• Uncategorized
  • 0

“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় সুদেষ্ণা রায়

আলের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেম একা

রাত সাড়ে তিনটে মতন হবে, ঠিক সাড়ে বারোটা থেকে একটা কোকিল ডাকতে শুরু করে। এখনো ডাকছে। পাশ ফিরে শুলাম। ডান চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে চলেছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম, ডান চোখ দিয়ে জল গড়ালে নাকি, সেটা আনন্দাশ্রু। উল্টোটা-ই মনে হয় বরং, অথবা, মধ্যবর্তী কোনো অনুভূতি, বুঝতে না পারা, অথচ বাস্তবের সাথে তীব্রভাবে মিশে যাওয়া কোনো অনুভূতি।কোনো কোনো ঘড়ির কাঁটা ঘণ্টায় পৌঁছলে, শব্দ হয়, এটা-ই স্বাভাবিক নিয়ম, আমার দেওয়াল ঘড়ি আলো চায়, নইলে মুখ খোলে না। কোনো এক দিক থেকে ‘সূর্যমুখী’ বলা চলে, ঠিক আমার অনুভূতির মতো। ‘রবি’র আলো ছাড়া বিকশিত হয় না কেউ। স্বার্থপরের মতো মুখ গুঁজে পড়ে থাকে ভিতর ঘরে। পায়চারি করার লম্বা বারান্দাটা-ও ভীষণ একাকিত্বে ভোগে যতক্ষণ না মেঘলা আকাশ আর অন্ধকার “দু’জনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি” হয়, যতক্ষণ না একাত্ম হয়ে বুঝতে পারে, “আঁধারে মিশে গেছে আর সব”।
এখন প্রায় পৌনে চারটে। আমার দেওয়াল ঘড়ি একটু পরে-ই সরব হবে। না! জানলা খুলবো না। আলো আসবে না বাইরে থেকে। আমার মুঠোফোন থেকে ঠিকরে বেরোনো হাল্কা আলোয় হয়তো বা অগভীর আর্তনাদ ক’রবে। ‘আর্তনাদ’ শুধু যে আঘাতের-ই হয়, এমনটা নয়, আমার ডান চোখ থেকে জল গড়িয়ে যাওয়ার সেই মিশ্র অনুভূতির মতো-ও হয় কখনো। দেওয়াল ঘড়ির শব্দের সঙ্গে আমার মুঠোফোনের একটা সম্পর্ক আছে, তার সাথে কোকিলের ডাকের, আর তার সাথে, ডান চোখের জল, আর সব কিছুর সাথে আরো একজনের গভীরতম সম্পর্ক আছে, সেটা শেষে বলবো না হয়।
আকাশটা কান্নাকাটি করার আগে এবং পরে একটি মেয়ে আলপথ দিয়ে ছুটে গিয়ে ঠিক মাঠের মাঝখানটায় একা দাঁড়িয়ে থাকে। গায়ের রঙ চাপা। চোখ দু’টো বেশ। খোলা চুলে ঢেকে যায় অজান্তে উঁকি দেওয়া শহুরে অন্তর্বাস।
আমার দেওয়াল ঘড়িতে চারটে বাজলো। মুঠোফোনের আলোক বিচ্ছুরণে সূর্যমুখীর মতো জেগে উঠলো ঘড়ির বুকের শব্দরাশি। কোকিলটা চুপ ক’রেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে-ই। ডান চোখের জল গড়িয়ে বালিশের অর্ধেক দখল ক’রে নিয়েছে। শ্যামলা মেয়েটা হেডফোন কানে তখন ‘আলের ধারে’ দাঁড়িয়ে থাকে ‘একা’, ‘মাঠের মাঝে’ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি, আজীবন মুখোমুখি….
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।