গল্পকথায় রনিত ভৌমিক

এভাবেও ফিরে পাওয়া যায়

কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করা মাত্রই আজকের তারিখটা দেখে চমকে উঠলাম! ১৫ই ডিসেম্বর। হ্যাঁ! আজকের দিনেই বছর পাঁচেক আগে কলকাতা শহরটায় প্রথম পা রেখেছিলাম, শহরটা কিছু বছরের মধ্যে বেশ অনেকটাই বদলে গেছে কিন্তু আজও আমার কাছে কলকাতা মানে শুধুই সায়রা। ওর চোখ দিয়ে দেখা এই শহরটা এখন কেবলমাত্র সময়ের কালে স্মৃতি বন্দি।
সেবার এক কনফারেন্সে যোগ দিতেই আমার দিল্লি থেকে কলকাতা আসা। আর ওইদিন কলকাতার অফিসে মিটিং সেরে হোটেলে ফেরার জন্য সবে মাত্র বাসে উঠেছি, এমন সময় বেশ কঠিন গলায় একটি মেয়েকে আমার উদ্দেশ্যে বলতে শুনলাম,
-এটা কি আপনাদের সিট?
প্রথমে মেয়েটির কথা শুনে একটু অবাক হয়েছিলাম কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই বুঝতে পারলাম বাসের একটা মাত্র খালি সিট দেখে আমি যেই সিটে বসে পরেছিলাম, সেটা আদতে একটি লেডিস সিট। ফলে, নিজের ভুলটা ওই সময় স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।
তবে মেয়েটিকে লক্ষ্য করে দেখলাম, তার মধ্যে একটা স্নিগ্ধ ভাব আছে। আমার প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না যে এমন একটি মেয়েও কঠিন কথা বলতে পারে! আসলে অনেকে মনে করে সুন্দরী মেয়েরা নাকি ধমক দিতে পারে না। কিন্তু আমার মনে হয় কঠিন গলায় কথা বলার ধরণটা সুন্দরী মেয়েদের চরিত্রে এক আলাদা মাত্রা যোগ করে।
এদিকে, সিটটা ছেড়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম। ব্যাগ সহ আমার দেহটাকে বাসের রড ধরে ঝুলতে দেখে বোধহয় তার করুণা হচ্ছিল ফলে, সে নিজে থেকেই আবারও বলল,
-আপনার ব্যাগটা আমায় দিতে পারেন।
মেয়েটির কথামত ব্যাগটা তার হাতে দেওয়ার সময় তার পরনে কালো ব্লেজার, গলার স্কার্ফ আর মুখের মেকআপ দেখে মনে হল, সে শুধু সুন্দরীই নয় বেশ আধুনিকও বটে! পোষাক আষাক আর তার এই কর্পোরেট লুক দেখে তো তাই মনে হল।
যাই হোক মেয়েটাকে দেখলাম সে যথেষ্ট বিরক্ত! কিন্তু কি সেই বিরক্তির কারণ, সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। টিকিট করার সময় লক্ষ্য করলাম সেও আমারই মতো কন্ডাক্টরকে পার্ক স্ট্রিট নামবে বলল। সূর্য অনেকক্ষণ ডুবে গেছে আর আমি যতদূর শুনেছি ওই এলাকায় হোটেল ছাড়া খুব বেশি অফিস খোলা থাকে না সুতরাং ওই মেয়েটির পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলে যাওয়া নিয়ে আমার মাথায় তখন নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করতে লাগল।
সেই সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে খুব বেশি সময় লাগল না কারণ পার্ক স্ট্রিটে নামা মাত্রই মেয়েটিকে ঠিক আমার হোটেলের পথেই এগতে দেখলাম। আর স্বাভাবিক ভাবে আমিও ওই একই পথে এগচ্ছিলাম কিন্তু মেয়েটি আমাকে তার পিছনে হাঁটতে দেখে ভাবল আমি বুঝি তার পিছু করছি। হোটেল ‘New Tulip’র সামনে এসে সে আচমকা পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে, এক অদ্ভুত চাওনির দ্বারা আমায় যেন অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইল।
তবে আমায় ঘাবড়ে যেতে দেখে সে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
-সেই বাস থেকে লক্ষ্য করছি, আপনি আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভেবে যাচ্ছিলেন, আবার এখন আমার পিছু করতে করতে আমার কাজের জায়গায় এসে পৌঁছেছেন। আপনার প্রবলেমটা কি?
