“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় সোমা চট্টোপাধ্যায় রূপম
by
·
Published
· Updated
হঠাৎ প্রেম
“রতি সুখ সারে…” “আরে এই তো, ভানুসিংহের পদাবলী…..”
বিরক্তিরা আরমোড়া ভেঙে কপালটা কুঁচকে দিয়েছিলো তরীর। কলেজ ফিরতি ট্রেনটার সামনাসামনি দুটো সিটে চলছিলো জোড় আলোচনা- কী নিয়ে তা জানা নেই। হঠাৎ রিংটোন এই বিপত্তিটা ঘটিয়ে দিলো। ফোনটা রেখেই তরী এক প্রশ্নবিচিত্রা প্রশ্নের মুখে- এটা ভানুসিংহের পদাবলীর না? আমার খুব প্রিয়, বেশ কয়েকবার পড়েছি। কথাগুলো বলেই থামলো দিপ্র।দীপ্রদীপ রায়। তরী বিরক্ত হয়েও হেসে বললো এটা গীতগোবিন্দম্-জয়দেব, একবারও পড়িনি।অপ্রতিভ হাসিটা হাসতেই হলো দীপ্রকে, তবে কিছুটা অবিশ্বাস নিয়েই। কেন জানি না ওর মনে হতে লাগলো এগুলো রবীন্দ্রনাথেরই অন্য কারোর নয়…. এই ওবধি পড়ে হয়তো পাঠকরা ভাবেই ফেলবেন অনায়াসে একটা প্রেমগীতিকা লিখতে চলেছি, তবে সমস্যা অন্য যায়গাতে ওটি বড্ড কম।
লোকে বলে প্রেমটা একবারই হয়।আমিও বিশ্বাস করি তাই। তবে এটাও বিশ্বাস করি যে সেটা নারী পুরুষ বস্তু স্থান নির্বিশেষে হতে পারে যেমনটা হয়েছিলো তরীর। এক অসামান্যতা খুঁজে ফিরতো শান্তিনিকেতনে যেন চুম্বকে আটকেছে আর মোহ কাটছে না কিছুতেই। প্রত্যেকটা নুড়ি পাথর ওবধি ওর চেনা।বেইজ সাহেবের মূর্তি থেকে ভোরের প্রার্থনা সবটাই কেমন যেন হলদেটে পলাশ হয়ে যায় ভরা বসন্তেও। তবে কিছুদিন হলো আটকে পড়েছে একটা বিষয়ে, বেশ ভাবার একটা বিষয়–ঠাকুর ব্যক্তিগত জীবনে নাকি ছাতিম একেবারেই পছন্দ করতেন না তেমন তাহলে এতো প্রেম এলো কোথা থেকে! প্রেম কি তাহলে…
মানে ওটা কি প্রেম নয় নাকি ঠাকুর লুকিয়ে রেখেছিলেন সবার আড়ালে প্রেম করতেন বলেই! এত প্রশ্নের উত্তর ভাবতে ভাবতেই জয়দেব ডাক দিলেন ” প্রান্তিক ছাড়লো সবে…না না তেমন লেট হবে না… ওকে… বাই।” তারপরেই দীপ্রের প্রশ্ন।কথা বলতে একদমই ইচ্ছে হচ্ছে না ওর,তবুও খেজুরে আলাপে কখনও কখনও সারা দিতেই হয়। আলাপ পর্ব শেষে জানা গেছে দুজনের গন্তব্য একই,সিউড়ি।তাহলেএখন কিছুক্ষণ প্রেম খোঁজা বন্ধ।পুরো দিনটাই মাটি- এসব ভাবতে ভাবতে দীপ্রর প্রশ্ন আচ্ছা ম্যাডাম প্রেম করেছেন কখনও? উত্তরের প্রত্যাশা না করেই বলে চললো দীপ্র – “জানেন ম্যাডাম মানুষ ছাড়াও প্রেম করা যায়।” এবার একটু নড়েচড়ে বসলো তরী। কোথায় যেন মিলে যাচ্ছে পৃথিবীর শেষ কাণা টা আকাশে।চললো আলোচনা। গীত কোথাও গোবিন্দ হয়ে যায় তো কোথাও মিলে যায় বিতানে। তরীর অচলায়তন ভেঙে যায় কোথাও পঞ্চসরের মাধুরিতে। দীপ্র হয়ে ওঠে গোরা।আসলে প্রেমটা একই থাকে শুধু বদলে যায় স্তরেরা। কোথাও পূজা তো কোথাও প্রেম আবার কোথাও প্রকৃতি হয়ে উঠেছে প্রেমিক,যেন ভালোবাসার শেষতম বিন্দুতে মিলে যাচ্ছে আলোচিত পর্যালোচনারা।এবার তরী প্রশ্ন করে বসে -“ভালেবাসা আর প্রেমকে কি এক বলা যায়?” সূর্যদেব তখন অস্তাচলে,ম্যাজিক লাইট টা মুখের একপাশে এসে পড়েছে দীপ্রর – এখানে ঠিক কোন উপন্যাস টা রিলেট করবে তরী বুঝে না পেয়ে মুক্তকন্ঠে বলে উঠল ” ওরে উঠলি উঠেছে বারি,ওরে প্রাণের বাসনা…” দীপ্র একটুও অবাক না হয়ে বাকি শব্দগুলো নিজেই বলে দিলো।
ট্রেনটা থেমে গ্যাছে কোনো লালচে সিগন্যালে, অস্তগামী সূর্যে পূজারীনি রা তখন বুদ্ধপূর্ণিমা উজ্জাপনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত – কেউ ভক্তিভাবে তো কেউ জ্বেলে চলেছে সকল দুখের প্রদীপ। রেলগাড়ীটা চলতে শুরু করে আবার, শুধু থেকে যায় অচেনা কামড়া রা আর হঠাৎ দেখায় ব্যস্ত আলোচনারা।
গন্তব্য এসেছে ওদের।কচে’রা ফিরবে অভিষপ্ত বিদায় কে বিদায় জানিয়ে… ওই যে লোকে বলে না প্রেমটা একবারই হয়।কারোর জয়দেব তো কারোর রবীন্দ্রনাথ