• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ১৭)

সতেরো

প্রথমে খুব ঘাবড়ে গেছিলাম। কয়েক সেকেন্ড পর টনক নড়ল। গলাটা যেন চেনা মনে হচ্ছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি, আরে এতো শ্রেয়ান।
পিঠে একটা চাপড় মেরে পেছনের সিটে বসে পড়লাম। জিজ্ঞাসা করলাম “তুই কি করে জানলি আমি এখানে আসবো?” “তুমি তো বেরোনোর আগে বলে গেলে যে ব্যাংকের স্পটটা দেখতে হবে।” শ্রেয়ান উত্তর দিল। ও আরও বলল, “মুকুন্দপুর গেছিলাম বাইকের কিছু কাজ করাতে। ফেরার সময় একটা ব্লাইন্ড চান্স নিলাম, যদি তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়”।
আমি শ্রেয়ানের কাঁধের উপর দিয়ে উঁচু হয়ে পেট্রোল ট্যাংকটা দেখে নিয়ে বললাম, “যাঃ বাবা, তুই ওই রং চটানো লেখাটার ওপর হলুদ রঙ করিয়ে এনেছিস? ছিটিয়াল নাকি তুই?”শ্রেয়ান তাচ্ছিল্লের হাসি হেসে বলল, “কোনো জার্মান এসেই আমাকে দমাতে পারবে না। নট ইভেন হিটলার। নেট থেকে দেখে আর কটা জার্মান শব্দ ঝেড়ে বাইকে অটোগ্রাফিক্স করিয়ে এলাম”। আমি বললাম, “সেটা আবার কি?”শ্রেয়ান ডানদিকের গেঞ্জির হাতা উঠিয়ে ট্যাটুটা দেখিয়ে বলল, “মানুষের ক্ষেত্রে যা ট্যাটু, বাইক বা গাড়ির ক্ষেত্রে তা
অটোগ্রাফিক্স”। আমি বললাম, “সে তো স্টিকার মারে “। শ্রেয়ান বলল, “আমার তো সেই অপশন ছিল না। তাই এই ইনোভেশন। বিভিন্ন জায়গায় রঙ চটিয়ে জার্মান শব্দ লিখেছি আর তাতে হলুদ রঙ দিয়ে ভড়িয়েছি”। আমি ডানদিকের একটা শোরুমের কাচের দরজায় শ্রেয়ানের বাইকের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম। বেশ লাগছে কিন্তু। কালোর ওপর হলুদ ডিসাইনটা বেশ মানিয়েছে। বেশ একটা স্পোর্টিং লুক এসেছে। হঠাৎ শ্রেয়ান বলল, “দেখ তো অর্কদা, পেছনের বাইক টা আমাদের ফলো করছে কিনা! সেই অজয়নগর থেকে আমার পেছন পেছন আসছে”। আমি বললাম, “স্পিড বাড়া দেখি”। শ্রেয়ান কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে একশোর ওপর স্পিড তুলে দিল। দেখি পেছনের বাইকে ও স্পিড বাড়ালো। বাইকটাতে দুটো লোক বসে আছে। পেছনের লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। সামনের লোকটার বেশ হিরোর মতোই চেহারা। বাইকটা হল একটা বুলেট যা আমাদের বাইকের থেকে সমান দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। শ্রেয়ান আরও স্পিড বাড়ালো। একবার উইলিও করলো। ওর কাছ থেকেই জেনেছি বাইকের সামনের চাকা উঠিয়ে শুন্যে তুলে শুধু পেছনের চাকায় বাইক চালালে তাকে উইলি বলে। আমি ঘাবড়ে গিয়ে শ্রেয়ানকে আঁকড়ে ধরলাম। যদি পেছনে উল্টে পরে যাই? স্পিড এতটাই বাড়িয়ে ফেলল শ্রেয়ান যে একটা গর্তে পেছনের চাকা পড়তেই আর সামলাতে পারলো না। বাইক পড়লো সঙ্গে আমরাও। খুব সাংঘাতিক কারোর লাগেনি। তবে শ্রেয়ানের হাতটা বেশ কিছুটা ছড়ে গেছে। আমার বুকের ডানদিকের রিবকেজটায় লেগেছে রাস্তার ডিভাইডারের ওপর
পড়ে।
মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিলাম। বুকে লাগছে রাস্তায় কাছাকাছি যারা ছিল তারা ছুটে এসে বাইকটা টেনে তুললো। আমরা তো নিজেরাই উঠে পড়েছি। এদিকে পেছনে ধাওয়া করা বাইকটাও ততক্ষনে এসে দাঁড়িয়েছে। বাইকের পেছনের সিট্ এ বসা লোকটা নেমে এলো। এবার চিনতে পারলাম, এই লোকটাই সকালে শ্রেয়ান এর বাইকটা ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। লোকটি আমাকে বলল, “লাগেনিতো স্যার? এতো জোরে কেউ বাইক চালায়? আমি কখন থেকে ডাকছি।” শ্রেয়ানের বাইককে দেখিয়ে বলল, “আসলে ওই বাইকটার সিটের নিচে আমার একটা হ্যান্ড ব্যাগ রেখেছিলাম। সকালে নিতে ভুলে গেছি। ওই ব্যাগ টা নেওয়ার জন্য আপনাদের পেছন পেছন আসছিলাম”। আমি আর শ্রেয়ান নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম।

ক্রমশ… 

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।