• Uncategorized
  • 0

ইচ্ছাশক্তি ও হেলেন কেলার: প্রয়াণলেখ – লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

ইচ্ছাশক্তি নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে। হেলেন কেলার যেন ওই ইচ্ছাশক্তির মূর্তিমতী নিদর্শন ।
আজ হেলেন কেলারের প্রয়াণ দিবস। ১৯৬৮তে প্রয়াত।  ঊনিশ মাস বয়স থেকে সে মেয়ে যকৃৎ এর সংক্রমণে রীতিমত কাবু হয়ে চোখে দেখে না, কানে শোনে না, আর  কথা বলতে পারে না। অত অল্প বয়স বলেই ভাষাবোধটুকু পর্যন্ত তৈরি হয় নি। এমন কি মানুষের  সাথে কি করে ব্যবহার করতে হয়, তাও তো ঊনিশ মাস বয়সে গড়ে ওঠার কথা নয়।
তবু সে মেয়ে অত কঠিন ও দুস্তর প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মানুষ হল, লেখাপড়া শিখল, শুধু সেটুকুই নয়, তার মত অসহায় অভাগাদের জন্য শিক্ষার  ব্যবস্থা করল।
ইচ্ছাশক্তি ছাড়া এ সব হয়?
হেলেন কেলার ১৮৮০ তে জন্মেছিলেন। কবিগুরুর লেখা সোনার তরীর “দুই পাখি” কবিতাটি হেলেন অনুবাদে পড়েছিলেন। কবির সাথে সাক্ষাৎ এর সুযোগ হতে কবির মাতৃভাষায় দুই পাখি শোনার ইচ্ছে হল হেলেনের। কবি জানলেন হেলেনের ইচ্ছার কথা। খুব উৎসাহ বোধ করেন নি প্রথমটায়। মেয়েটা সেই ঊনিশ মাস বয়স থেকে লিভারের অসুখে ভুগে চোখে দেখে না, কানে শোনে না, কথা বলতে পারে না। কি করে ওকে কবিতা বোঝানো যাবে ? কবি আড়ষ্ট হয়ে রয়েছেন। হেলেনের জন্যে রথীন্দ্র, কবিপুত্র বাবার উপর চাপ দিলেন। যেতে হল কবিকে। শোনাতেও হল “দুই পাখি”। হ্যাঁ বাংলায়। হেলেন খুশিতে ফেটে পড়ছেন। শোনা ? হ্যাঁ, আপনি ঠিক দেখছেন। কবিদের ওষ্ঠ স্পর্শ করে তার ভাব তরঙ্গ গ্রহণ করে বোঝার অন্য রকম শক্তি ছিল হেলেনের। আনন্দিত হেলেনকে তার শিক্ষিকা বোঝালেন, তুমি যেমন চোখে দ্যাখো না, কানে শোনো না, কথা বলতে পারো না, তুমি যেন একটা খাঁচায় বন্দিনী। মুহূর্তে আপত্তি জানালেন হেলেন। না না, তোমরা শোনো, হেলেনের একটা মন আছে। ওই মনের জোরে সে সব কিছু টের পায়। মনই সব। মনের ভেতর দিয়ে বিশ্বলোকের সাড়া পায় হেলেন। কবিগুরু হতবাক। বন্দিত্বকে কে কবে এভাবে অতিক্রম করেছেন?
নিজে দৃষ্টিহীন, শ্রবণক্ষমতাহীন আর বাকশক্তিহীন হয়েও  সেই ধরনের মানুষের শিক্ষার বন্দোবস্ত করেছিলেন হেলেন কেলার।
কেন‌ই বা করবেন না, ইন্দ্রিয়গত প্রতিবন্ধকতা তো মানুষকে শেষ পর্যন্ত হারিয়ে দিতে পারে না, যদি মানুষটির নিজস্ব আত্মিক চেষ্টায় ঘাটতি না থাকে। হেলেনের মনুষ্যত্ব ছিল সুউচ্চ পর্যায়ের। নিজের কঠিন হীরকপ্রভ মনটাকে তিনি জানতেন, আর নিজের মানুষী জীবনের অসামান্য তাৎপর্যময়তা উপলব্ধি করতে পারতেন। জানতেন সুতীব্র ইচ্ছাশক্তির কথা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।