• Uncategorized
  • 0

গদ্য বলো না -তে সঙ্কর্ষণ

রোমাঞ্চ

স্রেফ ঔপন্যাসিক হবেন ব’লে ব্যাঙ্কের মোটা অঙ্কের চাকরি এককথায় ছেড়ে দিয়েছিলেন জনৈক রাজারাম বৈষ্ণব। আত্মীয়স্বজন থেকে বন্ধুবৃত্ত সকলেই এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে থাকলেও তাঁকে মূলতঃ সাহস যুগিয়েছিলেন ঠিক সেই ব্যক্তিই যিনি স্বয়ং সর্বাধিক নির্ভরশীল ছিলেন তাঁর ওপর। ষাটের দশকের শেষার্ধেও শ্রীমতি রেণু বৈষ্ণবের সম্পূর্ণ ভরসা ছিলো যে সাহিত্যও অবশ্যই অর্থকরী হ’তে পারে। কিন্তু প্রথমবার এই পৃথিবীতে পা রেখেই রাজারাম বুঝেছিলেন যে সাহিত্যমনষ্কতার দেখনদারি আর আসল সাহিত্যমনষ্কতার মধ্যে দূরত্ব বড্ডই বেশী। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ‘আবেগ’ চায়না, তারা ‘রোমাঞ্চ’ চায়। অতএব কলমে জোর নয়, চাই ‘মশলা’… আর লোকের চাহিদা সেই মশলা এবং নিজের পেটের ভাত জোগাতেই আপাদমস্তক সভ্য, ভদ্র, লাজুক রাজারামের কলমে আত্মপ্রকাশ করে ‘মাস্তরাম’… ভারতবর্ষের প্রথম ইতিহাস-স্বীকৃত ‘পর্ন রাইটার’ বা ‘অশ্লীল-সাহিত্যিক’। সেই সময় টানা প্রায় বছর দেড়েক এই চটি বইগুলি প্রতি মাসে প্রকাশিত হ’তো এবং মাত্র পঁচিশ পয়সা দামের এই বইগুলি সারা দেশেই প্রবল জনপ্রিয় হয়। ফলস্বরূপ রাজারাম নিজে প্রভূত অর্থের মালিক হওয়া সত্ত্বেও সেই পরিচয় জানাজানি হ’তেই পরিবার এবং সমাজের দ্বারা বহিষ্কৃত হন। এরপরে তাঁর কোনো সংবাদ তেমনভাবে কোথাও পাওয়া যায়না।
ভারতীয় উপমহাদেশ, তার অন্তর্গত ভারতবর্ষ, তার একটি নির্দিষ্ট জাতি, যাকে ‘বাঙালি’ ব’লে অভিহিত করা হয়, উৎপত্তিগতভাবেই তার একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে, যার নাম ‘ট্যাবু’ অর্থাৎ ‘আরোপিত সামাজিক নিয়মাবলী’। আপনারা ভাবতে পারেন, যে হঠাৎ এসব ব’লছিই বা কেন আমি? ব’লবো, তবে তার আগে জানিয়ে রাখি এই ট্যাবুর পেছনে মনস্তত্ত্বের একটি গভীরতর অংশের অবদান থাকে যার নাম ‘পিয়ার প্রেশার’ বা ‘আরোপিত পারিপার্শ্বিক চাপ’। উপরোক্ত পরস্পর সম্পর্কিত বিষয়দু’টি মিলে আমাদের যে দৈনন্দিন অভ্যাস তৈরী করে ঠিক তাকেই আমরা ‘কালচার’ বা ‘নিজস্ব সংস্কৃতি’ ব’লে পরিচয় দিই (যদিও সংস্কৃতির সংজ্ঞা আদৌ তা নয়) এবং যেকোনো নান্দনিকতার চর্চা (বই পড়া, গান শোনা ইত্যাদি) কোনো কারণে এই তথাকথিত সংস্কৃতির বাইরে যাওয়ার চেষ্টা ক’রলেই তাকে ‘অপসংস্কৃতি’ ব’লে দাগিয়ে দেওয়া হয়। অতএব সংস্কৃতির দেখনদারি এবং ইচ্ছার গোপনীয়তা যেখানে প্রবল, সেখানে সাহিত্য আর অসাহিত্য উভয়ের ভেতরেই সামান্য হ’লেও পরস্পরবিরোধী সত্ত্বা উপস্থিত থাকা স্বাভাবিক বইকি।
