“এই শ্রাবণে আষাঢ়ে গপ্পো” বিশেষ সংখ্যায় সঞ্জীবন হাটী

সই

হঠাৎ আবার ঘুম ভেঙে গেলো আরাধনার। সেই চেনা গন্ধটা নাকে আসছে। সবে অমাবস্যা পেড়িয়েছে, চাঁদের আলো নিস্প্রভ। জানলার শিকের ফাঁক দিয়ে এসে একপ্রস্থ পড়েছে ওর ঘরের মেঝেতে, খাটের পাশে। তার একটু দূরেই ঘুমিয়ে কাদা হরিদাসী, ওবাড়ির বয়স্কা পরিচারিকা, আরাধনার অষ্টপ্রহরের সঙ্গী। বিছানায় শুয়ে শুয়েই বাইরের দিকে তাকায় আরাধনা। গাছের পাতাগুলো আলতো নড়ছে। আলো আঁধারে খেলা করছে সাদাফুলের থোকাগুলো। গন্ধরাজের গন্ধ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ওর চারদিক। ঐ গন্ধরাজ গাছের পাশেই তো পড়ে ছিলো ক্ষেমঙ্করীর প্রাণহীন শরীরটা। সেদিনও এরকমই ফুলে ছেয়েছিলো গাছটা। ভোররাতে কলঘর যাওয়ার জন্য উঠতে আরাধনারই প্রথম চোখে পড়েছিলো সেই দৃশ্য। ভয়ে আতঙ্কে আর্তনাদ করে উঠেছিলো ও। তারপর সেই যে ঘরে ঢুকে দোর দিয়েছিলো, পরের দু’দিন আর দাঁতে কাটেনি কিছু। বৈদ্য নাকি বলেছিলো ক্ষেমঙ্করীকে সাপে কেটেছিলো, কিন্তু তার মুখ দিয়ে ফেনা বেড়তে দেখেনি আরাধনা। মনে মনে প্রশ্ন জেগেছিলো অনেক, কিন্তু বড়ো বাড়িতে এক নিতান্ত দাসীর অকালমৃত্যুতে আর কার কি যায় আসে! এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে চোখটা একটু লেগে এসেছে কি আসেনি, ঠক করে একটা আওয়াজ। ধড়ফড় করে উঠে বসলো আরাধনা। জানলার বাইরে কি কেউ সড়ে গেলো? পাল্লাটা তো খোলা ছিলো, বন্ধ হয়ে গেলো কি করে! আবারও যেন সেই জবা কুসুম তেলের গন্ধটা খুব জোড়ালো হয়েই মিলিয়ে গেলো আরাধনার নাকের পাশেই।
একবার ভাবলো হরিদাসীকে ডাকবে, বলবে বাইরেটা দেখে আসতে। তারপর সাহস করে নিজেই বেড়িয়ে এলো ঘরের বাইরের টানা বারান্দাটায়। উঠোন পেড়িয়ে ফটকের সামনে বসে ঢুলছে দারোয়ানরা। ফোয়ারার গা ঘেঁষে ছুটে পেড়িয়ে গেলো কি একটা। ধাড়ি ইঁদুর বা কটাস হবে হয়তো! না চাইতেও ঠিক চোখ পড়ে গেলো ওর উঠোনের পশ্চিমের ঐ একফালি দেওয়াল দেওয়া চালাটার দিকে। ওটাই তো ক্ষেমঙ্করীর ঘর ছিলো। অন্ধকার রাত্রে জনহীন সেই নিবাস দেখে যেন নিজের একাকীত্বকেই আরও প্রকট মনে হলো আরাধনার। বারবার মনে পড়তে থাকলো ওর সই-এর কথা। হলেই বা বাড়ির দাসী, তাবলে কি বন্ধু হতে পারেনা! চোখের জল গড়িয়ে এলো নিজের অজান্তেই।
