এই সময়ের লেখায় সম্পূর্ণা মুখোপাধ্যায়

অসহিষ্ণুতা বনাম কালচারাল কর্নুকপিয়া

ঢিল দাও। মানে একটু ঢিলে করতে বলছি আর কি।

আজকের দিনের হিসেব অনুযায়ী, এক বান্ডিল নারকেল দড়ির দাম ৯৫ টাকা। নাইলন দড়ি ১০৫ টাকা।
নাইলন দড়ির সমস্যা আছে কিছু, পুরোনো হয়ে যায়, পাতলা হয়ে যায়, বেরঙীন খয়ে যাওয়া দড়ির টুকরো হাতে কাঁটার মত বেঁধে। তারপর জীবাশ্ম জ্বালানী জাত দ্রব্য, পরিবেশের জন্য অনুকুল নয়।
তার চেয়ে নারকোল দড়ি ভাল। টেকসই। কোপরা জাত, টেনে ছেঁড়া মুশকিল, সব দিক থেকে চৌকস বস্তু।
কেবল হাত বাঁধতে হলে মুশকিল। লাল দাগ , যন্ত্রণা এবং প্রাণপণ দড়ি কেটে ঘচাং ফু-র চেষ্টা নিয়ে আসবে নারকোল দড়ির বন্ধন।
সোনা – রুপোর সুতোর এই দোষ নেই। ছোট্ট ছোট্ট রিল এ পাওয়া যায়, দাঁত দিয়ে সেলাই শেষে একটান দিলেই ভোকাট্টা, ছুঁচ রিল থেকে মুক্ত। সূক্ষ্ম সূচিশিল্প , জামায় , কুশন কাভারে , টেবিল চাপার কোণে, সেখানেই এদের ঔকাত শেষ। কিন্তু কি বাহারি সব কাজ তৈরি হয়। লোকে সেধে পরে থাকে এ সুতোর বাঁধন । ঠিক কিনা ? রেশমি সুতার ভারি আদর।
নববর্ষে নতুন সুতো পরতে বলেন মা-দিদিমারা। নতুন দড়ি তো শুনি নাই। এত টান লাগছে আমাদের জাতি হিসেবে, লাল দাগ ফুটে উঠছে গায়ে। আমরা সব ধরে রাখতে , বেঁধে রাখতে গিয়ে গলদঘর্ম। ছোটোরা ত বটেই, মেজো সেজো বড়রাও ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

এইবার মহাকাল স্বয়ং উপস্থিত আমাদের সামনে আজ। সব বাঁধন কাটবেন , তাই দাঁড়িয়ে আছেন । ত্রিশূলের ডগার ঠান্ডা ইস্পাত টের পেয়ে আমরা আরো জোরে টেনে ধরছি।
তাতেই ত চামড়া উঠে গেল, যাহ!!!

এত্ত পুঁচকে রুপোর সুতোর রিলের দাম হয়ত ২০০ টাকা। প্রেমাস্পদকেই দিই এক কুচি নরম, দামি জিনিস। সেলাই বাক্সের বড়ো ওওও কাঁচিটা দিয়ে সেলাই শেষে কুচ করে কাটি শেষের দড়ির বাঁধন। আধ ঘন্টার চেষ্টায়, চোখে হাতে এক হয়ে রুপোর সুতো পরে রুপোলি ছুঁচ, কাঁচা হাতের বুনন অক্ষয়কবচের চেয়ে কম কিসে?
সঙ্গে আদর মেখে সমস্ত জিনিসপত্র ঃ হারিয়ে গেল যে যে, হারিয়ে যাবে যা ,একটু যত্ন, একটু শিল্প মেখে শুয়ে আছে, শুয়ে থাকবে। তারা পালাতে চাইবে না। হারাবেও না। গলায় বুকে কানে ঠিক থেকে যাবে।
আমরা, এই প্রজন্ম, যাই না তো, আমরা আসি। চলে না গেলে আসবো কোথা থেকে?
( লেখিকা, তাঁর সহোদর সর্বজিৎ মুখোপাধ্যায়-এর গলায়, লিঙ্কিং পার্কের ব্যাটল সিম্ফোনি এবং ব্ল্যাক কফির প্রতি কৃতজ্ঞ।ও হ্যাঁ সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী আবৃত্তি ও আছে। ) । তাই গভীর রাতে এমন শব্দেরা নেমে আসে।
( পুনশ্চ: বাঁধাকপি বিক্রেতাদের উদ্দেশে এটি লেখা নয়। সেই বন্ধনটি পাকস্থলীর পক্ষে অতি জরুরি। এবং সুপাচকের হাতে উপাদেয় ব্যঞ্জনও বটে। )
অলমিতি
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।