-আপনার প্রথম কথাটা মেনে নিলেও, পরেরটা ঠিক মানতে পারছি না, মিস…।
-মিস.সায়রা আলিফ।
ব্যাস! ছোট্ট একটা জবাবে শুধু নিজের নামটুকু বলে সে আর কোন কথাই বলল না। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, সে ওখান থেকে চলে না গিয়ে বরং আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
তার দিকে চেয়ে আমি একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম আর তারপর বললাম,
-আপনিই বলুন, বাসের লেডিস সিটে যদি কেউ ভুল করে বসে পড়ে আর তারপর কোন এক আপনার মতো সুন্দরী রমনী এসে হঠাৎ ধমক দেয়, তাহলে আমার মতো মাঝ বয়সী এক যুবকের কি অন্য দিকে মন ঘোরানো সম্ভব?
এবার দেখলাম ওর মুখের পেশি একটু সোজা হল। আসলে যতই বিরক্ত হোক না কেন, মেয়েরা সবসময় নিজেদের প্রশংসা শুনলে খুশি হয়! মুখে মৃদু হাসি নিয়ে সায়রা বলল,
– না! আমি আপনাকে বকতে চাইনি আসলে আজ বাড়ি থেকে বেরতে একটু দেরি হয়ে গেছিল আর তাই ঠিক সময় কাজে আসতে পারব কিনা, সেই নিয়ে বড্ড টেনশনে ছিলাম। প্লিজ, ওইভাবে বলার জন্য আমাকে মার্জনা করবেন।
-না! না! ঠিক আছে।
আমি ইচ্ছা করেই তখন আর হোটেলে ঢুকলাম না। বরং হোটেলের উল্টো দিকের রাস্তা ধরে কিছুটা পথ এগিয়ে গেলাম। আমার বিষয় আর কোন কিছু জানার সে আগ্রহ প্রকাশ করল না সুতরাং আমিও নিজের ব্যাপারে আগবাড়িয়ে তাই আর কিছু বলতে গেলাম না। ফলে, সায়রার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ পর্বের সমাপ্তি এভাবেই ঘটেছিল।
একটু পরে যখন হোটেলে ঢুকলাম তখন চারিদিকে চোখ ঘুরিয়েও সায়রার দেখা পেলাম না। ওই সময় মনে হচ্ছিল হয়ত সে আমায় মিথ্যে বলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে কিন্তু পরক্ষনেই নিজের অন্তর থেকে কে যেন বলে উঠল, কি লাভ ওর আমায় মিথ্যে বলে? ফলে, কলকাতা আসার মূল উদ্দেশ্য ভুলে, সেই রাতে আমি শুধু ওই তরুণীকে নিয়েই ভেবে গেলাম।

ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তার টের টুকু পাইনি। পরদিন প্রকৃতি যেন জানালার কাচ পেরনো সূর্যের আলোর মাধ্যমে আমায় নতুন সকালের আগমন বার্তা দিয়ে গেল। ঘুম চোখে সেই বার্তা গ্রহণ করার সঙ্গেই যখন চোখ রগড়াতে রগড়াতে ঘড়ির দিকে তাকালাম, তখন আমার বুকটা যেন ছ্যাঁত করে উঠল! সকাল দশটায় আমার কনফারেন্স আর এদিকে তখন ঘড়িতে বাজে সকাল ৯টা। ফলে, তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়ে নিলাম এবং যেই না রুম থেকে বেড়িয়ে হোটেলের সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত