• Uncategorized
  • 0

কবিতায় মীনাক্ষী রায়

নিরুদ্দেশের কথা

সেদিন শুক্ল রাতের শেষে
জোত্স্না রংয়ে রাংগিয়ে মেঘের সাগর
চাঁদ ভেসে যায় নিরুদ্দেশের পথে।
একটু বুঝি দরজা ছিল খোলা
ভরিয়ে রাতের শব্দবিহীন কায়া
হয়তো কোন রাতের পাখি উড়াল দিল
দিগন্তরের পানে।।
জোত্স্না মাখা বাতাস
উড়িয়ে তার এলোমেলো আঁচল
ভিজিয়ে সে’খান রাতের ফুলের গন্ধে
চাঁদের পানে হাত বাড়াল বুঝি,
সেও যেতে চায় নিরুদ্দেশের পথে।।
মনের ভিতর জোত্স্না রংয়ের তুফান ওঠে দুলি
দুহাত আমার আকাশ পানে তুলি
চাঁদকে বলি ডেকে,
“যদি পারি যেতে তোমার সাথে, নিরুদ্দেশের পথে”।
চাঁদ বুঝিবা থমকে দাঁড়ায় খানিক,
“সত্যি যদি সঙ্গী হতে চাস, থামতে পারি
দণ্ড দুয়ের জন্য ।
জানিস বোধহয়,
নিরুদ্দেশের ঠিকানা নেই কোনো,
কোথায় গিয়ে করব তরী নোংগর
প্রশ্ন অবান্তর “।
“প্রশ্ন নেইকো কোনো,
মন বেঁধেছি, যাবই যাব জেনো।”
এই না বলে ছোট্ট ঝোলাখানা
ঝুলিয়ে কাঁধের পরে
পা বাড়ালাম রওনা হব বলে।
“ঝোলায় কি তোর?
মুচকি হাসে চাঁদ …
“বিশেষ কিছুই নয়, জিনিস টুকিটাকি,
এই যেমন ধরো এক্কেবারে সাবেকি ফোনখানি
আপনজনের কেউ যদিবা প্রয়োজনে পড়ে
‘কথা আছে’ বলে খবর করে।”
ঘরের থেকে সিঁড়ির দিকে যেই বাড়ালাম পা
দেখি আলুথালু লেপ কম্বল, ঠান্ডা মেঝের উপর
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে আমার বুড়ো কুকুর।
“ঠান্ডা লাগবে ওরে” , এই না বলে
আলতো হাতে বুলিয়ে মাথায় হাত
গায়ের উপর কম্বল দিই টেনে,
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলি,
“হাঁটতে গিয়ে ছুটো নাকো মোটে, লক্ষী সোনা ছেলে।”
মুচকি হাসে চাঁদ
“আর কতক্ষণ? শেষ হয় যে রাত “।
দশটি খানি সিঁড়ি গুনে গুনে
যেই নেমেছি শেষ সিঁড়িটির ধাপে
মনে হল, ” ছেলে আমার অবুঝ বড়
দুচার কথা বুঝিয়ে আসি তাকে”।
ফিরে গিয়ে আবার সিঁড়ি গুনে
ছেলের সাথে সবে যখন কথা হল শেষ,
চোখের পাতা একটু এল ভিজে,
“সেই যে আমার মোমের পুতুল মেয়ে,
শক্ত হবার পাঠ যদি না শিখিয়ে আসি তাকে
তল পাবে কি অকূল সাগর মাঝে!”।
মুচকি হাসে চাঁদ
“আর কতক্ষণ? শেষ হয় যে রাত ।”
ক্লান্ত দিনের শেষে,
আমার রোজনামচা ভালোবাসা ফেরে যখন ঘরে
কাজ-অকাজের দু’চার গাছি কথা
আর যদি না বলতে পারি সেসব?
প্রবল জলোচ্ছ্বাসে, ভিজে এল বন্ধ
চোখের পাতা।
মুচকি হাসে চাঁদ
“আর কতক্ষণ? শেষ হয় যে রাত!”
সপাট জোরে দরজা দিলাম খুলে
“যাবই এবার …
কথায় কথায় মন যেন না গলে
এই দেখ চাঁদ, আগল দিলাম তুলে ”
দু’পা হল সামনে গেছি মোটে
হঠাত্ মনে হল,
“এমন ঘন সুবাস! আমার দোলন চাঁপায়
ফুল ফুটল তবে?”
দৌড়ে খুলি খেজুর পাতার আগড়
দেখি শুভ্র চাঁদের আলোয়
আমার সাধের দোলন চাঁপা
গন্ধ সুধায় মাতিয়ে ভোরের হাওয়া
আকাশ পানে চেয়ে আছে,
আল্হাদী তার চাওয়া ।
ইচ্ছে হল দুহাতে তার মুখটি তুলে ধরে
ছোট্ট চুমোয় দিই না কেন ভরে।
মুচকি হাসে চাঁদ
“আর কতক্ষণ? শেষ হয় যে রাত ”
কাঁধের ঝোলা গুছিয়ে নিলেম আবার
মনের আগল আবার দিলেম তুলে
“যাবই এবার” , চাঁদকে বলি ডেকে
“হাত বাড়িয়ে ধরো আমার হাত”
শব্দ করে খুলল লোহার তালা,
একটি হাতে যেই ধরেছি চাঁদের অন্য হাত
বিনা কথায় উঠল দুলে একটি দুটি
শিশু নিমের শাখা।
মনের ভিতর আবার বাদল, বাষ্প, জলোচ্ছ্বাস
“সময় হবে? যাবার আগে বলতাম নয়
মায়ের সাথে একটি দুটি কথা ।”
চাঁদ বুঝিবা পেল কিছু মন খারাপের আভাস,
হাত ছাড়িয়ে বললে হেসে,
“এই যে এত অযুত নিযুত দিনযাপনের চিন্হ
শক্ত খুবই , এসব ছেড়ে নিরুদ্দেশে যাওয়া,
আসব আবার যেদিন সকল বাঁধন হবে ছিন্ন”।
উড়িয়ে তার জোত্স্না রংয়ের ঝালর
শুক্ল রাতের শেষে,
চাঁদ ভেসে যায় নিরুদ্দেশের পথে ।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।