটেক। এখন বুঝি, বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস কে আমরা যত গুলো গুন ভাগ করি-ই না কেন, সবচেয়ে মেজর ব্রেক থ্রু রবীন্দ্রনাথ যা দিয়েছেন সেটা কভার করা আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সেটা বোধহয় সবাই মোটামুটি মেনে নিয়েছে। কিন্তু এই বাস্তব বেশীরভাগের কাছেই বড্ড বোরিং। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুপার পাওয়ার এতটাই সর্বজন বিদিত যে তাঁকে নিয়ে মস্করার জনপ্রিয়তা মার্কেটে তাই হয়ত বেশি গোগ্রাস। তার পরকীয়া সংক্রান্ত থার্ড গ্রেডেড নভেলা তাই হয়ত বেস্ট সেলার। তাঁর লেখার কোটেশান ব্লাউজের খোলা পিঠে লিখে তাই হয়ত বাহবা কুড়োয়, বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। একটু তলিয়ে দেখলে, আমরা হয়ত বুঝতে পারবো (হয়ত কথা টা রিপিটেডলি ব্যবহার করছি এই দৃঢ় বিশ্বাস থেকে যে আম পাব্লিকের রুচিবোধ এবং বুদ্ধি বাহার নিয়ে আমার উচ্চ মানের ধারণা কোনো কালেই ছিলনা, নেইও।) রবি বাবুর এই ক্রম বর্ধমান হেনস্থার জন্য অনুগামীরাই দায়ী। বাংলা সিনেমায় বিধবা বউয়ের গ্লানি বোঝাতে হবে? … “যে রাতে মোর দুয়ার” জুড়ে দাও। পাত্র পক্ষ পাত্রীকে দেখতে এসে তাকে গ্র্যামি দেবে কিনা স্থির করতে পারছে না? আগুনের পরশমণি ছোঁয়াতে বলো। ফেসবুকের প্রোফাইল যথেষ্ট গর্জাস নয়? ঠাকুর কে তলব করো। নিজের কচি ছেলের ইনস্ট্যান্ট প্রতিভা ফোটাতে হবে? বীরপুরুষ আবৃত্তি করাও। পচ্চিম বোংগো গরমেন্ট কালচারাল গঙ্গা জল ছেটাবে ঠিক করেছে? মে মাসের গনগনে দুপুরে ট্রাফিকের সিগনালে সিগনালে আজ জ্যোৎস্না রাতে সব্বাই কে বনে পাঠানোর আমন্ত্রণ জানাও। মনের বীভৎস আনন্দে, গুটখা চেবোতে চেবোতে এইভাবে লোকটাকে আমরা যুগ যুগান্তর ধরে পচিয়ে চলেছি। আমরা ভুলেই বসতে বসেছি রাশভারী কবিতা, ক্লিশে ফটো ফ্রেম, হে নূতন, রজনী ফুল, ধুপ কাঠির ধোঁয়া তে লোকটার কত মজার লেখা, কত অতুলনীয় দর্শন, কত অসামান্য সহজ লেখার স্টাইল অব্লিভিয়ন হয়ে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ সবার জন্য নয়। উনি প্রাচীন কগ্ন্যাক। ওনাকে রয়ে সয়ে আত্মস্থ করতে হবে। যদি তা না করা যায়, তাহলে যারা অবক্ষয় অবক্ষয় করে চুল (মাথার) ছিঁড়ে ফেলছেন, তারা শোক নয়, মোমবাতি জ্বেলে প্ল্যানচেট করুন। যদি উনি তাতেও আপনাদের কাছে না আসেন, বুঝবেন রবীন্দ্রনাথ এই ব্রহ্মাণ্ডে থাকবার মিনিমাম উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। আমার ব্যক্তিগত অভিমত উনি এই পচা গ্রহে থাকা কালীন নিজের ভবিষ্যৎ আঁচ করেই লিখেছিলেন “তবু জানি মনে তারার ভাষাতে ঠিকানা রয়েছে লিখা” । আমাদের এখনো ঢের বাকি আছে সেই ভাষা শিখতে। ওনার ছবি সামনে রেখে শ্রদ্ধা ভালবাসার বিটকেল ককটেল গেলা বন্ধ করুন। ঠাকুরের দোহাই !

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।