• Uncategorized
  • 0

‘কফি পাহাড়ের রাজা’ সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে তুষ্টি ভট্টাচার্য (পর্ব – ২ ।। খন্ড – ১৩)

কফি পাহাড়ের রাজা

দ্বিতীয় পর্ব:

১৩)
চিক্কা বীরারাজা ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে আছেন। তাঁর এতদিনের আশা ভরসা সমস্ত শেষ হয়ে যেতে বসেছে। যে রানীকে ভরসা করে মেয়েকে তাঁর হাতে সঁপে দিয়ে এসেছিলেন, ভেবেছিলেন ব্যাপ্টাইজড হলে বোধহয় সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। হয়েছিলও তো! নাহলে কি আর রানী গৌরাম্মাকে মেয়ে হিসেবে দত্তক নিতেন? ভিক্টোরিয়া গৌরাম্মা নাম নিয়ে, রানী ভিক্টোরিয়ার কন্যা হয়ে সমস্ত ভারতে তাঁর অর্থাৎ কিনা চিক্কা বীরারাজেন্দ্রর নামের মর্যাদার কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার হয়েছিল। বৃটিশ সেনার হাতে আত্মসমর্পণে তাঁর মর্যাদা যতটা ক্ষুণ্ণ হয়েছিল, মেয়ের গৌরবে তার কিছুটা হলেও উদ্ধার করতে পেরেছিলেন চিক্কা। তাঁকে এখানে সবাই রানী ভিক্টোরিয়ার আত্মীয় মানে, মর্যাদায় তিনি এখন বৃটিশ রাজপরিবারের সমগোত্র। এবারে যদি রানী ওই দলিপ সিঙের সঙ্গে গৌরাম্মা বিয়ে দিয়ে দেন, তাহলে আর মর্যাদার রইল কী! সেই তো ভারতীয় জামাই পেয়ে, ভারতীয় রূপেই সে দেশে ফিরে আসবে। মাঝখান থেকে গৌরাম্মার ক্রিশ্চিয়ান হওয়ার পর্বটা নেহাতই বেফালতু হয়ে যাবে। না! এ তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারবেন না। অবিলম্বে রানীকে খবর পাঠাতে হবে—এই বিয়েতে তাঁর সায় নেই। গৌরাম্মাও এই বিয়ে করতে আগ্রহী নয়। এ বিয়ে কিছুতেই হতে দেবেন না তিনি!
আজ চিক্কা বীরারাজেন্দ্রর বড় বেশি করে ডক্টর জেফারসনের কথা মনে পড়ছে। জাতিতে বৃটিশ হলেও জেফারসনের সঙ্গে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার সূত্রেই আলাপ। সেই আলাপ কীভাবে যে বন্ধুত্বে গড়িয়েছে ওরা বোঝেনি। একমাত্র বন্ধু বলতে সময়ে, অসময়ে, এই ডাক্তারকেই চিক্কাবীরারাজা কাছে পেয়েছেন। তাঁর বিলেতে মেয়েকে পড়াশুনো শেখানোর ইচ্ছের বাস্তব রূপ দিতে এই ডাক্তারই আপ্রাণ সাহায্য করেছেন। আজও মনে পড়ে তাঁর, যখন গৌরাম্মাকে নিয়ে বিলেতে গেলেন সেই সময়ে জেফারসন পইপই করে শিখিয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে। আইনি ব্যাপার নিয়ে যেন তিনি রানীকে ব্যতিব্যস্ত না করেন। গৌরাম্মার জন্য রানীর কাছে আবেদন করে তিনি যেন স্থির হয়ে অপেক্ষা করেন। ডাক পড়বেই একদিন। কারণ সেই সময়ে লর্ড ডালহৌসিও চাইছিলেন গৌরাম্মা যেন ক্রিশ্চিয়ান হয়ে রানীর কাছে পালিত হয়। এতে অবশ্যই