এখন প্রশ্ন জাগে বই পড়ার অভ্যাসের ওপর। যেকোনো বিষয়ই যখন বিপণনের যোগ্য হ’য়ে দাঁড়ায় তখন দু’টি পক্ষের উদ্ভব হয়, যথা- বিক্রেতা এবং উপভোক্তা। বইয়ের ক্ষেত্রে এই দুই পক্ষই ‘প্রকাশক’ এবং ‘পাঠক’ ব’লে পরিচিত হন। অর্থনীতির সাম্প্রতিকতম সংজ্ঞা বারবার এই কথাই বলে যে আমরা যখন কোনো পণ্য অর্থের বিনিময়ে ক্রয় ক’রি, আমরা কিন্তু আসলে পণ্যটির উপযোগিতাই ক্রয় ক’রি। এই উপযোগিতার জন্ম দেয় ‘ক্রেতার চাহিদা’ আর চাহিদা ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়পক্ষই তৈরী ক’রতে পারেন। যেই মুহূর্তে বিক্রেতা এই কাজ ক’রছেন, যোগ্য প্রক্রিয়ায় তা ক’রলে আরোপিত পারিপার্শ্বিক চাপই ‘একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর’ ক্রেতার চাহিদা বৃদ্ধিতে অণুঘটকের কাজ করে, কিন্তু ক্রেতার চাহিদার এক এবং একমাত্র উৎপত্তি হয় তাঁর ‘নিজস্ব প্রয়োজনীয়তা’ থেকেই। ভাবের আদানপ্রদানের মাধ্যমে সেই প্রয়োজনীয়তা এক থেকে অপরের ভেতর সঞ্চারিত হয় এবং তদোদ্ভূত চাপ ‘তৎক্ষণাৎ’ অণুঘটকের কাজ করে। বই যদি দেখনদারিতে এগিয়ে থেকে উপযোগিতায় পিছিয়ে থাকে সেটি যেমন একপ্রকার প্রতারণা, তেমনই ক্রেতার কৃত্রিম উৎসাহবশতঃ কিছু ভালো পাণ্ডুলিপি প্রচুর পরিমাণে বাজারে এসে অবিক্রীত থাকাও ভালোভাবেই দ্রষ্টব্য হয়।
এইবারে আমরা যদি বইমেলা-পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষিতে হিসেব রাখি, আমরা কিন্তু বিক্রেতার মনস্তত্ত্ব আদৌ সেভাবে অনুধাবন ক’রবোনা। বরং খুঁজবো বিগত বছরের বইমেলা থেকে এই বছরের বইমেলা পর্যন্ত একটি বছর পাঠকের চরিত্র কী ছিলো? যদি গণমাধ্যম এবং প্রযুক্তির আগমনে পাঠকের সংখ্যা ক্রমশঃ বিলুপ্তির পথে এগিয়েই থাকে, তবে কি এই বছর তেইশ কোটি টাকার বই বিক্রী হ’তো? আর যদি তা হ’য়েও থাকে তবে মানসিকতার উন্নয়ন বা অবনমনটুকু কোথায়? প্রথমেই জানিয়ে রাখি বই বিক্রীর পরিসংখ্যানের ওপর কিন্তু আদর্শ পাঠকের পরিসংখ্যান আদৌ নির্ভর করেনা, উপরন্তু বেশ কিছু বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধিই মানুষের পাঠাভ্যাসের পতন সূচিত করে। সময়ের সাথে সাথে বই কেনার কারণের ভিন্নতা বাড়তে বাড়তে মূলতঃ যেক’টিতে এসে দাঁড়িয়েছে সেগুলি হ’লো- ১। পড়া, ২। প’ড়ি তা দেখানো (সংস্কৃতিবান হওয়ার দেখনদারি), ৩। অর্থনৈতিকভাবে জনৈকের শক্তি প্রদর্শনের উচ্চস্তরীয় উপায় (পয়সা এতো বেশী যে জ্ঞানের চাহিদাও