গতিতে নামতে গেলাম, ওমনি সেই মুহূর্ত আমার সামনে এসে দাঁড়াল। ফার্স্ট ফ্লোরে দাঁড়িয়ে থাকা দুই তরুণীর সঙ্গে আমার ধাক্কা লাগায়, তাদের হাতে থাকা ফাইলপত্র গুলো গেল মাটিতে পরে এবং তারা আমার দিকে তাকাতেই, তাদের মধ্যে একটি মুখ আমার যেন বড্ড চেনা লাগল। হ্যাঁ! সেই মুখ আর কারোর নয়, সে সায়রা আলিফ।
একেই হাতে সময়ের অভাব, তারপর আবার মেয়েদের সঙ্গে ধাক্কা সুতরাং ওই মুহূর্তে আমার যে কি অবস্থা, তা কোন ভাবেই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে তাদের মধ্যে যদি একজন সেই নারী চরিত্রটি হন, যাকে কেন্দ্র করে আমার মনের মধ্যে বিগত কিছু ঘণ্টা ধরে নানা প্রশ্ন যেন সমুদ্রের ঢেউয়ের মত সমস্ত চিন্তা ভাবনাকে উথালপাথাল করে দিচ্ছে। ‘সরি’ বলতে যাব এমন মুহূর্তে সায়রা কৌতূহলপূর্বক আমার দিকে চেয়ে বলল,
-আপনি এখানে? কীভাবে?
ফ্লোর থেকে ফাইলটা তুলে সায়রার হাতে দিয়ে বললাম,
-সরি, তাড়াহুড়োয় আপনাদের একটু সমস্যায় ফেললাম।
-(সায়রার তিক্ত জবাব) আমার প্রশ্নের আশা করি এটা উত্তর নয়।
-(ওর কথা শুনে ওর পাশের মেয়েটি আমার উদ্দেশ্যে বলল) প্লিজ স্যার, আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না। আসলে নতুন জয়েন করেছ তো, তাই হোটেলের কাস্টমার আর কর্মীর মধ্যে গুলিয়ে ফেলেছে।
-(উত্তরে আমি তাকে বললাম) না! না! ভুল করছেন। এ ক্ষেত্রে ভুলটা আমার তরফ থেকেই হয়েছে, তাই ক্ষমাটা আমারই চাওয়া উচিত। কি তাই তো মিস.সায়রা?
সায়রার কিছু বলার আগেই সেই মেয়েটি তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে নীচে নেমে গেল এবং আমারও কনফারেন্স থাকায় ওই মুহূর্তে আমি বিষয়টা মাঝ পথেই ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে বাধ্য হলাম। ফিরে এসে অবশ্য সায়রাকে দেখতে পাইনি ঠিকই, তবে ওর সঙ্গে থাকা সেই মেয়েটিকে অবশ্যই দেখতে পেয়েছিলাম। আর দেখা মাত্রই তার থেকে নানা ভাবে সায়রার ব্যাপারে জানার চেষ্টা করলাম।
সায়রা হল ‘New Tulip’এ সদ্য জয়েন করা নতুন রিসেপসনিস্ট। ওর বাড়ি কলকাতার বেলেঘাটায় আর এখন আপাতত এখানে সে নাইট শিফটেই ডিউটি করছে। তবে আরেকটা বিষয়ও বলে রাখা ভালো যে পৌলমী অর্থাৎ সেই মেয়েটিও আদতে রিসেপসনিস্ট, ওর আবার ডে শিফটে ডিউটি। এই ডে শিফট আর নাইট শিফটের সময়গুলো জেনে, আমি চলে গেলাম নিজের রুমে।
