“এই শ্রাবণে আষাঢ়ে গপ্পো” বিশেষ সংখ্যায় ঝিরি ঝিরি ঝোড়া

যাত্রা

আষাঢ় শেষ।শ্রাবণ সবে এসেছে দোরগোড়ায়। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি চলছে।
Flight প্রায় তিন ঘন্টা লেট। টাপুর টুপুর বৃষ্টির ফলে lounge-এ বসে wait করতে থাকো। দূর ছাই! এর থেকে বেশি train-ই ভালো। কোন ঝামেলা নেই।তবে London থেকে Kolkata আসার জন্য long-distance train এখনও আবিষ্কার করেননি বিঞ্জানীরা। Kolkata পৌঁছোতে এবার সব থেকে বেশি হ্যাপা হল।
বাবা নেই।দু হাজার তেরো সালেই চলে গেছেন। মা একাই থাকেন।
পাশেই বসে একজন সুপুরুষ ভদ্রলোক।তবে আমার তাঁকে একটুও সহ্য হচ্ছে না। প্রথমে বসেই বললেন,” Hello!” ।ভদ্রতা বজায় রাখতে আমি উত্তর দিলাম “Hi!” । কিন্তু তারপর শুরু হলো গায়ে পড়ানি হাবভাব।
আমি একজন বিখ্যাত কবির বাংলা কবিতার বই পড়ছিলাম। হঠাৎ দেখে বললেন-“ওরে বাবা! বাংলা বই?” উত্তরে আমি বললাম-“কেন? বাঙালীরা কি সাহিত্য বা কবিতা লিখতে বা পড়তে ভুলে গেছে?”উত্তরে তিনি বলেন–”না, না, না! আমি তার বলতে চাইনি। কিন্তু বাংলার সাথে সাথে ইংলিশ ব‌ই পড়াও খুব দরকার।তাহলে ইংলিশ literature–এর চর্চাও প্রয়োজন।” এবার আমার মাথাটা টকবক করে ফুটতে থাকল। নিজেকে অনেক কষ্টে control করে,”ধন্যবাদ!উপদেশটি মাথায় রাখবো”,বলে আমি মুখ গুজলাম।
হঠাৎ উনি আবার চট্ করে পাগলের মত খে‍৺চিয়ে উপদেশ দিয়ে বসলেন, “আপনার না আমার মতন সারাদিন ভালো করে কাটাবার জন্য রোজ সকালে dark chocolatesখাওয়া দরকার। Chocolate brand-টার নাম পরে দেখে বলে দেব। আচ্ছা আপনি রোজ সকালে উঠে প্রথমেই কি খান?” এবার বোমা ফাটলো বলে। প্রথমেই বলে উঠলাম– “কেন বলুন তো? এত research work আমার ওপরে করার ইচ্ছে আপনার কেন হচ্ছে?”একটা নিরীহ নিপাট স্বচ্ছ উত্তর–”কেন? যাকে ভালো লাগে তাঁকে চিনতে চাওয়া, তার বন্ধু হতে চাওয়া কি অন্যায়?” উত্তরটা শুনে আমি কেমন যেন থমকে গেলাম। তারপর তিনি handshake করার জন্য হাত বাড়িয়ে বললেন–” Hello! I am Sidharth Mukherjee ; Director of TCS.”Handshake করতে ইতস্তত বোধ করলেও হাত বাড়িয়ে বললাম– “Hi! My name is Ishara; CEO of Janine Stone & Co.।”
কিছুক্ষণ বাদেই ঝড় থেমে গেল আর flight আবার Kolkata-র উদ্দেশ্যে রওনা দিল।তবে বাজ মাঝে মাঝেই চমকে উঠেছিল। ধিরে ধিরে তা বন্ধ হয়ে গেল। কেন জানি না মেঘ চমকানোর সময় খুব মনে মনে বাড়ির সবাইকে হঠাৎ করে খুব দুশ্চিন্তা শুরু হচ্ছিলো। Sidharth, আমার নতুন এবং একমাত্র বন্ধু সেই সময় আমার পাশে থেকে আমায় সঙ্গ দিলেও মন যেন ঘোড়ার মতো জোড়ে ছুটছে।
