জাহ্নবীর পূর্ব তীরে হীরক পুরীর রাজা
রত্নধনে বলীয়ান, সবে প্রতিপদে দেন সাজা।
স্বর্ণ-রজত জহরতে মোড়া চারিদিক একাকার
শ্বেত পাথরের ইমারত যেন মায়াবী স্বর্গদ্বার।
আনাচে-কানাচে মুক্ত মানিক, হাজার হীরার ঝাড়বাতি
অপ্সরা দল নেচে নেচে যেন ছড়ায়ে চলেছে আলোকজ্যোতি।
মন্ত্রী, কোটাল, সেনাদল আছে, আছে অশ্ব ও হস্তী
যা নেই, সে শুধু রাজা রানী মনে এক পলকের স্বস্তি।
রানী রূপবতী চপল নয়না তনয়ার মাতা হলে
দাম্ভিকরাজা অতি ক্রোধভরে বাইরে তাড়ায়ে দিলে।
ভিখারিনী বেশে রাজবধূ যায় রাজনন্দিনী কোলে
বিমর্ষ মনে শুধু চলে যায়, যেদিকে দুচোখ চলে।
কুলোপুরোহিত অবাক নয়নে রাজার বিচার শুনে
পরমযত্নে নিজ বাড়ি এনে রাখিলেন অতি গোপনে,
দাম্ভিক রাজা, না পায় সঙ্গ, সেবার পরম দাসী
মন্ত্রী জায়ার বাল্য সখীরে বিবাহ করিল আসি।
রাজা-রানী-সখী-মন্ত্রী সকলে সুখের বাসায় বসে
ক্রমে দেখা গেলো পুনরায় সেই বিরহ সর্বনাশ।
ব্যাকুলিয়া রাজা মন্ত্রীরে ডেকে নিশ্চিত সুরে বলে
রানীর সখীরে ডাকো সেবাতরে, পুত্র আসিবে কোলে।
স্বর্ণ বাসরে রাজা বসে রায় বিনিদ্র রাত জেগে
হৃদয় জুড়াবে বংশধরের আদরের মুখ দেখে।
রাত ক্রমে বাড়ে, ভোরের আঁধার রাজধাত্রিকা সাথে
মন্ত্রী ভাবিছে সংবাদখানা কি দেব রাজার প্রাতে।
সখী সনে সখী জড়ায়ে কাঁদিছে, মন্ত্রী খুঁজিছে পথ
বিতাড়িত হবে সখী রানী মাতা যেমন পূর্বাবৎ
বাতাসী ধোপানি পূর্ব রাত্রে প্রসবিছে দুই পুত্র
মন্ত্রী ধাত্রী যুক্তি করিয়া হাজির হলেন অত্র,
শতেক বুঝায়ে বহু বিনিময়ে রাজনন্দিনী ছাড়ি
এক পুত্ররে নিয়ে আসে তারা হীরক রাজার বাড়ি।
মহা আনন্দে উৎসব যেন, হাজার বস্ত্র অন্ন
করিলেন দান নগরবাসীর যেন মহারাজ ধন্য।
এভাবে ক্রমশ বছর পেরোয়, ক্লান্তি আসিলো মনে
অভিষেক করে প্রাণের বাছারে বসালো সিংহাসনে।
রাজ প্রথাগত রণবেশ ধরে, অশ্বারোহণ করে
ললাটিকা মাখি পুত্র চলিল শুভ মৃগয়ার তরে।
বনে বনে ঘুরে না পায় শিকার, জোটেনা শাবক প্রাণী
নগরবাসীরা শুনিলে কি হবে! হবে মর্যাদাহানি
ভিখারি রানীর যুবতী কন্যা কুলপুরোহিত দ্বারে
অপরূপ রূপ দেখিয়া নয়নে ঘুরে ফিরে বারে বারে,
চকিতে ফিরিয়া মৃগয়া হইতে পিতারে বায়না ধরি
পুরোহিত সনে যোগাযোগ সারি প্রাসাদে আনিল বরি।
বধূ দরশনে বিচলিত রাজা অবাকনয়নে দেখে
মনে পড়ে যায় রানীরে তাহার পলক পড়েনা চোখে,
করজোড় সাথে পারিসদ মাঝে আকুল মিনতী করে
আজি এনে দাও বধূরে আমার মনে পড়ে বারে বারে।
নববধূ পাশে কুলপুরোহিত মাতারে আনিল প্রাতে
পুত্রের সাথে রাজনন্দিনী, গোপিনী আসিলো সাথে।
শুনিলেন রাজা বিবরণ ইতি, অশ্রুবাহিত তার
ধোপানিরে শুধু হাতজোড় করে জানায় নমস্কার।
হৃদয়ে যাহার তপ্ত শোনিত, তুষারে ছাইলো যবে
চেতনা আসিলো রাজার মনেতে, কেন ভুল করেছিনু ভাবে।
কেন ছেড়েছিনু দম্ভে ত্যাজিয়া, অকারণ জেদ ভরে
সকলের সাথে মিলেমিশে থাকে সকলে আপন করে।