জীবনের সাথে জুড়ে থাকা দীর্ঘ এক কবিতায় চতুর্থ পর্ব সংযোজন করলেন কবি
“এত চলে যাওয়া তবু খিদে পায় / দাঁত নখ মাংসের হাড় চিবোতে চায় /… ” উৎসর্গ পৃষ্ঠায় কথাগুলি লিখছেন কবি পাপড়ি গুহ নিয়োগী, তাঁর সাম্প্রতিকতম কবিতা বই ‘ফিরতে চাই ডাকনামে’তে. বাংলা কবিতার পাঠক পরিচিত এই কবির সাথে, কবির কবিতার সাথে. বাঘছাল গন্ধের মেয়ে, শূন্য আঁকি মৃত্যু আঁকি, নাভিজল- এর পর পাপড়ি পাঠকের কাছে তুলে দিলেন এমন একটি বই যেখানে পরিবার সমাজ রাজনীতি সবটা মিলেমিশে নিজস্ব প্রতিবিম্বের সামনে দাঁড়াতে বাধ্য করল আমাদের. আমরা দাঁড়িয়ে দেখলাম আমাদের চারপাশের যাবতীয় সুখ এবং অসুখের খণ্ডচিত্র, পাপড়ির বয়ানে. অর্ধেক আকাশের কবিতা কিন্তু পাপড়ির এতদিনের কবিতাযাপনে সেভাবে দেখা যায় না. বরং দেখা যায় সমস্ত ক্যানভাস জুড়ে একটা বিরাট আকাশ. আর যে আকাশে পাপড়ি স্বাধীনতা চাইছেন না, স্বাধীনতা উদযাপন করছেন. এই স্বাধীনতায় যন্ত্রণার ছবি স্পষ্ট হচ্ছে, কখনো তা অতিক্রমের. মেদহীনতায় এ কবিকে চেনা যায়, চেনা যায় নিজস্ব ভাষা ব্যবহারে. দুটো বইয়ের মাঝে খুব কম সময়ের ব্যবধান, নিজস্ব স্বর ও ভাষার প্রয়োগ, চিত্রকল্প ভাবনা বিষয়বস্তুর স্বতন্ত্রতা, এত সব কিছু মাথায় নিয়ে দু মলাটের মাঝে নিয়ে আসা কবিতার নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ. পাপড়ি সেদিকে গভীর ভাবে নজর দিয়েছেন. মাত্র পাঁচটি কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন তার চতুর্থ বই. কবিতা নয়, আপনি বুলেটও বলতে পারেন. এ সংখ্যক বুলেট দিয়ে কিভাবে ঝাঁঝরা করে দিতে হয় পাঠকের চিন্তাশীল মগজ, কবি জানেন. তা ছাপ রাখে তাঁর কবিতায়. অপেক্ষা, স্তব্ধতা, ফিরতে চাই ডাকনামে, পদবিহীন, ক্লোরোফিল যুবক. ঘন হয়ে দাঁড়ায় ক্রমশ. গোল হয়ে দাঁড়ায় ক্রমশ. জাপ্টে ধরে. পাঠক হিসেবে নতজানু হই কবি পাপড়ি গুহ নিয়োগীর কবিতার কাছে. প্রথম দশকের ব্যতিক্রমী স্বরের কবি আগামীর জন্য তৈরি করে রাখেন এক তুমুল আগ্রহ. তাঁর লেখায়, কবিতায়. তিনি লেখেন,
“শহর ছেড়ে চলে গেলে তুমি
অথচ ঠিকানা বদল হল না আমার
এখন পদবিহীন অন্ধকার হেঁটে বেড়াই
এ বয়সে দুঃখ! ধুর, সে তো নিজেরই পোষা বেড়াল”
সংগ্রহযোগ্য এই বইটির প্রকাশক আলোপৃথিবী. প্রচ্ছদ শিল্পী শ্রীহরি দত্ত. যিনি কভারের লাল, কালোর দ্যোতনার মধ্যে দিয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছেন পাঠকের মগ্নতা. সাধারণ একজন পাঠকের এই আলোচনা দিয়ে পুরো বইটি বুঝতে পারবেন না. বুঝতে চাইলে আজই সংগ্রহ করুন.