• Uncategorized
  • 0

কবিতা বিষয়ক গদ্যে দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

কবি দেবাশিস মুখোপাধ্যায় এর জন্ম কুলটিতে এবং বর্তমান তিনি হাওড়ার বাগনানে বাস করেন । তার কবি জীবন শিশুকাল থেকে । কলকাতার ইন্দ্রাণী পত্রিকায় যখন কবিতা প্রকাশ হয় তখন কবি দশম শ্রেণি 1983. এরপর প্রথম কবিতার বই 1997ক" কবিতার একখন্ড মুখ" । এরপর কর্মসূত্রে বাগনানে এবং দ্বিতীয় কবিতার বই "আজকাল পরশুর গল্প ", এরপর এখন বাংলা কবিতার কাগজ প্রকাশ করে " শূন্য কিন্তু শূন্য নয় " , পত্রলেখা থেকে " ভূমিকা প্রেমের কবিতার " , কবিতা ক্যাম্পাস থেকে " বিষন্ন রেখার পারে " এবং সুতরাং থেকে " ভেনাস বিউটি পার্লার " এবং নতুন পাতার গন্ধ " । কবি কবিতায় বাঁচতে চান।

কবিতার ছাইপাঁশ

কবিতা বিষয়টা খুব সহজ নয় সেটা স্পষ্ট বলতে পারি। প্রত্যেক দেশে যুগে যুগে কবিতার অর্থ নানা।  তাই কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডীতে কবিতাকে বাঁধতে আমি রাজী নই। তবে আজকে যে যা লিখছে তাকে কবিতা বলতে আমি রাজি নই।
কবিতা বুঝতে গেলে একটা নিরন্তর চর্চা, ছন্দ জ্ঞান জরুরি। ভাব এলো আর ওমনি কিছু লাইন
লিখে ফেললাম এবং বাজারে বললাম আমি কবি। একথা শুনে রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ কাঁদবেন। বুদ্ধদেব বসু আধুনিক কবিতা বলতে ব্যাখ্যা করেছিলেন, “… এই আধুনিক কবিতা এমন কোনো পদার্থ নয় যাকে কোনো একটা চিহ্ন দ্বারা
অবিকলভাবে সনাক্ত করা যায়। একে বলা যেতে
পারে বিদ্রোহের, প্রতিবাদের কবিতা, সংশয়ের, ক্লান্তির, সন্ধানের ,  আবার এই এরই মধ্যে প্রকাশ
পেয়েছে বিস্ময়ের জাগরণ, জীবনের আনন্দ, বিশ্ব বিধানে আস্থাবান চিত্তবৃত্তি। আশা আর নৈরাশ্য, অন্তর্মুখিতা বা বহির্মুখিতা, সামাজিক জীবনের সংগ্রাম আর আত্মিক জীবনের তৃষ্ণা, এই সবগুলো ধারাই খুঁজে পাওয়া যাবে শুধু ভিন্ন ভিন্ন কবিতে নয়, কখনো হয়তো বিভিন্ন সময়ে একই
কবির রচনায়। ”
কবিতা চর্চা জরুরি বিশেষ করে যারা নতুন বাংলা কবিতায় এসেছেন। কবি ঈশ্বর গুপ্ত হয়তো তিনি পড়েন নি কিম্বা ছোট বেলায় অক্ষয় বড়াল পড়েছেন আজ তাদের অনুকরণে কবিতা নির্মাণ
হাস্যকর হয়ে উঠবে আবার তা যদি ভুল ছন্দে হয়। জয় বা মৃদুল না পড়ে কেউ যদি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে কবি হবার কথা সদম্ভে প্রকাশ করে সেটা
হবে চরম লজ্জার। অক্ষরবৃত্ত এ ঈশ্বর গুপ্ত নির্মাণ করেছেন: –
বন হতে এলো এক টিয়ে  মনোহর
সোনার টোপর শোভে মাথার উপর। ৮+৬
(এটিকে পয়ার বা দ্বিপদী বলে)
মধুসূদনও পয়ার লিখলেন কিন্তু অন্তমিল দিলেন না। সৃষ্টি হল অমিত্রাক্ষর ছন্দ: –
কৌটা খুলি রক্ষোবধূ যত্নে দিল ফোঁটা।
সীমন্তে সিন্দুর বিন্দু শোভিত ললাটে।। ৮+৬
গোধূলি ললাটে আহা তারা রত্ন যথা।
ফোঁটা দিয়া পদধূলি লইল সরমা।। ৮+৬
অক্ষয় বড়াল লিখেছেন অক্ষরবৃত্তে: –
নিঝুম মধ্যাহ্ন কাল  অলস স্বপন-জাল ৮+৮
রচিতেছে অন্যমনে হৃদয় ভরিয়া। ৮+৬
দূর মাঠ পানে চেয়ে  চেয়ে চেয়ে শুধু চেয়ে ৮+৮
রয়েছি পড়িয়া। +৬
কিন্তু এভাবে আজকের কবি লিখবেন না। অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লিখবেন আধুনিক শব্দ প্রয়োগ
করে: –
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন
আমারে দুদন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন। ৮+৮+৬ ( জীবনানন্দ)
অক্ষরবৃত্ত পরে আরো পরিবর্তিত গদ্য কবিতা হয়ে দেখা দিল কবির কবিতায়।
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এরকম আতরের গন্ধ হবে।
( সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
অক্ষর বৃত্তের সঙ্গে পরিচিত হলেই যে কবিতা লেখা সম্ভব তা নয়। শব্দ চয়ন, অক্ষর, ভাব,
প্রকাশ ভঙ্গির নিজস্বতা দরকার। আমার কবিতা যেন আমার হয়ে ওঠে, পাঠক দেখলেই চিনতে পারে। কবিতা পড়তে হবে। এর জন্য ডিগ্রীধারী
হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনিও লিখতে পারবেন একটি ভালো কবিতা।
যে লেখে সে কিছু বোঝে না
যে বোঝে সে কিছুই লেখে না
দুজনের দেখা হয় মাঝে মাঝে ছাদের কিনারে
ঝাঁপ দেবে কি না ভাবে অর্থহীনতার পরপারে।
(বোধ / শঙ্খ ঘোষ) 
(ক্রমশ) 
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।