ক্যাফে গদ্য -তে অনুব্রতা গুপ্ত

আইসোলেশন

হ্যালো।হ্যাপি অ্যানিভার্সারি মৌ।
প্রতিবছর এই নাটকটা কেন করো?
প্রতিবছরে এই দিনটা আমাদের বিবাহবার্ষিকী তাই!
ছিলো।ছিলো শুভঙ্কর।এখন আমাদের আর সম্পর্ক নেই কোনো।
সম্পর্ক না থাক, সম্পর্কের অতীত তো আছে!
অতীত? কীসের অতীত?যার বর্তমান নেই।ভবিষ্যৎ নেই।তার অতীত কীসের?
তাই তো একমাত্র অতীত আছে মৌ।তুমি এটা বুঝতে পারো না?
এটা তোমার ক্ষমতা প্রদর্শন।মেল ইগো।আমি ডিভোর্সটা চেয়েছিলাম কিনা তুমি মানতে পারনি।
ক্ষমতা নয় অধিকার।
অধিকার? মাই ফুট! কীসের অধিকার?
স্মৃতির প্রতি স্মৃতিচারকের যে অধিকার থাকে।
থাকে না।অতীতের প্রতি কারোর কোনো অধিকার থাকে না।আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে শুভঙ্কর।ডোন্ট ইউ গেট দিস ফাকিং ট্রুথ?
ঐ একফালি কাগজ কী ডিসাইড করবে?
সবটা।
কোন সবটা? সবটা শব্দের মানে বোঝো? ডিভোর্স তুমি দিতে চেয়েছিলে।তুমি চেয়েছিলে ছেড়ে যেতে।আমি? আমি তো চাইনি।
না তুমি চেয়েছিলে তোমার স্বার্থে সারাটা জীবন আমাকে ব্যবহার করে যেতে।তোমার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতা ফেরতা একটা ছায়া।কারণ তুমি একজন একা আর ভীতু মানুষ ছিলে শুভঙ্কর।তার সঙ্গে প্রতারক।তাই তুমি নিজের ছায়াকেও বিশ্বাস করতে পারতেনা।তুমি বিশ্বাস করতে আমাকে।আমাকে নয় ঠিক, আমার পরিস্থিতিকে।আমার অসহায়তাকে।
হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি।ব্যবহার করেছি।তুমি করোনি?তোমার হাঁটুর বয়েসী একটা ছেলের সাথে প্রেম করোনি? ভালোবাসোনি তাকে? আমাকে মিথ্যে কথা বলে সব সত্যিগুলো চেপে যাওনি?
হ্যাঁ বলেছি।কারণ সত্যিটা জানার জন্য যে সময়, মনোযোগ, ধৈর্য দরকার হয় তার কোনটা ছিলো তোমার? নিজের কেরিয়ার।প্রমোশন।অ্যাম্বিশন বাদে আর কী নিয়ে ভেবেছো তুমি শুভঙ্কর? তুমি বুঝতে না , আমি ভালো নেই? দিনের পর দিন শুন্যতা আর একাকীত্ব গ্রাস করছিলো আমায়? আমি ক্লান্ত হচ্ছিলাম।ক্ষয়ে যাচ্ছিলাম বছরের পর বছর? একটা সংসারহীন সংসারের দায়িত্ব পালন করতে করতে আমি মরে যাচ্ছিলাম?
তুমি সব দেখেই বিয়ে করেছিলে মৌ।তুমি জানতে আমি কেমন।
না আমি জানতাম না।আমি সত্যিই জানতাম না এই ভয়ংকর বিপদসীমা।সব থেকেও কিছু থাকবে না আমার।
মিথ্যে বলছো।আমি তোমাকে ভালোবাসতাম না? তোমার জন্য কিচ্ছু করিনি? এই সবকিছু শুধু আমার একার জন্য? তোমায় যত্নে রাখিনি? এই বিলাসিতা তোমার ও অভিপ্রেত নয় কি? সত্যি করে বলো!
হ্যাঁ হ্যাঁ করেছো।বাসতে।কিন্তু তেমন করেই ততোটাই যতটা তুমি চেয়েছো।তোমার ইচ্ছের মতো করে।আমি সাথে না থাকলেও।এই চাকরি, বাড়ি, গাড়ি সব তোমার হতো।এমনিই হতো।কিন্তু আমি কতটুকু ছিলাম তোমার ভেতরে? আই ওয়াস ল্যুসিং মাই প্যাশন।
তাই ঐ ছেলেটা?
তাই।জীবনটা আমি তোমার মতো ভয় পেয়ে কাটাতে পারতাম না শুভঙ্কর।আই গট মাই জব।বাকিটা হতে সময় লেগেছে।অনেকটা স্ট্রাগল।কিন্তু এখন আমরা ভালো আছি।অনেক অনেক ভালো।ও আমাকে ভালোবেসেছে।ও আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে।
আমাদের সব শেষ? কিচ্ছু ভালো নেই? একটা মুহূর্ত ও না?
জানি না।আমার মনে পড়ে না।এসব ভেবে লাভ নেই।গেট দ্য পয়েন্ট স্ট্রেট।ভালো থাকো।নিজের মতন।
তোমার শ্যাম্পুর গন্ধ, সাবানে বুদ্বুদ, হাসি, অভিমান, রাগ সব গিলে খেতে আসে আমাকে মৌ।আমি কুঁকড়ে যাই।একাকীত্ব গ্রাস করে নিচ্ছে আমায়।ক্ষমা করে দাও আমাকে।নাহলে সারাটা জীবন শুধু অপরাধবোধ পিছু নিয়ে বেড়াবে।
দিয়েছি।প্রথম দিনই।যেদিন বন্ধন মুক্তি চেয়েছি সেদিনই।তোমাকে ক্ষমা না করলে একটা মৃত শরীর বয়ে নিয়ে বেরাতে হত আমায়।একটা অতীত।তুমি মুক্ত শুভঙ্কর।প্রায়শ্চিত্ত যদি চাওই তবে এটাই।মেনে নাও বাস্তবটা আর কক্ষনো এসো না।ফোন করো না।আমাকে ভুলে যেতে দাও আমার আগের একটা পনেরো বছরের অন্ধকার আছে!ছিলো!
………. হ্যালো? হ্যালো শুভঙ্কর?
বাইরে তখন স্যোশাল ডিসট্যানিং। সবাই সবার থেকে দূরে।দেশজুড়ে লকডাউনের মেয়াদ তিনমাস পেরোলো।মানুষ এখনো লড়ছে।একটা ভালো থাকার লড়াই।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।