উৎসব সংখ্যায় প্রবন্ধ – শর্মিষ্ঠা সেন
অভ্যাস
কাকু, কটা রুটি খাবেন?
আগে একটু চা টা দে৷ গলাটা একটু ভেজাই!বাজার টা দ্যাখ৷ মাছের ব্যাগ টা সরিয়ে রাখ৷ দুধের প্যাকেট দুটো ধুয়ে রাখ৷ লংকার ঝুড়িটা দে৷ বোঁটা ছাড়িয়ে রাখি৷ কচি শশা গুলো বার কর৷ কাকীমা কে রুটির সাথে কেটে দিবি৷
চা দিবি?এত বেলা হয়ে গেল একটু চা পেলাম না৷
কি রে?
কাকীমা বলে গেছে বাথরুম থেকে বেরোলে চা করতে৷
ও বাবা! তাহলেই হয়েছে! লোকজন খেয়ে দেয়ে অফিস চলে যাচ্ছে আর আমি বসে থাকব কখন মহারাণী বেরোবেন তারপর একসাথে চা পাব !
আর তোর কাকীমা বেরোতে বেরোতে সূর্য মাথার ওপর চড়ে যাবে!
আমি তোকে বলছি,তুই এখনই চা বসা৷ সময়মতো চায়ের টেবিলে না আসলে কুল্ চা খাবে৷
কী হল? বসালি? ধ্যাত!
এত চেঁচামেচি কিসের প্রতিদিন! ন’টাও তো বাজেনি ৷ সাড়ে আটটায় খাও রোজ, এমন কি দেরী হল?
এই তো….কাকীমা এসে গেছে৷ চা বসা৷
তারপর তোমার ঠিকঠাক নেমেছে তো?পেট সাফ্ তো দিল ভি সাফ্ ৷
ফ্রীজ থেকে তালক্ষীর টা বার করে রাখ৷ রুটি খাওয়ার পর খাব৷আহ্ !
এই তো চা এসে গেছে ৷ বাসন্তী, ওই বাদাম দেওয়া বিস্কুট টা দে,বুড়ো হাবড়ার মতো সুগার ফিরি আমি খাব না৷ আরে তুমি আবার চললে কোথায়?
বাজার টা দেখি৷ চা ঠান্ডা হোক৷
আবার ফুলকপি বাঁধাকপি? সেদিন বললাম না এখনও স্বাদ হয়নি, এনোনা! পটল এনেছ কেন?পটল তো আছে ৷ এগুলো কি ? বিচিওয়ালা বেগুন এনেছ? বলেছিনা বেগুন কেনার সময় টিপে আনবে! স্পঞ্জের মতো বেগুন আনতে পারনি? এত গুলো বকফুল এনেছো কেন? কে খাবে এত? আর এই একঘেয়ে লালশাক! বাজারে কত রকমের শাক! মা তো কিছু খাওয়া শেখায়নি, জানবে কোথা থেকে….
কাকীমা, কই মাছ আর পার্শে মাছও আছে,সিঙ্কে নামানো৷
কাকীমা, কাকু কিন্তু ছানা করার পাউডার আনেনি৷
গাছ থেকে লেবু ছিঁড়ে আন, লেবু দিয়ে ছানা হবে৷ বাড়ির লেবু থাকতে অন্য কিছু কেন?
ওই লেবু কাকীমা খায় না৷
কবে থেকে?
আমি রান্নাকাজে ঢোকার পর থেকেই তো দেখছি খায়না!আপনাদের লেবুগাছ টা তো পায়খানার পাশে, তাই….
হ্যাঁ , ঠিক বলেছিস, আমার তো খাটা পায়খানা, গাছে ডাইরেক্ট গু যাচ্ছে , তোর কাকীমার মতো মহান ওই লেবু খেতে পারেন না ! যত্তসব !
এই থামো তো! সকাল থেকে বকবক বকবক ! এত বাজার এনেছো রাখবো কোথায়?
ফ্রীজে রাখো৷
দরজা খুলে একটু দ্যাখো৷ যদি রাখতে পার আমি উদ্ধার হই৷ বাবার জন্মে কিছু দেখেনি, এখন দুটো পয়সা হয়েছে,বাজার শুদ্ধ তুলে নিয়ে আসে৷দুজন লোকের এত বাজার লাগে? কত লোকে খেতে পায়না জান?
কাকীমা, আজ কি মাছ হবে?
আজ মাছ হবে কেন? কালকের ইলিশ শেষ হয়নি৷
এই বাসন্তী, আজ তেল কই হবে৷ বক ফুল ভাজবি৷ ময়দা দিবি না৷ গোবিন্দভোগ চাল ভিজিয়ে রাখ৷ লাল শাক করবি৷ রসুন না, বড়ি আর পোস্ত ছিটিয়ে করবি৷
ডাল করব না তো?
ডাল করবি না তো শুকনো শুকনো খাব কী দিয়ে? তোর কাকীমা তো ঘি শুঁকতেও দেবেনা৷ পাতলা করে মুসুর ডাল করবি৷ ডালে একটু পেঁপে দিবি৷ পাঁচফোড়ন ধনেপাতা দিয়ে করবি৷
এখনও রুটি দিলি না৷
কি রে?
দিচ্ছি৷ চ্যাঁচাচ্ছেন কেন আবার?
বেশ করব! একশ বার করব! আমার বাড়ি, আমার টাকা, আমি চ্যাঁচাবো, যা খুশি খাব তাতে কার কী অসুবিধে?
তাও যদি বাড়িটা নিজে করতে ৷ শ্বশুর দিয়েছিল বলে মজাতেই কেটে গেল!
শ্বশুর বাড়ির সাথে যে হাঁড়িমুখো গছিয়েছিল সেটা মনে পড়ে? কেউ তো আসছিল না ! এই আমি ছিলাম বলে পার হয়ে গেলে ! আবার বড় বড় কথা!
এই খবরদার ! ছোটমুখে বড় কথা বলবে না! তোমার চোদ্দগুষ্টির ভাগ্যে সাণ্যাল বাড়িতে সম্বন্ধ করতে পেরেছ! না খেয়ে তো ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলে! আমার বাবা না তুলে ওঠালে এদ্দিনে ওভারব্রীজের তলায় মাথা গুঁজতে হত….
গুষ্টি তুলে কথা বলবে না বলে দিলাম!
হ্যাঁ , তোমাদের তো রাবণের গুষ্টি ! কত নাম ডাক !
কাকু , রুটি৷
রাখ তোর রুটি৷ তোর কাকীমার বাবার বাড়িতে খাবই না! ঘোড়ার ডিমের সংসার!
কাকু! কোথায় যাচ্ছেন?
কাকু? ও কাকু!
এ বাবা!
বাসন্তী, তালক্ষীরের টিফিনকৌটো তুলে রাখ আর আমাকে একটা রুটি দে৷ ছানা দিতে হবেনা বরং ডিম সেদ্ধ দে দুটো৷ তুই একটা খাবি৷
হ্যালো, মিষ্টু, তোর বাবা কী করছে? জলখাবার খেয়েছে?
হ্যাঁ, তোর শ্বশুরের সঙ্গে খাবে বলে চলে গেল৷
তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিস৷ বেশী মিষ্টি টিষ্টি দিস না৷
দুপুরে তেল কই করছি বলিস৷
না,না, বাসন্তী না,আমিই করব৷তোর বাবার মনমতো না হলে আবার ঝামেলা করবে! এই বয়সে ঝামেলা ঝঞ্ঝাট ভালো লাগেনা৷