ঘড়ির কাঁটা তখন সবে ৭টা ছুঁই ছুঁই করছে আর আমি হোটেল থেকে বেড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে এশিয়াটিক সোসাইটির সামনে আসতেই ওই একই রকম কালো ব্লেজার আর গলায় স্কার্ফ দেওয়া সেই চেনা মুখটা রাস্তার ওপর দিকে ফুটে উঠল। শীতের মধ্যে পার্ক স্ট্রিটের ঝলমলে আলোয় সায়রার সৌন্দর্য যেন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। সেই মুহূর্তে ওর মুখের ওই লালিত্য আমায় যে কোন মোহনার পাড়ে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাল, তা হয়ত আমার নিজের কাছেও একেবারে অজানা।
রাস্তা পার করার সময় সায়রা হয়ত আমাকে ঠিকই লক্ষ্য করেছিল কিন্তু আমার সামনে আসতেই সে এমন ভাব করল যেন আমাকে সে দেখতেই পাইনি, বলা যেতে পারে সে আমাকে ওই মুহূর্তে দেখেও না দেখারই ভান করেছিল। তবে কিছুটা পথ এগোনোর পর সায়রাকে লক্ষ্য করলাম, সে যেন আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছিল। সেই তাকানো দেখে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। দ্রুত পায়ে হেঁটে তার সামনে গিয়ে হাজির হলাম, আসলে শহরের এই তরুণীর প্রতি যে আমি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছি, সেটা আমি ততক্ষণে বেশ বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু সায়রা? সে কি বুঝতে পেরেছিল?
উত্তরটা অবশ্যই হ্যাঁ! কারণ আবারও ওইদিন ছোট্ট একটা কথায়, সায়রা আমাকে অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিয়ে গেল। সে বলল,
-আলোকসজ্জা দেখে ঘর পছন্দ করবেন না, স্যার।
সারারাত আমি দু-চোখের পাতা এক করতে পারিনি। সায়রার কথাটা শুধুই যেন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।

পরদিন আমি ওকে সামনে পেয়েও, এড়িয়ে হোটেলে ঢুকে গেলাম। ওই কদিন আমি খানিকটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই ওর সামনে না আসার চেষ্টা করতাম। আসলে আমার মনের ভেতর যে একটা রাগ জন্মেছিল, সেটা আমি অস্বীকার করতে পারব না। প্রথম দিকে সায়রা আমার ভালোবাসাটা-কে পাত্তা দিতে চাইনি। ওর মনে হয়েছিল ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটা আদতে মেয়েদের রূপ দেখে ছেলেদের কেবল ‘দু-দিনের ভালো লাগা’ মাত্র।
তবে, ওর এই ধারণাটা বদলাতে অনেকটা সময় লেগেছিল। কলকাতা থেকে আমার দিল্লি ফেরার দিন, চেক-আউটের সময় হোটেলের রিসেপসনে দেখি সায়রা উপস্থিত। রিসেপসনিস্ট সায়রাকে সব কাজ শেষে, ছোট্ট থাঙ্কস গিভিং টোকেনের সঙ্গে একটা কাগজ হাতে গুঁজে দিয়েছিলাম যাতে লিখেছিলাম-
‘আকর্ষণীয় আলোকসজ্জায় ঘর সাজানো থাকলেও, আমি কিন্তু সুন্দর মনের একটি ছোট্ট প্রদীপের আলোতেই বেশি বিশ্বাসী’।
