গুচ্ছকবিতায় প্রভাত মণ্ডল
১. কে ডাকে
অন্ধকার হতে আলোর পথে এলে
বহুদিন হলো , ওই যে
পথটা তুমি পেরিয়ে এসেছো
ওখানে তুমি পথিক’ই ছিলে
আজও সেই পথিক’ই আছো ।
তবুও মানতে চাও না
বড্ড বোকা তুমি হে মন !
ওই রাঙা পলাশ যেদিন কুড়িয়েছিলে
আর বলেছিলে , পলাশ !
আমি তোমাকছ কুড়ালাম ।
পলাশও বলেছিলো , বোকা !
তুমি আমাকে কি কুড়াবে !
আমি তো আপনি হতে দিয়েছি
ধরা তোমার কাছে
নতুবা তোমার কি সাধ্যি আছে !
আজ সময় অনেক হলো , ক্লান্ত এ পথ চলা
বয়স আমাকে ধরে
নাকি আমি বয়সকে ধরি !
তবু পথ তো কমেছে !
আজ বয়স রূপী সীমান্তটা ধরা দিতে চায়
রাঙা পলাশের মাঝে ,
অস্তরাগের লাল সূর্যটাও
নদীর বুকে লাল পলাশের ছায়া ফেলে যায় ।
বুঝিয়ে দেয় সন্ধ্যা সমাগত
আঁধার নামছে তুমি তৈরি হও !
লাঠি হাতে কাঁপতে থাকা তোমার পদযুগল
বৃদ্ধাশ্রমের দিকে অগ্ৰসর হতে চায় ।
তখন মন বলে আমি আত্মহননকে ডাকছি
আত্মহনন বলে , মন কই !
আমি ডাকছি বলেই তো তুমি আসছ ।
২. আঁধো চাঁদ
আঁধো চাঁদ গোঁধূলিতে
পশ্চিমি সিঁথি পানে ,
সাতরঙা রামধনু
শুধু মোর আঁখি টানে ।
বেণুবনে শিরে তুমি
চঞ্চলা হাসি মুখে ,
চপলা হরিণী তুমি
বেলা শেষে মহা সুখে ।
দুধসাদা বক ওই
পাখা মেলি তোমা দ্বারে ,
ভাবাবেশে সারি বেঁধে
মহাসুখে ফেরে ঘরে ।
জোনাকি মেলিয়া পাখা
আঁধারে ঘুরিতে চায় ,
শেষ হল রবি তেজ
মধ্যাহ্নের ধূপছায় ।
আঁধোমুখ তুলিয়াছো
হাসিভরা মধু লাজে ,
চরণে আলতা পরে
সাজিছ নববধূ সাজে ।
৩. হে প্রেয়সী
হে প্রেয়সী কোথা তুমি আজি এ প্রভাত বেলা
মোর আঁখি হতে দূরে গেলে ক্ষণে ,
তুমি বিনা আমি নাই এ ভরা জগৎ মাঝে
মোর আঁখি সুধা নামিল শ্রাবণে ।
কোথা তব এলোকেশ দ্যুতিময় মুখরেখা
দেখি চক্ষু মুদিলে তব ছবি ,
আঁধো আলো আঁধো ছায়া দিগন্ত নীলিমা জুড়ে
ধিকি ধিকি জ্বলে বুঝি রবি ।
গিরি শৃঙ্গ করি পার ও রাঙা বদন খানি
দেখা দাও ভেদি ইন্দ্রজাল ,
সমুদ্র বক্ষ মাঝে ঘুচায়ে সমগ্ৰ লাজে
ভরি দাও লাজে রাঙা লাল ।
ওগো মোর প্রাণ সখা তুমি হে দাওগো দেখা
গাঁথিয়াছি সাজায়ে নানা ফুল ,
পরাইবো তোমা গলে চুম্বিয়া ণত শিরে
আজি মোর মন আহ্লাদে আকুল ।
ঘুচিল লাবণ্য নিশি ভোলো অভিমান যত
হাসিমুখে ভাঙো সব লাজ ,
দেখাও ও শুভ্র কায়া পুঞ্জিত কণক রাশি
দিগন্তর ব্যেপে তব সাজ ।
৪. পথের বাঁক
ব্যথায় ব্যথায় ঘর ভরেছে
নিত্য সুধা পাই যে কোথা
ব্যথার বাঁশি বাঁধ ভেঙেছে
তোমার সুরের বাঁধন যেথা ,
পরাণ বীণার তার ছুড়েছে
তোমার পরাণ গাঁথা হেথা ।
অরুণ আলোয় ঊষার হাসি
অভিমানী পালায় শশি ,
তোমার মুখের মিষ্টি হাসি
সুরের বাঁধন বাঁধে ।
জীবন হাটে্য ভবের মেলায়
নাউয়ের মাঝি গান গেয়ে যায় ,
মোর জীবন সুধা তোমারই তরে
ফুলের মালা গাঁথে ।
মোর জীবন খাতার রঙ-তুলি
শুধু তোমারই ছবি আঁকে ,
ওই জীবন পথের বাঁকে
মোর স্বপন ভবের হাটে ।