রাজনৈতিক স্বার্থ আছে তাঁদের। চিক্কাবীরারাজার আত্মসমর্পনের পরে পুরো দেশবাসী বৃটিশদের ওপর বিদ্বেষমূলক ধারণা পোষণ করছে। তাদের ধারণা জন্মেছে, বৃটিশরা তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, তারা শোষণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এই বিরূপ ধারণা দূর করতে, বৃটিশরা কিছু প্রতিবর্ত প্রক্রিয়ার খোঁজ করছিল। বৃটিশরা শাসক বটে, কিন্তু পালকও বটে—এই রকম আবহ তৈরি করতে চাইছিল ওরা। আর গৌরাম্মাকে সাদরে রানীর গৃহে, রানীর মেয়ে হিসেবে পালিত হতে দেখলে এবং গৌরাম্মার মুখ থেকে রানী ও বৃটিশদের সম্বন্ধে প্রশংসা শুনলে তাদের কাটা ঘায়ে মলম লাগানোর মতো উপশম হবে কিছুটা। আর এই জন্যই চিক্কাবীরারাজার মনোবাসনা খুব সহজেই পূর্ণ হয়েছিল।
ঘরে ফিরে কুপিল্লা দেখেছিল শূন্য ঘর পড়ে আছে। এতটাই ধাক্কা লেগেছিল তার যে, সে সবরকম অনুভূতি হারিয়ে এক গভীর হতাশায় তলিয়ে গেছিল। কাজে যায়নি বেশ কয়েকদিন, খিদে তেষ্টাও জাগেনি। দরজা যে খোলা পড়ে আছে, সে বোধও তার ছিল না। কয়েকদিন নাকি কয়েকযুগ বাদে ম্যাথিউজ এসে ডাকল ওকে। শূন্য দৃষ্টিতে ম্যাথিউজের দিকে তাকিয়ে রইল কুপিল্লা। ওর হাজারটা প্রশ্নের জবাবে বিরক্ত হয়েই কিছুটা জানাতে বাধ্য হল। ম্যাথিউজ সঙ্গে সঙ্গে ওকে নিয়ে ওর গ্রামের দিকে রওনা হল। যেতে যেতে কুপিল্লা ভাবছিল, এই ম্যাথিউজের জন্যই তার সংসার ভাঙল, আবার এর সঙ্গেই সে চলেছে। রাগও হচ্ছে না অবশ্য ওর ওপর। বিরক্তি, বিতৃষ্ণা, কিছুই জাগছে না। আচ্ছা, ম্যাথিউজ কি খুব খারাপ লোক? নিজেকে প্রশ্ন করে উত্তর পেল না কিছু। আচ্ছা, ও কি সত্যি সত্যিই বিদ্যার সঙ্গে গোপনে গোপনে আশনাই চালাচ্ছিল? নাহ! সেরকম কোনও প্রমাণ তার কাছে নেই যদিও। তাহলে কেন এমন করল ও? স্রেফ সন্দেহের বশে? অধিকারের বশে? নাকি অতিরিক্ত ভালবাসায় মানুষ এমন স্বার্থপর হয়ে পড়ে? ভালবাসার জনকে একটা খোলসে মুড়ে রেখে দিতে ইচ্ছে করে? যাকে সে নিজে ছাড়া কেউ দেখবে না, কেউ জানবে না…অথচ যাকে ভালবাসছে, পাগলের মতো ভালবাসছে, তার দিকটা ভেবে দেখেওবে না? আচমকাই হাউহাউ করে কেঁদে উঠল কুপিল্লা। আশেপাশের লোকেরা চমকে তাকাল। ম্যাথিউজ ওকে কীভাবে সান্ত্বনা দেবে ভেবে উঠতে পারছিল না। অবশেষে বিদ্যার ঘরের কাছে ওকে পৌঁছে ম্যাথিউজ বিদায় নিল।