ব্যাস! তারপর আর পিছনে না তাকিয়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে সোজা এয়ারপোর্ট। দিল্লি ফিরে আসার পর হঠাৎ একদিন আমার ফোনে একটা অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ ঢুকল আর ওই মেসেজটা খুলতেই যে লেখা গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল, তা হল-
‘মেয়েদের সামনে আপনি বেশ ভালোই কথা বলতে পারেন। তবে, মানুষটা আপনি খারাপ নন। আপনার এই সুন্দর কথা বলার কারণেই, আপনাকে আমি ভালবেসেছি। যার আড়ালে আছে একটু অভিমান স্বরূপ কথা বলার ধরণ। পারলে একবার এই নম্বরে ফোন করবেন। আল্লা আপনাকে ভালো রাখুক  -সায়রা’।
হ্যাঁ! ওই শুরু আমাদের প্রেম। ফোনের ওই একটা মাত্র মেসেজেই, আমরা আলাদা আলাদা শহরে থাকা দুটো মানুষ যেন অদ্ভুত ভাবে একসূত্রে বাঁধা পড়ে গেলাম। প্রথমদিকে আমাদের তেমন ফোনে কথা হত না, কারণটা অবশ্যই সায়রার পরিবার। হ্যাঁ! ওর পরিবার বড্ড সংরক্ষণশীল। ফলে, সেই সময় আমার মন যেন এক ছুটে কলকাতার ওই তরুণীর কাছে এসে ধরা দিতে চাইত সুতরাং কোনক্রমে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে আমি চলে এলাম কলকাতা।

তারপর মায়াবী এই শহরটাকে সায়রার পাশে থেকে আমার চেনা ওই শুরু। কলকাতার অলিগলিগুলো দিল্লি শহরটার থেকে অনেকটাই আলাদা। এখানকার পাড়ার রক কালচারটা যেন এই ব্যস্ত শহরটার সকল ক্লান্তি দূর করে দেয়। প্রভাতে রবি ঠাকুরের গান দিয়ে এখানে যেমন দিনের আরম্ভ হয়। ঠিক তেমনি রাতের সমাপ্তি ঘটে আগামীর নতুন স্বপ্ন নিয়ে।
আমার শিশুসুলভ কথা শুনে মাঝে মধ্যেই খুব হাসত সায়রা। আর ওর মুখে ওই হাসি ছিল আমার কাছে যেন সারা বিশ্বের সুখ। একদিন রাস্তায় চলতে চলতে, সায়রার হাতটা আমার হাতের সঙ্গে বারবার ঠেকছিল। আমি যে ইচ্ছাকৃত ভাবে কাজটি করছিলাম তেমনটাও নয়, তবে সেদিন হঠাৎ কি যে হল আমার ঠিক বুঝতে পারলাম না। অন্তর থেকে এক অন্য আমি যেন সেদিন বেড়িয়ে এল এবং সে কিনা সায়রার হাতটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই ধরতে চাইছে অথচ তা ধরার অবকাশ নেই কারণ সায়রা যে এইসব একেবারেই পছন্দ করে না, সেটা সে অনেকদিন আগেই আমায় জানিয়ে দিয়েছিল সুতরাং সেই অন্তর থেকে বেড়িয়ে আসা ওই অন্য আমিটা খুব ভয় আর দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে সায়রার দিকে চেয়ে মৃদু স্বরে ওকে জিজ্ঞেস করল,
-তোমার হাতটা একটু ধরব, সায়রা?
-কিন্তু সৌরভ, কেউ দেখে নিলে?
