শ্যামলা গায়ের রং,
শ্যামলী ছিল নাম তার,
গত হয়েছে বাপ তার বছর দুই,
চাপলো কাঁধে সংসারের দায়ভার।
দু-চার বাড়ি কাজটাজ করে
ভাইটাকে পাঠালো এবার ইস্কুলে,
ঐ তো তার ছিল পুঁজি,
বড় হলে বাড়বে সুদে মূলে।
মেয়েটি ছিল শান্তশিষ্ট
ফুটত না কথা তেমন মুখে,
কেই বা ভেবেছিল আর
শরীর নয়, সমাজ ভুগছে অসুখে।
ও পাড়ার রতন,
রিক্সা ঠেলে দুবেলা যা করত রোজগার
রাতের বেলায় ভাসিয়ে দিত,
জোগাড় করতে মদ মাংসের আহার।
দেখলে পরে শ্যামলীকে,
ছুঁকছুঁক করত রতন
প্রেমের রসে নাকি কামের বশে,
কেই বা দেখেছিল তার মন!
মাস পাঁচেক হল পার
শ্যামলীকে কাছে চায় জলদি,
পাড়ার কটা বোখাটেকে নিয়ে
রতন আঁটল ফন্দি।
পল্লীবস্তি, এমনিই একটু আঁধার,
তার উপর অমাবস্যা
ওৎ পেতে ছেলেগুলো এদিক সেদিক
শ্যামলীর জন্যে শুরু তপস্যা।
নটা পার ঘড়িতে,
বাড়িতে ফেরেনি মেয়ে,
ভাইটাকে বসিয়ে কোলে মা
পথের পানে চেয়ে।
আগে তো হয়নি এমন,
আজ তবে কি হল তার?
সারাটা রাত চৌকাঠে বসে মা
খোলা পড়ে রইল দুয়ার।
ভোর হতেই শুরু হল খোঁজ,
কোথায় গেল শ্যামলী
পাড়াগাঁয়ের মুখ যে বেজায় খারাপ
কেন রে বাপমরা মেয়ে এভাবে মুখপোড়ালি?
থানা-পুলিশ
তোলপাড় করে পুরো বস্তি;
মেয়ের মুখ না দেখলে
মা কেমনে পাবেন স্বস্তি?
বেলা গড়াতেই
চোখে পড়ল এক টুকরো ছেঁড়া কাপড়,
টাটকা ছিল রক্তের দাগ
বোঝা গেল বসেছিল গতরাতে ধর্ষণের আসর।
মেয়ে হারা হল মা
ভাইয়ের গেল দিদি,
রতনের মতো ইতরেতর প্রাণীর
এরপরেও হুঁশ ফিরত যদি!
তদন্ত শেষে, আদালত ঘুরে
রতন এখন জেলে,
কিই বা হলো তাতে
ভাইটাও এখন যায় না ইস্কুলে।
কত শ্যামলীর রক্ত লাগছে দিনদিন,
ঘুণধরা সমাজের দেওয়ালে;
সবাই যদিও বা হয় দামিনী, তবে
সব মোম যায় না গলে মিছিলে।
অন্যধারে এখনও রয়েছে কিছু বরুণ
হচ্ছে প্রতিবাদ, চলছে আন্দোলন
কতখানি শিক্ষা পেলে হে পুরুষজাতি
থামাবে তুমি শক্তি প্রদর্শনের এই নৃশংস প্রহসন?