তার সমানুপাতিক)। যাঁরা কেবলমাত্র পড়ার জন্যই বই কেনেন তাঁদেরও ২ ভাগে ভাগ করা যায়, ১। তথাকথিত উপভোক্তা, ২। অনুসন্ধিৎসু। তথাকথিত উপভোক্তা অর্থাৎ যাঁরা বইকে আর পাঁচটি বিনোদনের উৎসের মতোই একটি হিসেবে দেখেন, তাঁরা হ’চ্ছেন সংখ্যাগুরু… প্রকাশক ব্যবসার পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ ক’রেন মূলতঃ এঁদেরই হুজুগের ভিত্তিতে। দ্বিতীয় পক্ষের মূল উদ্দেশ্য হ’লো জ্ঞানের পথ ধ’রে বৃহত্তর পরিসরে চিন্তার বিস্তৃতি… ব্যবসার সুনাম বজায় রাখতে জনৈক প্রকাশক এঁদের গঠনমূলক চিন্তাধারার ওপর নির্ভরশীল হন। এখন এই টানাপোড়েনের ভেতরেই লেখক নিজস্ব কর্তব্য স্থির করেন। লেখক যদি কেবল ‘নিজেকে খাইয়ে-প’রিয়ে বাঁচাতে চান’ তিনি বাজারচলতি হাওয়া বুঝে কারখানার ‘শ্রমিকের’ ন্যায় পণ্য তৈরী ক’রে জনৈক ব্যবসাদারকে সরবরাহ করেন। কিন্তু তিনি যদি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসাবে ভাষার ব্যবহারে ‘নিজের কলমকে সমাজের প্রতিবিম্ব হিসাবে তুলে ধ’রতে চান’ সেক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর বাজার স্বয়ং তাঁর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। দ্বিতীয় জাতের লেখকেরাই মূলতঃ একটি কৃষ্টিকে বহন করেন এবং স্বীকৃতি দিয়ে তাঁর নয়, তাঁকে দিয়ে স্বীকৃতির মর্যাদা বর্ধন করা হয়।
ঠিক এইবারে আমরা ঢুকবো বর্তমান পাঠকের মনস্তত্ত্বে। এখন মূলতঃ বই প’ড়ছে কারা? নব্বইয়ের দশকে জন্ম যাদের তারা। তারা কি রবিঠাকুর প’ড়েছে? না। শরৎবাবু? না। বিভূতিভূষণ? না। কেন পড়েনি? কঠিন বাংলা তারা বুঝতে পারেনা। তারা বাংলা মাধ্যমে প’ড়েও বাংলা বোঝেনা কেন? কারণ ইশকুলের বাংলা ক্লাসের ৪০ মিনিট ব্যতীত বাংলা নিয়ে তারা কখনও ভাবেইনি। তার ফলে কী হ’য়েছে? তার ফলে তারা আমাদের চিরাচরিত সাহিত্য এবং তার প্রাণপুরুষ যে ‘আবেগ’ তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিদেশী ভাষার রঙিন বইয়ের ছবির দিকে ঝুঁকেছে। তাতে কী যায় আসে? ভাষাকে উন্নততর ক’রে প্রকাশের প্রচেষ্টায় অবহেলা দিনকে দিন দৃশ্যমান হয়। বিদেশী সাহিত্যে কি তবে আবেগ বা কল্পনার স্থান নেই? না, কারণ পাশ্চাত্য মানসিক বিকাশের প্রাথমিক স্তরেও ‘আবেগ মিশ্রিত পরাবাস্তববাদে’ বিশ্বাস করে। আমরাও তো বিনা ছবিতে অমন বইই প’ড়েছি, তবে এদের অসুবিধা কীসে? কারণ উপায়ান্তর না থাকায় তখন বইয়ের সাথে ল’ড়ে কথিত ঘটনার ছবি নিজেদেরই মাথার ভেতর এঁকে নিতে হ’তো, এখন অন্তর্জাল সরাসরি ছবির জোগান দিচ্ছে। তবে