দলিপ সেদিনের পার্টিতে গৌরাম্মার আচরণে কষ্ট পেলেও মুখে কিছু বলেনি গৌরাম্মাকে। এমনকি ওর সঙ্গে দেখা করতেও চায়নি। অভিমানে স্তব্ধ হয়ে বসেছিল। তার প্রিয় গৌরাম্মা কীভাবে ওর সঙ্গে এমন অপরিচিতের মতো আচরণ করল? আর তারই প্রিয় বন্ধু, ক্যাম্পবেল, তারই বুকে ছুরি মারতে দ্বিধা করল না? সে তো জানত যে, গৌরাম্মাকে দলিপ ভালবাসে পাগলের মতো। দুজনের বিয়ে হবে, এইরকম প্রায় স্থির হয়ে আছে। এমনকি রানীও সম্মত আছেন এই বিয়েতে। তাহলে ক্যাম্পবেল কী করে পারল তার গৌরাম্মাকে ওর বুক থেকে ছিনিয়ে নিতে? কানাঘুষোয় শুনছে ও—ওরা নাকি আবারও মিলিত হয়েছে কর্নেল ক্যাম্পবেলের বাড়িতে। রানী অনুমতি দিলেন কী করে? যিনি স্বয়ং দলিপকে কথা দিয়েছেন গৌরাম্মাকে ওর হাতেই তুলে দেবেন, তিনি কীভাবে অনুমতি দিলেন? ক্যাম্পবেলের সঙ্গে আলাদা ভাবে দেখা করতে গৌরাম্মাকে নিষেধ করলেন না কেন উনি? এই সব সাতপাঁচ ভাবনা মাথায় নিয়ে গুম মেরে রইল দলিপ। সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল রানীর ওপর। নিশ্চই রানীর প্রশ্রয়ে এইসব ঘটনা ঘটছে। রানী জানেন না, এমনটা হতেই পারে না। লগইনকে দলিপ অভিভাবক রূপে পেয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সেই মিশনারি ফাদারের উদ্দেশ্যই ছিল দলিপকে ক্রিশ্চিয়ান করানো। মাঝখান থেকে ওই ভজনলাল ইন্ধন জুগিয়েছিল। দলিপ কি এখন বোঝে না যে, ভিক্টর দলিপ সিং নাম দেওয়ার আড়ালে ওরা কতগুলো ঘুঁটি একসঙ্গে সাজিয়ে ফেলেছিল! খুব বোঝে সে। এই সমস্তই রানীর বুদ্ধিতে এগিয়েছে। পাঞ্জাবের শেষ রাজা আর কোরাবার শেষ রাজকন্যাকে ক্রিশ্চিয়ান ধর্মে দীক্ষিত করলে, পুরো ভারতবাসীর কাছে বৃটিশরা তাদের ধর্মের জোর দেখাতে পারবে। দুই রাজ্যের নাগরিকদের সহজেই ধর্ম বদলের জন্য প্ররোচিত করবে এবার ওরা। উপরন্তু তার আর গৌরাম্মার বিয়ে দিয়ে দুই রাজ্যকে সহজেই কুক্ষিগত করতে পারবে ওরা। গৌরাম্মাকে সে ভালবাসে ঠিকই। কিন্তু তার অদেখা দেশ, ভুলে যাওয়া মায়ের মুখকে এই রাজনীতির চক্রান্তে পড়ে অবহেলা করবে না আর। এতদিন সে ছোট ছিল, কারারুদ্ধ ছিল, কিছুই করার ছিল না তার। কিন্তু আর নয়! তাকে দেশে ফিরতেই হবে। ফেলে দেবে এই ক্রিশ্চিয়ান ধর্মের তকমা। সে শিখ ছিল, জাঠ রক্ত তার শরীরে। আবার শিখ হয়ে প্রায়শ্চিত্ত করবে সে। রাগে, উত্তেজনায়, গৌরাম্মাকে হারানোর দুঃখে তার মাথার শিরা ছিঁড়ে যাবে মনে হচ্ছিল। আজ আর ঘুম আসবে না ওর। রানীর বিরুদ্ধাচার করবে সে এবার প্রকাশ্যেই।
রানীর কানেও পৌঁছেছে খবর। স্তম্ভিত, হতবুদ্ধি রানী ভাবতেই পারছেন না যে, গৌরাম্মা এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে। আর তাও তাঁর বিনা অনুমতিতে! রাগে আকাশপাতাল চৌচির করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে তাঁর। তাঁর নাক, কান কাটা যাচ্ছে লজ্জায়। তাঁরই মেয়ে কিনা একজন কর্নেলের সঙ্গে গোপনে মিলিত হচ্ছে। যেখানে সেই মেয়ের অন্যত্র বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এত বড় সাহস হয়েছে ওর! তাঁর ভালোবাসার এই মর্যাদা দিল মেয়ে! চোখে জল এসে গেছিল প্রায় তাঁর। নিজেকে সংবরণ করলে অনেক কষ্টে। সাধারণ মেয়ের মতো রাগ, ক্ষোভ উগড়ে দেওয়া কি তাঁকে মানায়? ডেকে পাঠালেন গৌরাম্মাকে। গৌরাম্মাও এই ডাকের অপেক্ষায় ছিল। সঙ্গে সঙ্গে এসে উপস্থিত হল রানীর সামনে। যদিও যত সাহস সঞ্চয় করে সে এসেছিল ততটা মনের জোর এখন আর পাচ্ছে না ও। ভয় করছে খুব। রানীর আদেশ পালন না করলে কী হতে পারে, সে তার জানা আছে কিছুটা। হয়ত এই জগত থেকে তাকে উধাও করে দেওয়া হবে। হয়ত, হয়ত…জানে না গৌরাম্মা। এর পরিণতি সম্বন্ধে না জেনে বুঝেই সে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। হটকারিতা তো নিশ্চই। এখন মনে হচ্ছে ওই ক্যাম্পবেলকে সে কতটুকুই বা চেনে? তার দ্বিগুণ বয়সী একটা লোককে সে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে তো বাস্তবে? কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। হাতের তির আর মুখের কথা বেরিয়ে গেলে ফিরিয়ে আনা যায় না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল সে রানীর সামনে। ভ্রূকুঞ্চিত হয়ে আছে তাঁর। মুখ থমথমে। এই বুঝি ফেটে পড়বেন! বুকের ভেতরে দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে গৌরাম্মার। কিছুক্ষণ বাদে নিস্তব্ধতা ভেঙে রানী মুখ খুললেন। ‘কী চাও তুমি? কী চাও, সেটা আমাকে পরিষ্কার জানালেই পারতে। এভাবে লোক না হাসিয়ে, আমার মান মর্যাদার কথা একবারও খেয়াল করলে না? নিজের সম্মানের কথাও ভাবলে না?’ গৌরাম্মা কিছু বলতে পারল না উত্তরে। তার চোখ ফেটে জল এলো হুহু করে। এই প্রথমবার রানীকে অতটা নিষ্ঠুর, ক্রুর মনে হচ্ছে না তার। মানবিক একজন নারী, মায়ের মতো, নরম মানুষের মতোই লাগছে তাঁকে। গৌরাম্মা পা ছুঁয়ে ক্ষমা চাইল রানীর। বারবার ক্ষমা চাইল। কান্নায় ভেঙে পড়ে জানালো—দলিপকে আমি বিয়ে করতে পারব না। প্রথমত ও আমার থেকে বয়সে ছোট। দ্বিতীয়ত একজন নেটিভকে বিয়ে করতে আমি চাই না। আমার পিতামহারাজ আমাকে আপনার কাছে গচ্ছিত করে গেছিলেন আমাকে অ্যাংলো কালচারে দীক্ষিত করবেন বলে। আপনি আমাকে সাদরে ঠাঁই দিয়েছেন, নিজের মেয়ের স্থান দিয়েছেন, আমি মনে প্রাণে এখন বৃটিশ কালচারে বিশ্বাস করি, আস্থা রাখি। সেখানে একজন নেটিভকে আমি বিয়ে করতে পারব না কিছুতেই’।
রানী জড়িয়ে ধরলেন গৌরাম্মাকে। আদর করলেন ওকে। বললেন, ‘এখন তুমি স্থির হও। শান্ত হয়ে বস। দলিপকে আমি কথা দিয়েছি। সেই কথা নড়চড় হোক সেও আমি যেমন চাই না, তেমনি তোমার ইচ্ছেকে, সে আমার যত অপছন্দই হোক, অমান্য করতে পারি না। তুমি এখন এসো। আমি ভেবে দেখি, কী করা যায়…’