যখন আরাধনা বিয়ে হয়ে এবাড়িতে আসে, তখন ওর বয়স সবে বারো। বাড়ি ভরতি বিধবা শাশুড়ি, অবিবাহিতা ননদ, বয়স্কা মহিলাদের পাশে একমাত্র ক্ষেমঙ্করীই যা একমাত্র ওর বয়সী ছিলো। কাজেই বাড়ির বড়ো বউ আর ঝি-এর মধ্যেও মিত্রতা গড়ে উঠেছিলো স্বাভাবিক ভাবেই। উঠোনে পা ছড়িয়ে বসে গল্প করা, বিকেল বেলার এক্কা দোক্কা, সন্ধ্যে বেলায় শাশুড়ির সামনে বসে রামায়ণ শোনা সবেতেই দুটি থাকতো একসঙ্গে। তারপর একদিন সেই ক্ষেমঙ্করীর বিয়ে হয়ে যায়। গলা জড়িয়ে কাঁদে কাটে দুই প্রাণের সই। মেয়ের বিয়ে দিয়ে খুব শান্তিতে চিরবিদায় নেয় ক্ষেমঙ্করীর বাবা, ঐ বাড়িরই পুরোনো ভৃত্য ভোলানাথ। জন্মের সময়ই মা হারানো ক্ষেমঙ্করীর বাপের ভিটে বলতে থেকে যায় ঐ অভিজাত জমিদার বাড়িরই উঠোনের পশ্চিমে পড়ে থাকা একটা একচালার ঘর।
বছর দুই ঘুরতে না ঘুরতে ক্ষেমঙ্করী ফিরে আসে ওর ঐ একচালায়। লোকে বলে ছেলে পিলে হয়নি বলে ওর স্বামী ওকে ত্যাগ দিয়েছে। ক্ষেমঙ্করী কিন্তু অন্য কথা বলে ওর পুরোনো সইকে। বলে যে, ‘ঐ লোকটাকে মোর মনে ধরেনি মোটে। রোজ রাতে টলতে টলতে এসে বলে শুতে চল, শয়তান একটা’। ও তাই নাকি ইচ্ছে করে ছেড়ে চলে এসেছে ওকে।
এদিকে চার পাঁচ বছরেও কোনো সন্তান আসেনা আরাধনার। ইতিমধ্যে ওর স্নেহময়ী শাশুড়ি মায়েরও স্বর্গপ্রাপ্তি হয়। অবিবাহিতা ননদ যশোধরা উঠতে বসতে গঞ্জনা গায় ওর পাশে। তারই প্ররোচনায় যেন জ্বলে ওঠে ওর স্বামী গৌড়মোহনও। সহবাসের নামে যেন পাশবিক অত্যাচার চলতে থাকে আরাধনার ওপর।
যে বাড়িতে একদিন বিয়ে হয়ে আসার পরে রাঙা পায়ে মল জড়িয়ে দৌড়ে বেড়াতে ভালোবাসতো এক সাধারণ মধ্যবিত্ত ব্রাহ্মণ বাড়ির ঐ দ্বাদশ বর্ষীয় বালিকাটি, যার শাশুড়ি তাকে পরম যত্নে আদরে মুড়ে রেখেছিলো নিজের কোলে, তার কাছে যেন ঐ বাড়িটাই কেমন একটা কারাগার হয়ে উঠতে লাগলো ক্রমশ।
বাড়ির ঝি-চাকর, গোয়ালা-গোমস্তাদের সামনেই অবিরাম ওকে গালিগালাজ করতে থাকলো যশোধরা।
‘গতরের জোড় নেই, এই বাড়ির বড়ো বউ হয়েছে! আমার দাদাটা’কে শেষ করে দিলে’গা’ – দিবারাত্র এই অপমান শুনতে শুনতে আরাধনার মরতে ইচ্ছে হয়। গৌড়মোহন অন্যঘরে রাত্রিবাস শুরু করে। ধীরে ধীরে যেন দেখা সাক্ষাৎও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় ওদের মধ্যে। ঝি-দের কাছে খবর পায় আরাধনা যে গৌড়মোহন নাকি প্রায়ই বাগানবাড়িতেই রাত কাটাচ্ছে। সেখানে নাকি কোন বাইজিও এসে ঘাঁটি গাড়ছে মাঝে মধ্যেই।