কি কেউই বই প’ড়তে বা পড়াতে চায়না? নিশ্চয়ই চায়, কিন্তু যে তৃতীয় বিশ্বের দেশে কোটিতে একজনের অন্নসংস্থান হয় সেখানে মানুষের সাহস, সময় বা ধৈর্য কোনোটিই অবশিষ্ট নেই। ইংলিশ বইয়ে কি তবে সবই পড়া খুব সোজা? কখনোই নয়, কিন্তু যে ভাতের যোগান দেয় সে’ই আপন যে দেয়না, সে পর… সে মানুষ হোক বা ভাষা। বই যে শুধু আনন্দ ক’রতে পড়া যাবেনা, তা কোথায় বলা আছে? কোথাওই বলা নেই, ফলস্বরূপ আমাদের তরুণতর প্রজন্মের কোনো দর্শন নেই, আদর্শ নেই, জ্ঞান নেই, প্রশ্ন নেই, চিন্তা নেই। আমরা বই প’ড়বো, কিন্তু আত্মস্থ ক’রবোনা। রোমাঞ্চিত হবো, কিন্তু শিখবোনা। মনে দাগ কাটবে, কিন্তু মনে রাখবোনা। তবে কি শিশু-কিশোর সাহিত্য প’ড়বো? নাহ্ ঐ ‘চাঁদের বুড়ি’, ‘মামদো ভূত’ বা ‘ফেলুদা-ব্যোমকেশের’ মতো অতো বালখিল্য জিনিস তো সংগ্রহের শোভা বাড়াবেনা।
অতএব এমন কিছু ক’রতে হবে যাতে সাপও ম’রবে, কিন্তু লাঠিও ভাঙবেনা। অবাস্তবের ভিত্তিতে অলৌকিকের রোমাঞ্চ যখন শেষ, তবে ‘বাস্তবের’ ভিত্তিতে অলৌকিকের রোমাঞ্চ উপভোগ করা কেন নয়? লেখকরাও তো আগে পাঠকই, তাঁরাও তো বোঝেন ঠিক কোন বিষয়টি পুরোনো হ’তে কতোদিন সময় লাগতে পারে? অতএব পরপর ইতিহাসভিত্তিক, তন্ত্রভিত্তিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, জীবনীভিত্তিক ঔপন্যাসিকে ছেয়ে গেলো বইমেলা। পাঠকের একবারে দ্বিমুখী সাধ মিটে গেলো, মনোগ্রাহী ক’রে লেখা ব’লে পড়ার খাটনি তো হ’লো না’ই, উপরন্তু মাদকের নেশার মতো “শেষে কী হ’লো”র রোগ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলো, তা আবার সত্যি ঘটনায়। বাংলার ‘অলৌকিক সাহিত্য’ তার সহজাত সারল্য হারিয়ে উন্নীত হ’লো ‘হরর অকাল্ট জঁনরে’ (আধিভৌতিক মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণী সাহিত্য) এবং ‘ডার্ক ফ্যান্টাসি জঁনরে’তে (যৌনতাভিত্তিক আধিভৌতিক মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণী সাহিত্য)। সত্যি ব’লতে কী, উপরোক্ত বিষয়গুলির যাঁরা লেখক তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো শুধু এই কারণে, যে তাঁরা তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফলের অসামান্য প্রয়োগে আমাদের অজস্র অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে অবহিত ক’রেছেন। অপরদিকে এঁরাই পরোক্ষে একটি প্রজন্মকে লালন ক’রে এইখানে এনেছেন যেখানে আট বছরের ছেলে থেকে ত্রিশ বছরের যুবক প্রত্যেকের জ্ঞান সম্পর্কে অন্বেষণ ঐ উপন্যাসটুকুতেই সীমাবদ্ধ। বিনয় মজুমদারের জীবনভিত্তিক উপন্যাস কিনতে যতোখানি উৎসাহ বর্তমান, তা যদি বিনয়বাবুর স্বরচিত জীবনদর্শন সম্পর্কে থাকতো, কবিতীর্থ, গাঙচিল, অনুষ্টুপের বইগুলির এতো অযত্নও হ’তোনা, মেরুদণ্ডহীন এই জাতিটিরও হয়তো প্রাপ্তির ঝুলি আয়তনে খানিক বৃদ্ধি পেতো।