হ্যাঁ! ওর কথাটা শুনে আমি চমকে উঠেছিলাম। কারণ আমি ভাবিনি যে সায়রার উত্তরে না-এর চেয়ে, হাত ধরার পর কেউ দেখে নিলে কি হবে, সেই আশঙ্কাটাই ওর মাথায় ঘুরবে।
– (ওর সেই আশঙ্কা দূর করতে আমি বললাম) তোমার ওড়না দিয়ে ঢেকে রেখো, দেখবে কেউ দেখতে পাবে না।
সায়রা মুচকি হেসে ওর হাতটা রাখল আমার হাতের ওপর। ওড়নাটা হাত দুটোকে আড়াল করল লোকচক্ষু থেকে। তারপর শুরু হল এক অন্য পথ চলা। সায়রার ওই সামান্য হাত ধরা দেখে, আমার মনে তখন আর ওর আমার প্রতি ভালোবাসা নিয়ে দ্বিধা রইল না। ওর ভালোবাসাটা হয়ত এবার পূর্ণতা পেল কারণ ওই হাত ধরার মাধ্যমে সায়রা আমাকে বুঝিয়ে দিল যে সে আমায় সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্বাস করে।
ওই দিনটার পর, প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেল। আমরা কখনো উত্তর কলকাতার অলিগলি, কখনো গঙ্গার ঘাট, কখনো আবার ময়দানের খোলা আকাশের নীচে চারিধারের সবুজের ভিড়ে একে-অপরের হাত ধরে যেন বাঁধন ছাড়া পাখিদের মত ঘুরে বেরিয়েছি। আমাদের এইসবের মধ্যেই প্রেম শব্দটা লুকিয়ে থাকত, যা ছিল অনেকের গল্পের চেয়ে আলাদা। সায়রার কোলে মাথা রেখে আমি যেমন কোরানের বাণী শুনতাম, ঠিক তেমন করেই আমার মুখে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকার প্রেম কাহিনি শুনত সায়রা।
মনে আছে সেবার এক গোমাংসের দোকানের পাশ দিয়ে আমরা হেঁটে যাচ্ছি, এমন সময় আমার চোখে পড়ল ওই দোকানে ঝুলতে থাকা গরুর অর্ধেক দেহগুলো, যা দেখে আমার  শরীর এতটাই খারাপ হয়ে গেছিল যে টানা দু-দিন হোটেল থেকে আর বেরতে পারিনি। আমি হিন্দু ঘরের ছেলে সুতরাং আমার ওই দৃশ্য দেখে এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু সায়রা?
না! ভালোবাসাটা যে কোন জাত-ধর্ম মেনে হয় না, তারই আবার প্রমাণ দিল সে। সায়রা মুসলিম ঘরের কন্যা সন্তান হয়েও আমার তথা ওর ভালোবাসার জন্য নিজের খাদ্য তালিকার সবচেয়ে প্রিয় খাবারটাই সে কিনা সারাজীবনের জন্য ত্যাগ দিল। ওই ঘটনার পর, সায়রা আর কখনো গোমাংস মুখে তোলেনি।
ছোটবেলার অর্ধেকটা সময় শান্তিনিকেতনে কাটানোর সৌজন্যে, বসন্তের আকাশটা আমার কাছে ছিল ভীষণ প্রিয়। কিন্তু আজ আর সেই সব অনুভূতি নেই। বসন্তের বাতাসে মিশে থাকা রঙিন ক্যানভাসটাই এখন কেমন যেন ফ্যাঁকাসে হয়ে গেছে। সায়রার পরিবার যে একজন হিন্দু ঘরের ছেলেকে তাদের মেয়ের স্বামী হিসেবে কখনোই মেনে নেবে না, সেটা হয়ত আমরা দুজনেই জানতাম বিশেষ করে যখন সায়রার পরিবার খুবই সংরক্ষণশীল। সব জেনে বুঝে তবুও আমরা একটা ঝুঁকি নিয়েছিলাম। হ্যাঁ! ঝুঁকিই বটে কারণ আমাদের সমাজ যতই বলুক যে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে কিন্তু বাস্তবে, গোটা সমাজকে যদি একটা আতশ কাচের নিজে ফেলা হয়, তাহলে হয়ত অনেক কিছুই আমাদের সামনে উঠে আসবে। যেমন উঠে আসবে মানুষের মনে আজও ভালোবাসার চেয়ে ধর্ম-জাত শ্রেণি এই বিষয়গুলোরই বেশি প্রাধান্য। গুরুত্ব নেই শুধু ভালোবাসার।