এসব শুনেও বিশ্বাস করতে চায়না ও। ভুলে থাকতে চায় এসবকিছু। বাড়ির নিত্য পুজো, ব্যাবসার হিসেব বুঝে নেওয়া, ঝি-চাকরদের মাইনে-পত্তর, হেঁসেলে উঁকি দেওয়ার পরেও যে সময়টুকু হাতে থাকে, সেই সময়টায় ক্ষেমঙ্করীর সাথে নিজের সুখদুঃখের কথা ভাগ করে নিয়েই শান্তি খুঁজতে চায় ও। কিন্তু সেখানেও বাধ সাধে যশোধরা। মুখে মুখে রটিয়ে দেয় যে ক্ষেমঙ্করী অলক্ষী, অপয়া, ওর সঙ্গে সই পাতিয়েই আরাধনার এই দুর্ভোগ। ওর জন্যই বাড়িতে কোনো সন্তান নেই, ওর দাদা বাইজি নিয়ে পড়ে আছে। ও আরও রটিয়ে বেড়ায়, যে ক্ষেমঙ্করীর নাকি চরিত্র্যের দোষ আছে, সেজন্যই নাকি ওর বর ওকে ভিটেছাড়া করেছে।
কিন্তু এতো লাঞ্ছনার মধ্যেও কোথাও কোনো সত্যতা খুঁজে পায়না আরাধনা। নিতান্ত অভাগা নির্বান্ধব এক মেয়েমানুষ, যার তার শ্বশুর ঘরেও কোনো জায়গা হয়নি, যার নিজের বলতে এই বিশ্বে একটা কানা কড়িও নেই, তার সম্বন্ধে এসব রটনা শুনে ওর কেবল দুঃখ আর করুণা হয়। আন্তরিক আদর নিয়ে নিজের শাড়ি গয়না ওকে পড়তে দেয় আরাধনা। ওর চুল বেঁধে দেয়, ঠোঁট রাঙানো পান খেতে দেয় নিজে সেজে। কোনো কোনোদিন চাঁদ উঠলে বাড়ির ছাদে গিয়ে বসে গান গায় দুইবোনের মতন পাশাপাশি বসে। গন্ধরাজের গন্ধে ঘর ম-ম করে। ঝি-চাকরেরা উঁকি মারে ইতিউতি। নিজের ঘরের পর্দা সড়িয়ে রোষ দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে যশোধরা।
ক্ষেমঙ্করীর খুব প্রিয় ছিলো জবাকুসুম তেল। আরাধনার কাছ থেকে নিয়েই রোজই নিজের কোমর পর্যন্ত লম্বা চুলে লাগাতো ও। মাঝে মধ্যে লাগিয়ে দিতো আরাধনার চুলেও।
সেদিন হঠাৎ ঝড় উঠলো খুব জোড়ে। প্রথম বৈশাখের কালবৈশাখী। তখন সন্ধ্যে নামছে। ধুলোয় হাওয়ায় মিশে চুলগুলো চোখে মুখে ঢুকে এক একাকার অবস্থা আরাধনার। ছাদে দৌড়ে সব জামা-কাপড় তুলে নেয় ক্ষেমঙ্করী। আরাধনা তখনও চোখ ঘষছে দুহাত দিয়ে। দেখতে দেখতেই বৃষ্টি নামলো। আকাশ কালো মেঘে ভরা। অনবরত বিদ্যুতের চমক আর মেঘের গর্জনের মাঝেই আরাধনা চমকে উঠলো। নিজেকে বুঝিয়ে নিতে যেটুকু সময় লাগে, তার মধ্যেই অনুভব করলো কে যেন ওর হাতদুটো জাপটে ধরে ঠোঁটের ওপর জোড়ে কামড়ে মুহূর্তের মধ্যে ছুটে চলে গেলো। ও যখন চোখ খুললো, তখন ছাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ও একা দাঁড়িয়ে, জামা-কাপড় কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নীচে নেমে যাচ্ছে ক্ষেমঙ্করী। একদম শেষ সিড়িতে পৌঁছে একবার ওর দিকে তাকালো সে, তারপরই একমুখ লজ্জা নিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো ওর ঐ একফালি চালাটার দিকে।
