গদ্য বোলো না -তে বিশ্বদীপ ঘোষ

পাঠ প্রতিক্রিয়া

তিনদিন আগে হাতে পেয়েছিলাম। পরশুই একটানা পড়লাম। আকারে ছোটো। মাত্র ৭০ পৃষ্ঠা। কিন্তু পৃষ্ঠা সংখ্যা যে ভালো লেখার ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা নয় এটা তার একটি প্রমান।
লেখক নিজে একজন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব এবং অভিনেতা। বিভিন্ন সময় তিনি এই তিন ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য পেয়েছেন এবং তাঁদের নিয়েই সামান্য কিছু লেখা দিয়ে কিছুটা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। প্রথমে শম্ভু মিত্র, তারপর উৎপল দত্ত শেষে অজিতেশ বন্দোপাধ্যায় কে দিয়ে লেখা শেষ করেছেন তিনি।

আমি প্রথমে অজিতেশ বন্দোপাধ্যায় এর অংশ নিয়ে কিছু বলি। এনার হাত ধরেই অশোক বাবুর নাট্য যাত্রা শুরু। তাই হয়তো একে দিয়েই বই শেষ করেছেন। তিনি প্রথমেই বলেছেন যে এখানে তিনি কৌতুকময় বা সুখস্মৃতি নিয়েই বলবেন। তাও লেখায় স্পষ্ট বোঝা যায় যে একটা সময় অবশ্যই মনোমালিন্য হয়েছিল। সেই জন্যই অশোক বাবু সহ আরো অনেকে নান্দীকার ছেড়ে নতুন দল করেন। কিন্তু এর বেশি তিনি এগোননি। হয়তো তাঁর জীবনে যাঁর এত প্রভাব তাঁকে নিয়ে শুধু সুখস্মৃতি মনে রাখতে চেয়েছেন। ছোট অংশ তাই বিস্তারিত বললাম না কিন্তু শেষে তাঁর মৃত্যুর বর্ণনাটা শুনে একটু মন খারাপ হয়ে গেল। মানুষটা যা ভালোবাসতো সেটা করতে করতেই হঠাৎ বিনা কষ্টে মৃত্যু। এর চেয়ে ভালো মৃত্যু আর কি হতে পারে। তবে আরো কিছু বছর বেঁচে থাকলে হয়তো আরো অসাধারণ কিছু সৃষ্টি পেতাম আমরা।
শম্ভু মিত্রের সাথে লেখকের পরিচয় পরে। যখন উনি নান্দীকার ছাড়ছেন তখনই শম্ভু মিত্র নিজে ওঁকে ডেকে পাঠান। ওই দিয়ে শুরু। তারপর তাঁর লেখায় উঠে এসেছে বিভিন্ন বর্ণনা যাতে বোঝা যায় যে মানুষটা কত হাসিখুশি ছিলেন। এনাকে নিয়েও লেখার শেষে লেখক ইঙ্গিত দিয়েছেন যে কিছু মনোমালিন্য এনার সাথেও ছিলো। কিন্তু সেটা নিয়ে তিনি লিখতে চাননি। এছাড়াও লেখক এর একটা আক্ষেপ যে নান্দীকার বা উৎপল দত্ত যেরকম থিয়েটার পেয়েছিলেন একটা সেরকম একটা থিয়েটার তাঁকে কোনো রাজনৈতিক দল সেটা ডান বাম নির্বিশেষে কেউই দিয়ে উঠতে পারেননি। থিয়েটার পেলে হয়তো শম্ভু বাবুও নিজের উত্তরাধিকার তৈরী করে যেতেন।
সব শেষে আমার প্রিয় অভিনেতা কে নিয়ে ওনার লেখা টা নিয়ে কিছু বলি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখায় উৎপল বাবুর গাম্ভীর্য এর কথাই উঠে এসেছে আমার কাছে। কিন্তু এই লেখায় উঠে এসেছে তাঁর হাস্যকৌতুকময় রূপ। লেখক এও বলেছেন যে গিরিশ ঘোষ এর পর বাংলা নাটকে এরকম বহুমুখী প্রতিভা যে কিনা একা হাতে বহুদিক সামলাতে পারে , খুব কমই এসেছেন। একমাত্র এই লেখাটায় কোনো মনোমালিন্য বা মতবিরোধ এর আভাস পাওয়া যায় নি। প্রথম থেকে শেষ অব্দি এক অনুরাগীর স্মৃতিচারণ বলা যেতে পারে।
এছাড়াও উঠে এসেছে তৎকালীন ঘটনার কিছু খন্ড চিত্র। যেমন অজিতেশ অংশে কৃত্তিবাস যে বাংলা কবিতায় এক নতুন যুগ এনেছিল তার উল্লেখ পাই, সেরকমই উৎপল অংশে পাই তৎকালীন নকশাল আন্দোলনে নাট্য দল গুলির ভূমিকার উল্লেখ।
বইটা পড়তে পড়তে যেন সব কিছুই চোখের সামনে দেখতে পারছিলাম। লেখনী খুব ভালো। আক্ষেপ এই যে বড়ো তাড়াতাড়ি শেষ হলো। আরো বড়ো আকারে এঁদের নিয়ে যদি ইনি লেখেন তাহলে আরো খুশি হবো। আমার মতো যাদের এনাদের সামনে দিয়ে দেখার সৌভাগ্য হয় নি তারা তো এনাদের লেখা পড়েই এসব মহান ব্যক্তিত্ব কে চিনবে এবং জানবে।
**********
শম্ভু মিত্র-উৎপল দত্ত-অজিতেশ বন্দোপাধ্যায় / অশোক মুখোপাধ্যায় / সপ্তর্ষি প্রকাশন / ১৫০
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।