সবশেষে ব’লি, এই বইমেলায় সবথেকে বেশী অপমানিত যদি কেউ হ’য়ে থাকে তা হ’লো কবিতা। শুনতে একটু খারাপ লাগলেও ব’লবো, সাহিত্যের আধুনিকতর ও গভীরতম এই শাখাটিকে অনুধাবন করার মতো এই মুহূর্তে বাংলায় কোনো পাঠকই নেই, কবি অনেক দূরের কথা। সাহিত্য, বিশেষতঃ কবিতার যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠি নেই, সেজন্য অযোগ্য লোকের সংখ্যা এখানে অত্যন্ত ব্যাপক হারে ক্রমবর্ধমান, আবার একই কারণে যোগ্য মানুষের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমানও বটে। একটি গোটা শতকে যেখানে সর্বাধিক ৪ থেকে ৫জন ‘লিখিয়ে’ সময়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে কবিত্বের শিরোপা ধারণ ক’রতে পারেন, সেখানে ‘১৫০ কবির ১৫০ বই’য়ের মতো একটি প্রকল্প একত্রে অত্যন্ত হাস্যোদ্রেককারী এবং বিরক্তিকর। জানিনা, শক্তিবাবু বেঁচে থাকলে আজ ঠিক কী প্রতিক্রিয়া দিতেন, যখন তিনি দেখতেন যে রাম-শ্যাম-যদু-মধু প্রত্যেকেই মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নিজেদের জঘন্য রচনাগুলিকে বুক চিতিয়ে জনসমক্ষে কবিতা ব’লে চালিয়ে দিতে পারে। প্রকাশকেরা যেহেতু নিজে আর্থিক ঝুঁকি আদৌ নিচ্ছেননা, নির্বাচনে শৈথিল্য দেখিয়ে পাণ্ডুলিপির যোগ্যতা পরীক্ষা ক’রছেননা তাঁরাও। ফলস্বরূপ কবিতার প্রেক্ষিতে পাঠক পুরোনোর পাশাপাশি উৎসাহ হারাচ্ছেন নতুন কলমেও আর এই তথাকথিত কবিদের বিপণন (যা সোজা কথায় ভিক্ষাবৃত্তি) কবিতা থেকে মানুষকে দূরে ঠেলে চ’লেছে ক্রমাগত। তো কবিতা, গল্প ইত্যাদির অবস্থা যা’ই হোকনা কেন, বেশ কিছু ভালো গবেষণামূলক বই ও পরিচিতদের উপহারে বইমেলার সুস্মৃতিটুকুই বজায় থাকবে। অব্যবস্থা যেটুকু ছিলো, তার দায়িত্ব তো আর আমার নয়। এটুকুই বলার যে লেখক, পাঠক, সম্পাদক ও প্রকাশক প্রত্যেকেই পরস্পরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেন। বই প’ড়ুন শুধু আনন্দ ক’রতে নয়। বইকে সংগ্রহ করার মতো বইয়ের থেকেও সংগ্রহ করা যায়। চিন্তার বিস্তৃতি না থাকলে জাতি এগোবে কী ক’রে? আসুন এবারে সাবালক হ’ই। আরেকজন রাজারামের অন্তর্গত সাহিত্যিকটিকে মশলার খোঁজে আমরা মেরে ফেলতে পারিনা, তাই না?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।