আরাধনা খেয়াল করেনি কিন্তু এই পুরো ঘটনাটার আরও একজন সাক্ষ্মী রয়ে গিয়েছিলো পর্দার আড়ালে, যশোধরা।
তারপরের দিন আর কথা হয়নি আরাধনার ক্ষেমঙ্করীর সঙ্গে। বারদুয়েক চোখাচুখি হতেই আগের দিনের মতন লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠেছিলো ক্ষেমঙ্করী। আর তারপরই ভোররাতে সেই বিবর্ণ, নিষ্প্রাণ দেহ দেখে আঁতকে ওঠে আরাধনা।
কানাঘুষো কানে আসে ওর যে ক্ষেমঙ্করীর মৃত্যু সাপে কেটে হয়নি, নিজের মনেও ওর সেটাই সত্য বলে মনে হয়। কিন্তু গৌড়মোহন আর যশোধরার চোখ রাঙানিকে আগ্রাহ্য করার মতন মনোবল ওর ছিলোনা।
সেদিনের পর থেকেই প্রায়ই ঐ জবাকুসুম তেলের গন্ধ পায় ও। ঘুমোতে ঘুমোতে হঠাৎ জেগে ওঠে কিসব শব্দে। মনে হয়ে কে যেন দৌড়ে গেলো, কে যেন ডাকছে।
গৌড়মোহনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়না। ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘একটাকে পেটে ধরো, দেখবে আর কিচ্ছু হচ্ছেনা’।
আবারও গৌড়মোহন হানা দিতে থাকে ওর শোবার ঘরে, মাঝে-মধ্যেই। আরাধনা প্রায়দিনই মুখে কাপড় বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকে পালঙ্কের মাঝখানে। বিছানার সাদা চাদর ওলট পালট হয়, কুঁকড়ে যায়। যশোধরা মুখ টিপে হাসতে হাসতে সেই চাদর পাল্টায়। অন্য চাদর পাতে। সেই চাদরও আবার ভেজে, চোখের জলে, লালায় আর ঘামে। দাপাদাপির পর ক্লান্ত গৌড়মোহন ঘোড়ার গাড়ি চড়ে রওনা দেয় বাগানবাড়ির দিকে। বাড়ির ঝি-চাকরদের ওপর আদেশ হয় সর্বক্ষণ বড়োবউকে চোখে চোখে রাখার। সেই থেকেই হরিদাসী ওর ছায়া।
সেদিন রাত্রে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসবই আকাশ কুসুম কল্পনা করছে আরাধনা, এমন সময় টগবগিয়ে ঘোড়ার গাড়ি চড়ে বাড়ি ফিরে আসে গৌড়মোহন। বারন্দায় দাঁড়িয়ে অবাক চোখে দেখতে থাকে আরাধনা। টলতে টলতে উঠোন পেড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকে গৌড়মোহন। ওর চোখ লাল, গলার স্বর ভাঙা। ওর সঙ্গে আরও দুজন লোক। উজ্জ্বল, নধর চেহারা।
সামনে আরাধনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই ওদেরকে চিৎকার করে বলে গৌড়মোহন, ‘ঐ যে দাঁড়িয়ে আছে আমার রানিমা, যা গিয়ে ধর ওকে, ধরে নিয়ে চল, চল শালা, আজ শেষ করেই দে’।