যাই হোক! পরের দিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ flight Kolkata airport-এ land করলো। আমার আর Sidharth- এর বন্ধুত্বটা কেমন যেন এক যাত্রাতেই অনেকটা গভীর হয়ে গেছে। Phone number আদান প্রদানের কথা আর বলে দিতে হয়নি।এখন এসেছে সেই শেষ মুহূর্ত – যে যার বাড়ির দিকে রওনা দাও। আজকাল তো আর ট্যাক্সি নয়; ক্যাবের যুগ। তবে যেহেতু দুজনের বাড়িই প্রায় কাছাকাছি তাই একটা cab-এই হয়ে গেল–আমি বা৺শদ্রোণী, আর Sidharth ভবানীপুর।তাই আমাকে নামিয়ে দিয়ে Sidharth তার বাড়ির জন্য রওনা দেবেন।
Kolkata নেমে আমরা দুজনেই খুব খুব excited। মাকে এবার দুটো বড় surprise দিতে পারবো আমি।প্রথমত, এবার কেউ জানে না যে আমি আসছি ;আর দ্বিতীয়ত, যদিও দুই দিনের পরিচিতিতে কাউকে চেনা যায় না তবুও আমরা , অর্থাৎ আমি আর Sidharth একে অপরকে আন্দাজ করতে শুরু করে ভালো লাগতে শুরু করেছি।তাই মা রে প্রতিবার আসলেই বিয়ের তাড়া দিতে থাকে আশা করি সেটা এবার হবে। না।
বাড়ির main gate-এর সামনে ক্যাব এসে দাঁড়ালো।এতটা Sidharth-কে নিয়ে এসেছি। মা’র সাথে পরিচয় না করিয়ে তো থামছি না। তবে একটা জিনিস দেখে অদ্ভুত লাগলো। Main gate-টা হাট করে খোলা। প্রায় নাচতে নাচতে দোতলায় পৌঁছতে না পৌঁছতেই দেখি লোকে লোকারণ্য। আর তারপরে আমি আর আমার পর Sidharth দোতলার drawing room-এ ঢুকতে না ঢুকতেই দেখি এক বিধবা মহিলার শবদেহ সাজিয়ে শজ্জিত করে রাখা।প্রাণে কালো পার সাদা রঙের গরদ শাড়ি, চোখে তুলসী পাতা দিয়ে শজ্জিত সেই নারী, সেই শক্তি– আমার মা। সেই মা রে সর্ব কষ্টে পাশে থেকে আমাকে বড় করার জন্য লড়াই করে এসেছে, আমার আনন্দকে নিজের আনন্দ বলে ভেবেছে।
সবকিছু ভুলে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠে ডাকি,”মা!” বলে। অন্তরে জেগে উঠেছে এক অদ্ভুত হাহাকার। সারা বিশ্ব ব্র‌হ্মান্ড যেন সেই ঝড়ের মত করে কা৺দছে। চারিপাশে বাড়ি ফেরার আক্ষেপ হৃদয়ে বিরাজ করছে। প্রকৃতি কি এতই নি‌ষ্ঠুর যে গতকাল রাতেই এই যাত্রার মাঝে এরকম যার কাছে আসছি তার জীবনযাত্রার শেষবেলায় ইতি ডেকে আনলো? Stroke-এ মৃত্যু। আমি কোন দিনই অবান্তর মত সব নিয়মকানুনগুলো মানিনা।তাই মেয়ে হ‌ওয়া সত্ত্বেও নিজের কা৺ধে করে মাকে স্বর্গরথ পর্যন্ত নিয়ে গেলাম। মুখাগ্নিও আমিই করলাম। শুধুমাত্র মাকে চুল্লীতে ঢোকাবার দৃশ্যটা নিজের চোখে দেখতে পারিনি।তাই সে সময় মুখটা ঘুরিয়ে Sidharth-কে জাপটে ধরলাম।
তারপর আর কি? আমার মামা আর মামী বারবার বলেছিল কিছুদিন
থেকে যেতে বাড়িতে। তবে আমার মন কিছুতেই মানছিল না। কিন্তু মামাদের tension হয় বলতে Sidharth বলল–”Uncle আমি Sidharth Mukherjee। London–এই থাকি।এখন TCS-এর Director Post-এ আছি। আমার স্পর্ধা ভাববেন না, আমি Ishara-কে নিজের wife-এর স্থানে দেখতে পেতে চাই।” আমার মত হ্যা ছিল শুনে আমরা পরের বছরের মধ্যে মামাদের সাথে Sidharth-এর পরিবার কথাবার্তা বলে আমাদের বিয়েটা সেরে ফেলে এবং London-এই চলতে থাকলো আমাদের দুজনের সেই জীবনযাত্রা।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।