• Uncategorized
  • 0

গদ্য বোলো না -তে সঙ্কর্ষণ ঘোষ

নাম দেবো না

দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ কি শুধুমাত্র প্রতিবাদী মিছিলের প্রথম সারিতে মুষ্টিমেয় মৌলবী, পুরোহিত আর যাজকের হাত ধ’রে পাশাপাশি হাঁটা না মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে ঊর্ধ্বাঙ্গে কেবলমাত্র উপবীতটুকু রেখে সশস্ত্র বাহিনীর মুখোমুখি হওয়া জনৈক ব্যক্তি? সর্বত্র হিংসাও যে নিজের নিজের মতো ক’রে কিছু উগ্র ধর্মীয় সংগঠনই ছড়াচ্ছে সে ব্যাপারেও আপনি নিশ্চিত তো? যাক, বেশ বেশ।
অর্থাৎ আপনি মেনে নিচ্ছেন যে নিজ ব্যতীত অন্য ধর্মের সমর্থন আদায় ক’রতে শাসক ‘তাদের মতো ক’রে’ মাথায় কাপড় দিয়ে প্রার্থনাসভায় বসেন তা আসলে সেই ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসাই, কোনো প্রতারণা নয়। আপনি মেনে নিচ্ছেন একটি নির্দিষ্ট বর্ণের পরিধেয় কেবলমাত্র একটি সম্প্রদায়কেই চিহ্নিত করে, ‘ত্যাগ’ ব’লে কোনো মানবিক গুণকে নয়। মেনে নিচ্ছেন যে দাড়ি বা টিকি রাখাতেই জনৈক ব্যক্তির ধর্মবিশ্বাস সীমাবদ্ধ থাকে… তাই তো? আহা ভালো ভালো।
তা এই ধ’রুন আপনি ট্রেনে ক’রে কোথাও থেকে ফিরছিলেন আপনার তথাকথিত ‘স্বধর্মাবলম্বী’ জনৈক আপনাকে প্রসাদ খাইয়ে আপনার মালপত্র নিয়ে চম্পট দিলো। আপনি শ্রদ্ধা ভক্তি ক’রে প্রসাদ খেয়েছিলেন, সেই মুহূর্তে আপনার কাছে সে ব্যক্তি আপনার মতো এক হিন্দুই ছিলো। পরে যখন সে ধরা প’ড়লো, আপনি শুনলেন তার আসল নাম ‘মকদুম জুনেইদ’। আপনি তখন ফিরে পাওয়া জিনিস হাতে দেওয়ালে টাঙানো রাধাকৃষ্ণের ছবিতে ভক্তিভরে প্রণাম ক’রে প্রমাণ পেয়ে গেলেন যে ‘ঈশ্বর’ সত্যিই আছেন আর প্রতিবেশীকে ডেকে ব’ললেন, “ব্যাটারা মীরজাফরের জাত”। অর্থাৎ তখন আপনি সেই নির্দিষ্ট লোকটিকে দিয়ে পুরো সম্প্রদায়টিকেই বিচার ক’রে নিলেন এবং পূর্বে প্রাপ্ত সংস্কারবশতঃ বিশ্বাসঘাতক আর এই সম্প্রদায় উভয় সম্পর্কে ধারণা আপনার চোখে সমার্থক হিসেবে আরো সুদৃঢ় হ’লো।
বছর পাঁচেক আগের ‘পিকে’ ছবিটিতে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য মূল চরিত্রের মুখ দিয়ে বলানো হ’য়েছিলো, “ধরম কি কানেকসন ফইসান সে হায়” অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে পোশাক এবং চালচলনেই ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় নির্ভর করে। আমরা সক্কলে নিশ্চিত মিছিলের আগে যারা হেঁটে আসছে তারা প্রত্যেকে নিজস্ব পোশাকে নিজের ধর্মেরই ‘আদর্শ’ প্রতিনিধিত্ব ক’রছে। এরা কখনোই কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের লোক নয়, ধর্ম না পাল্টে লোকচক্ষুতে ধুলো দিতে তারা এমন ক’রেছে তাও নয়… এরা সকলেই চরম সত্যবাদী আর পেছনের লোকগুলি যারা সাধারণ পোশাক প’রেছে তারা সকলেই হিসেবমতো ‘বেজাত’।
অপরাধের বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের নামই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উঠতে দেখলেও, এঁদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে মিশে যদি দেখেন বেশ বড়ো সংখ্যক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব পাওয়া যায়। ফেজ টুপি এঁদের মাথাতে যেমন থাকে, সাধারণ মানুষের মাথাতেও থাকে, যারা সেদিন আগুন দিচ্ছিলো তাদেরও ছিলো। কিন্তু তার মানে কি এই যে যারা সেদিন সরকারী সম্পত্তি ভাঙছিলো তারা সকলেই সেই নির্দিষ্ট ধর্মেরই মানুষ? নাকি “আই অপোজ” বা “আই সাপোর্ট” ব’লে প্ল্যাকার্ড ধ’রিয়ে তরুণ তরুণীদের যা পরিচয় সংবাদ বা গণমাধ্যম দিচ্ছে তা আপনারা নিশ্চিন্তে বিশ্বাস ক’রছেন? তা যদি ক’রে থাকেন আপনার ২টি অপরাধ ইতিমধ্যেই লিপিবদ্ধ হ’য়ে র’ইলো… ১। আপনি সন্ত্রাসের ধর্মের অস্তিত্বে বিশ্বাসী, ২। এই বিভাজনের রাজনীতির হাওয়া অনুসারে নিজের মানসিকতার বিকৃতি ঘ’টিয়ে আপনি পরোক্ষভাবে কু-শাসনে সাহায্য ক’রছেন।
অন্তর্জাল বন্ধ, ছদ্ম-আমলাতান্ত্রিক চাল, ঐকতানের ছিন্ন সুর ইতিমধ্যেই স্তিমিত ক’রে দিয়েছে দেশব্যাপী গণ-আন্দোলনের জোয়ার, আইসিইউতে থাকা ছেলেটির সাথেই (যদি সত্যিই সে জীবিত থাকে) ক্রমশঃ নিস্তেজ হ’য়ে আসছে ছাত্র-আন্দোলন, বিরোধীদের ব্যক্তিগত স্বার্থে হাস্যকর ছদ্ম-প্রতিবাদ মোটামুটি জয়মাল্য প’রিয়েই দিতে চ’লেছে স্বৈরাচারী শাসকের গলায়। এই পোশাক প’রিয়ে হাঁটাচলার নাটকগুলি করা হ’চ্ছে নীচুতলার বেশ কিছু মানুষকে বোড়ে বানিয়ে, আমাদেরই থেকে আরো কিছু বোড়ে তৈরী করার জন্যে। ম’নে রাখবেন “কৌন হিন্দু, কৌন মুসলমান? ঠাপ্পা কিধর হ্যায় দিখাও”… এটুকু প্রশ্নও করার মতো চিন্তা যেন আমরা অনুশীলন ব্যতীত হারিয়ে না ফেলি। রাজনীতির খেলাই এমন দাবার ছকের মতো, শুধু বিপক্ষের রাজার বদলে স্বয়ং বিপক্ষকেই কিস্তিমাৎ দিতে হয় ন’ইলে নিজেকে বোড়ে হ’য়েই থেকে যেতে হয়, এইই যা।
(বিঃদ্রঃ রঙ বা ধর্মীয় পক্ষপাতের অভিযোগ কেউ অকারণে তুললে পূর্বোক্ত আপ্যায়নের ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয়গুলি অবহিত হ’য়ে তবেই এগোবেন। ধন্যবাদ।)
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।