গল্পকথায় নুরজাহান খাতুন

জন্ম ও কর্মসূত্রে পুরুলিয়াবাসী । পুরুলিয়াতেই পড়াশোনা ,বড়ো হয়ে ওঠা! পিতা পুরুলিয়ার একজন কবি ছিলেন। তিনি কয়েকটি আঞ্চলিক প্রত্রিকা প্রকাশিত করেছিলেন। পিতা লেখালেখির প্রেরণা ছিলেন ! তারপর বিবাহিত জীবনে সংসার সামলে হাতে কলম ধরা । লেখালেখি গুলো সব এতদিন প্রায় ডায়েরিতে বন্দী ছিল । পরে ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করি । মূলত ছোটগল্প আর অণুগল্প লিখি । ফেসবুকে বিভিন্ন সাহিত্যিক গ্রুপে ছোটগল্প লিখে পাঠকের প্রশংসা পেয়েছি । ফেসবুকে প্রায় দেড়শো গল্প লিখেছি । একটি যৌথ গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে যার নাম "আনন্দধারা" গল্প সংকলন -২ । আমার চারটি ছোটগল্প এতে স্থান পেয়েছে । এছাড়া বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিন যেমন পারিজাত , নতুনপাতা ,আলাপন , পুরুলিয়া সংহতি ,মুকুর ,নব আশুগ প্রভৃতিতে আমার লেখা ছোটগল্প স্থান পেয়েছে । পাঠকের বিচারকে শ্রেষ্ঠ বিচার বলে মনে করি । আর এ নিয়েই সাহিত্য জীবনের পথ হেঁটে চলেছি !

নূপুর 

অভয় হঠাৎ নূপুর জোড়া  দেখে  একটু চমকে যায় ! তার  চেনা চেনা লাগছে ! এইরকম  নূপুর জোড়া  তো সেদিন শ্যামলী মেয়ের জন্য কিনে এনেছিল । ঝিমলির নূপুর পরার খুব শখ যে !
সকাল থেকেই আজ বেশ ‌তাড়াহুড়ো চলছিল ।আজ অনেক নতুন মাল এসেছে । তাদেরকে নতুন ঠিকানায় পৌঁছে দিতে হবে । তাই  সকালবেলায় আর একমাত্র মেয়ে ঝিমলির সাথেও দেখা হয়নি। বাড়িতে সকালবেলায় এককাপ চা খেয়েই বেরিয়েছিল।এই কাজে অনেক চাপ ! মেয়ে পাচারের কাজে অনেক ঝামেলা! তবে মোটা টাকার রোজগার ! কম বয়সী কিশোরী মেয়েদের এখন বাজারে খুব চাহিদা ! রাতারাতি সব মেয়েরা বিদেশে পাচার হয়ে । রমরমিয়ে চলছে দেহ ব্যবসা ! আজ পাঁচটে কিশোরী মেয়েকে অপহরণ করে আনা হয়েছে ! পা থেকে মাথা পর্যন্ত একেবারে ঢাকা ! দেখার উপায় নেই ! আজ তো অভয়ের দায়িত্ব ছিল মেয়েগুলোকে তাদের নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার ! তাই অভয় তাদের জাহাজ ঘাটে অনেকক্ষণ আগেই পৌঁছে দিয়েছে । এতক্ষণ তো নৌকা  হয়তো তার ঠিকানায় পৌঁছেও গেছে ! সারাদিনের কাজের হিসেব বুঝে তার পাওনা টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য সে গাড়িতে ওঠে পড়ে । ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত আটটা বাজে । এখনো বাড়ি ফিরতে এক ঘন্টা লাগবে ! অমনি গাড়ির ভেতর এক জোড়া নূপুর দেখে একটু চমকে গেলেও পর মূহুর্তে নিজেকে এইভেবে  শান্ত করে যে ,একরকমের নূপুর অনেক জনের থাকতে পারে ! ঝিমলি এতক্ষণে হয়তো  খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ! এবার  মুঠোফোনটা খোলে । এতক্ষণ বন্ধ রেখেছিল !দেখে কুড়িটা মিসকল ! বাড়ি থেকে! অমনি অভয়ের মুঠোফোন বেজে ওঠে ! ওপাশে স্ত্রীর গলা শোনা যায় ,তোমাকে কতবার ফোন করেছি ! ঝিমলিকে কেউ অপহরণ করে নিয়ে গেছে ! খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না !
অভয় আর ভাবতে পারে না ! মাথাটা ঝিমঝিম করতে থাকে ! তবে কি  ঝিমলি! নূপুর জোড়া হাতে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে ! বিড়বিড় করে বলতে থাকে  ,আমার পাপের ফল ….. পাপের ফল … মেয়েকে গ্রাস করলো !
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।