ঘুমের মধ্যে পাশ ফেরে মালতী । মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে,গায়ের শ্যামলা রংটা ইদানিং জং ধরা লোহার মতো হয়ে গেছে, বুকের ফুলে ওঠা নরম অংশ ও শুকিয়ে কুঁকড়ে গেছে। কাজ বাড়ির দেওয়া পুরানো রংচটা শাড়িতে সস্তা গোল টিপ আর থেবড়ানো সিদূরে ঘাম জবজব করছে। লক্ষণ মালতীর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে উঠে গিয়ে ফ্যানটা মালতীর মাথার পাশে রেখে এসে ফের বারান্দায় বসে একটা বিড়ি ধরায়। ফেনিয়ে ওঠা ধোঁয়া লক্ষণের চারপাশে লক্ষণরেখার গন্ডি ছাড়িয়ে মাথার থেকে ওপরের দিকে ঘুরে ঘুরে , রেলের জায়গায় বস্তি কলোনির ভাঙাচোরা শ্যাওলাধরা ছোপছোপ দাগ পড়ে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া ঘরগুলোতে বাস করা বেঁকে যাওয়া মানুষগুলোকে ছাড়িয়ে, দূরে কোথাও যেন মিশে যেতে থাকে । সে পথ বেয়ে আসে একটা বৃত্ত।খুব চেনা, একটা সুখী গার্হস্থ্য।যারঅভিমুখরানাঘাট।স্পষ্টরানাঘাটেরপথঘাট, জনারণ্যেরভেতর তিরতিরকরেবয়েচলাজীবনস্রোত,মানুষেরমুখতারভেতরপ্রিয়জনেরা—বাবামাভাইবোনলক্ষণেরপরিবার– সিংপরিবার। লক্ষণেরাঅবাঙালিউত্তরপ্রদেশেরগোরখপুরথেকেরানাঘাটেএসেছিলচটকলেরকাজকরতেদুপুরুষআগে।খানদানওউঁচু ।
রিকশা নিয়ে টুং টাং করতে করতে পাশের ঘরে ঢোকে পড়শি মনোজ। কিছুক্ষণ পরেই মনোজের বউয়ের চিৎকার— মিনসে ঘরেএলি কেন?
ভরদুপুরেও ভরপেট গিলে এসেছে মনোজ ।এরপরমুখনয়মনোজমনোজেরবউয়েরহাতপাক্রিয়াপ্রতিক্রিয়াররূপনেবে। এ বস্তিতে রোজগার ব্যাপার এসব। ঘরে ঘরে অভাব দেবতার বাস।বস্তির মেয়েমানুষেরা তোলা ঝিয়ের কাজ করে,পুরুষেরা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের নয়তো রিক্সা চালায়, রাস্তায় ট্রেনে হকারি করে, মুটে মজুরের কাজ করে, লটারির টিকিট বিক্রি করে অন্যের ভাগ্য ফেরাতে।আর নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে হাত দুটো কপালে তুলে অদৃশ্যে যিনি বসে আছেন তার কাছে কৃপা প্রার্থনা করে। লক্ষণ উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দার টিনের দরজাটা বন্ধ করতে যায়, দেখে দরজার সামনে দিয়ে বস্তির একপাল পোষা ছাগল লেজ তুলে কৃতকর্ম করে ম্যাঁ ম্যাঁ এ,,এ,, করতে করতে চলে গেল, একটা গরু এসে লক্ষণদের টিনের দরজায় খরখর আওয়াজকরে মুখ ঘষতে লাগলো, শুধু সামনের গাছটায় বউ কথা কও পাখিটা সুন্দর সুর করে ডাকছে-বউ কথা কও। লক্ষণ থমকে দাঁড়ায় । কেন যে এ পাখির ডাক ওর এত ভালো লাগে ! হয়তো এই টুকরো টাকরা ভালো লাগাগুলো আছে বলেই শত দুঃখ কষ্টে ও মানুষ বাঁচে ।মানুষভারিঅদ্ভুতনা!
দরজা টা বন্ধ করে লক্ষণ ফিরে এসে ঘরে ডাঁই করে রাখা পুরানো জামাকাপড় জিনিসপত্রের স্তূপের উপর বসে পড়ে।স্তূপেরভেতরথেকেএকটানেংটিইঁদুরবেরিয়েএদিকওদিকদৌড়াতেথাকে ,বোধহয়নতুনআস্তানারখোঁজে।দেখেমুচকিহাসললক্ষণ। এরাওপরিস্থিতিসামলেবাঁচে! আশ্চর্যজীবন।প্রতিমূহুর্তেবাঁচাটাকিঅদ্ভুত। ভেতরথেকেবেরিয়েএলএকটাদীর্ঘশ্বাস।