গৌরাম্মা চলে যাওয়ার পরেই দূত মারফৎ চিক্কাবীরারাজেন্দ্রর পত্র এলো। সেখানে তিনি লিখেছেন, গৌরাম্মার দলিপের সঙ্গে বিবাহে তিনি সম্মত নন। বরং ক্ষুব্ধ, দুঃখিত আর ব্যথিত হয়ে আছেন রানীর এই সিদ্ধান্তে। আশা করি, রানী তাঁর মত পরিবর্তন করবেন, ইত্যাদি…’। রানী ভাবছেন। তাঁর কথার অমর্যাদা যাতে না হয়, এদিকে দলিপকে আহত করাও চলবে না কিছুতেই। কী উপায় আছে যাতে এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হতে পারে! উপায় কে বলে দেবে তাঁকে? নিজের স্বামী অ্যালবার্টের কথাই মাথায় এলো সেই মুহূর্তে। এমন ভরসাযোগ্য মানুষ তিনি এ জীবনে আর পাননি। আজই তাঁর সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সেই ষোলো বছর বয়সে দেখা হয় অ্যালবার্টের সঙ্গে। সেই থেকে তিনিই তাঁর মুশকিল আসান। প্রিয়তম অ্যালবার্টের অপেক্ষা করতে করতে রানী ডুবে গেলেন গভীর ভাবনায়। সাপও মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না—এমন কোন উপায় চাই তাঁর আজ। গৌরাম্মাকে চটানো চলবে না, তাঁর ইচ্ছের বিরোধিতা করতে তিনি পারেন সহজেই। জোর করে ওদের বিয়ে দেওয়া কোন কঠিন কাজ না তাঁর কাছে। কিন্তু তাতে তাঁর স্নেহপ্রবণ, মাতৃরূপী ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এদিকে দলিপকে কীভাবে বোঝাবেন তিনি…কিছুই মাথায় আসছিল না। চিন্তামগ্ন প্রৌঢ়া এক নারী, তখনও জানতে পারেননি যে দলিপ ইতিমধ্যে ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। যে প্রিয়তম স্বামীর অপেক্ষায় তিনি রয়েছেন, সেই অ্যালবার্ট তখন তাঁদের অষ্টম সন্তান লিওপোল্ডের মহিলা ঘটিত কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে খুবই বিচলিত হয়ে আছেন।
বিদ্যা কিছু বলল না কুপিল্লাকে। স্নানের গামছা এনে দিল, ভাত বেড়ে দিল যত্ন করে। আজ কতদিন বাদে হাঘরের মতো খেল কুপিল্লা। এত খেয়েছে কি ও কোনদিন? খাওয়ার পরে অঘোরে ঘুমিয়ে পড়ল কুপিল্লা শিশুর মতো। বিদ্যা আর পারল না। কুপিল্লার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে হুহু করে কেঁদে উঠল। আজ কতদিন বাদে বুঝি ওর বুক হাল্কা হল। পাথর গলে যাওয়া সেই কান্নায় ক্ষমা আর ভালবাসা মিলেমিশে ওদের দুজনকেই বুঝি পৌঁছে দিল এক অন্য জগতে। রোদ পড়ে এলে বিদ্যা কুপিল্লাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিল চুল টেনে। আর ওর কানে কানে ফিসফিস করে বলল, ‘আমরা আর শহরে যাব না। এখানেই থাকব’।

ক্রমশ….

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।