কসবা পুলিশ স্টেশনের সামনের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি। এখন বাজে রাত পৌনে সাতটা। শ্রেয়ান আমাকে বিকেল পাঁচটায় এখানে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে লম্পটগিরি করতে। সত্যি ছেলেটার সব বদ গুন আছে। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল সন্ধ্যা ছ-টার মধ্যে এখানে চলে আসবে। কিন্তু এখনও তার পাত্তা নেই। আমার কাজ পৌনে ছ-টাতেই হয়ে গেছে। ভাবছি ওকে ফোন করব কি না। না থাক, ফোন করা ঠিক হবে না। কি পজিশনে ও আছে কে জানে। থানায় আমাকে বেশি জেরা করেনি। যেই পুলিশটি ডায়েরি নিচ্ছিল ওর নাকি মেয়েও আমাদেরই ব্যাংকের একটা ডি. এস. এ. তে কাজে ঢুকেছে। তাই বেশ খতির করেই আমার সঙ্গে কথা বলল। জিজ্ঞাসা করেছিল দুটো জিনিস একসঙ্গে কি করে হারাল। দুটো জিনিস বলতে মানি ব্যাগ আর মোবাইল দুটোই আমার ল্যাপটপ ব্যাগের মধ্যে ছিল সেকথা জানালাম। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই ব্যাগটাই ট্যাক্সিতে ফেলে এসেছি। সেকথা শুনে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল ল্যাপটপটাও গেছে নাকি! বললাম, না ওটা অফিসে রেখেই এসেছিলাম। মিথ্যে কথা বলা আমার একেবারেই পছন্দ না। কিন্তু তবু একগাদা মিথ্যে কথা বলতে হল। যাই হোক কাজ মিটল। কিন্তু সকলেই যে যার ধান্দায় থাকে। ভদ্রলোক অনুরোধ করলেন যে ওনার মেয়েকে আমাদের ব্যাংকে যেন একটা পার্মানেন্ট চাকরি জোগার করে দিই। আমি আমার মেল আই ডি-টা দিয়ে এলাম। বললাম, ওনার মেয়ে যেন তার সি. ভি. আমায় মেল করে দেয়। আমি চেষ্টা করব। ভদ্রলোক বিগলিত হয়ে পড়লেন। ফোন নাম্বারটাও চাইছিলেন। কিন্তু আমার মোবাইল চুরি হয়ে গেছে। সে কথা যে ডায়েরিতে এইমাত্র লেখা হল সে কথা জানাতে ভদ্রলোক লজ্জা পেয়ে মাফ চাইলেন। বেরিয়ে এলাম।
ঘড়ির দিকে তাকালাম সাতটা বাজে। চার নাম্বার চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে একটা লাইট সিগারেট ধরালাম। যদিও ছেড়ে দিয়েছি। মাঝে মধ্যে টেনসড সিচুয়েসনে খেলে লাইটটাই খাই। সিগারেটটি খাওয়া শেষ হওয়ার মুখে লাটের বাট এসে হাজির হলেন। দাঁত বের করে হেসে বলল, “সরি, সরি। এক্সট্রিমলি স্যারি। আমি জানি তুমি কত পাংচুয়াল আর লেট হলে খুব খোঁচে যাও”। আমি হেসে বললাম, “কবে থেকে? আমায় রাগতে দেখেছিস কখনও?” শ্রেয়ান- “ছাড়ো, লেটস গো। সব ব্যাবস্থা করে নিয়েছি”। আমি- “ব্যাবস্থা মানে?” শ্রেয়ান- “রামদা!” আমি- “মানে?”
শ্রেয়ান এবার খোলসা করে বলে, “আরে, মালটা ধাপার কাবারি কিং। আমার বন্ধু ওর নাম্বার দিয়েছিল। ফোনেই কথা বলে পটিয়ে নিয়েছি। বলেছি যে একটা বন্ধু নিয়ে আসছি ব্যাবসার ব্যাপারে তোমার সঙ্গে কথা বলতে। আসলে আমার বন্ধুর লিডটা খুব কাজে দিল। তবে হয়তো একটু ঢুকু ঢুকু করতে হবে ওর সঙ্গে, যদি ওর পেট থেকে কথা বের করতে হয়। দিস্ ইজ অ্যাজ পার মাই ফ্রেন্ডস ফিড্ ব্যাক”। এর জন্যই শ্রেয়ানকে এত ভালো লাগে। ইন্টারপারসোনাল স্কিল ওর মতন খুব কম লোকেরাই আছে। আমার তো একেবারেই নেই। শুধু হেসে বললাম, লেটস্ গো”।