লোকদুটো ছুটে আসে আরাধনার দিকে। ওদের চোখ হিংস্র শৃগালের মতন, মুখ দিয়ে যেন লাল ঝড়ছে। টলে পড়তে পড়তেও নিজেকে সামলে নিয়ে ছুটে আসতে থাকে গৌড়মোহন, ওর ধুতি অর্ধেক খুলে সিড়িতে লুটোচ্ছে।
আরাধনা বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে, বুঝে উঠতে পারেনা ওর কি করা উচিত, আওয়াজ শুনে ততক্ষণে ছুটে বেড়িয়ে আসে হরিদাসী। প্রৌঢ়া ঐ মাতৃসমা মহিলা নিজের আঁচল আড়াল করে দাঁড়াতে যায় বড়োবউ-এর সামনে ঢালের মতন। লোকদুটো এসেই ধরতে যায় আরাধনাকে। ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় হরিদাসীকে, থামের গায়ে পড়ে কপাল কেটে রক্ত বেড়োয় ওর। ভয়ে আতঙ্কে আরাধনার চোখ বুজে আসে। মাথা ঘুরে যায় ওর।
আরাধনা চোখের সামনে যেন একপলক দেখতে পায় ক্ষেমঙ্করীর সেই লজ্জা রাঙা চটুল হাসিটা, তারপরেই এক বিকট শব্দ হয়, কারুর আর্তনাদের মতন, অন্ধকার হয়ে যায় চারদিক। আরাধনা পড়ে যায় মাটিতে।
পরদিন অনেক বেলায় যখন জ্ঞান ফেরে ওর, তখন ও নিজের খাটে শুয়ে আছে, পাশেই বসে কবিরাজ, হরিদাসী হাওয়া করছে হাতপাখা দিয়ে, গোটা ঘর ঝি-চাকরে ভরতি।
ও জানতে পারে যে আচমকা বারান্দার বিশাল ঝাড়বাতিটা ভেঙে পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে ঐ বাড়িতে, সিঁড়ি থেকে পড়ে হাত-পা ভেঙে শয্যাশায়ী ওর স্বামী গৌড়মোহন আর ওর ননদ যশোধরাকে নাকি ভোররাতে সাপে কেটেছে ঐ গন্ধরাজ গাছের ঝোপের পাশেই। নিকট প্রজারা তাকে নিয়ে শহরে গিয়েছে উন্নত চিকিৎসার আশায়। আর ঐ রাত্রেই ঝোড়ো হাওয়ায় নাকি ভেঙে পড়েছে ওদের উঠোনের পশ্চিমের ঐ একফালি চালাটা।
একঘর লোকের মাঝে শুয়ে, হরিদাসীর হাতে হাওয়া খেতে খেতে আবার যেন নিজেকে এক মুহূর্তের জন্য সেই স্নেহধন্য নব পরিণীতা নিস্পাপ দ্বাদশ বর্ষীয় বালিকা রূপে কল্পনা করলো আরাধনা। তারপর চোখ বুজলো। এখন ওর ঘুমের দরকার। বাইরের হাওয়ায় গন্ধরাজের সুবাস এসে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিচ্ছে ওর এই চিরপরিচিত একান্ত আপন কামরাটাকে।
বন্ধ চোখের সামনে আবারও ভেসে উঠলো ওর প্রাণের সই ক্ষেমঙ্করীর মুখটা। বুকের ভেতরটা কেমন যেন চিনচিন করে উঠলো, গলার কাছে কষ্টটা দলা পাকিয়ে এলো, বন্ধ চোখের পাতার তলাতেই ভীড় জমালো কান্নাগুলো।
ওর পাশে তখন অনেক লোক। ঘুমের ঘোরের মধ্যে নিজের অবচেতনেই সেই চেনা জবাকুসুমের গন্ধটাই যেন খুঁজে বেড়াতে চেষ্টা করতে লাগলো আরাধনা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।