সেবার দিল্লি ফিরে যাওয়ার সময় আমাকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে এসে সায়রা পরের বার ওর জন্য যাতে দিল্লির মিনা বাজার থেকে দু-গাছা কাচের চুরি আনি সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছিল। সেই দিন একবারও মনে হয়নি যে এটাই সায়রার সঙ্গে আমার শেষ দেখা। আর কখনোই যে ওকে স্পর্শ করতে পারব না। দিল্লি ফিরে প্রথম ধাক্কাটা খেলাম যখন ওই রাতে সায়রার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়ে জানতে পারলাম ওর নম্বরটা- ‘আউট অফ রিচ’।
কোন ঝগড়া বা ভুল-বোঝাবুঝি ছাড়াই ওর ফোনে আমার নম্বরটা ব্লকলিস্টে স্থান পেল। আমি যে অন্য কোনভাবে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইনি তেমনটা নয়। হোটেল ‘New Tulip’এ নানা ভাবে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হল না। কিছুদিন পর জানতে পারলাম, সায়রা হোটেলের চাকরিটা আমি দিল্লি ফেরার পরদিনই ছেড়ে দিয়েছে।
ফলে, ওর এই হঠাৎ পরিবর্তনের আসল কারণ জানতে আমি আবারও কলকাতায় পা রাখলাম। তবে এবার আর ‘New Tulip’ নয়। সায়রার বাড়ি বেলেঘাটায় সুতরাং ওই এলাকার সংলগ্ন এক হোটেলই সেবার উঠেছিলাম। বেলেঘাটা সহ চারিপাশের সমস্ত এলাকা তন্নতন্ন করে খুঁজেও সায়রা বা ওর পরিবারের কোন খবরই যোগার করতে পারলাম না। সায়রা আমাকে অনেকবার ওর বাড়ির ঠিকানা দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি ওর কথা শুনিনি। ভেবেছিলাম ঠিকানা নিয়ে রাখার চেয়ে, পরের বার কলকাতা এসে একেবারে সায়রার সঙ্গে ওর বাড়িতে গিয়ে ওর আব্বুর সামনে দাঁড়াব। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, তাই না?? কে জানত সায়রার ঠিকানাটা না জেনে রাখাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে দাঁড়াবে!
প্রায় গোটা একটা সপ্তাহ কেটে গেল কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও সায়রার দেখা পেলাম না। রবীন্দ্র সদনের সিঁড়িতে সেদিন একলা বসেছিলাম। চোখের সামনে একের পর এক দৃশ্য ভাসতে লাগল- আমাদের একসঙ্গে সিনেমা দেখার দিনে সায়রার বড়দার সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়া এবং তারপর কোনক্রমে পালিয়ে বাঁচা। ওইদিন আমার হাতটা সায়রা ওর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে শক্ত করে ধরে থাকার মুহূর্তটা আমি যেন বারবার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম আর তখন কষ্টে বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছিল।
কি হল সায়রার? ওর পরিবার কি আমাদের সম্পর্কের বিষয়টা জানতে পেরে গেছিল? সায়রা কেন কিছু না বলে এইভাবে আমাকে ছেড়ে দূরে হারিয়ে গেল? ভালোবাসার অর্থ কি তাহলে ওর কাছে এটাই ছিল? এইসব প্রশ্ন মনে নিয়ে যখন রবীন্দ্র সদন চত্তর ছেড়ে বেরচ্ছি এমন সময় পৌলমী অর্থাৎ ‘New Tulip’এর সেই আরেক রিসেপসনিস্টের সঙ্গে দেখা!
ওর থেকেই খবরটা শুনে জীবনে দ্বিতীয় আঘাতটা পেলাম। হ্যাঁ! ওর কথা অনুযায়ী পরিবারের কথা মেনে সায়রা চাকরি ছেড়ে এখন বোম্বে চলে গেছে আর ওখানেই ওর নানুজানের ঠিক করে দেওয়া পাত্রের সঙ্গে সায়রার বিবাহ সম্পূর্ণ হয়েছে। ব্যাস! এইটুকু খবরের জন্যই হয়ত মনের মধ্যে বেঁচে থাকা ভালোবাসার বাড়িটা দুমরে মুছরে একেবারে শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। মনের মধ্যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলাম আর নয়, কলকাতার সঙ্গে আমার সমস্ত সম্পর্ক এখানেই শেষ। যেই শহরটা আমাকে ভালবাসতে শেখালো, সেই কিনা ভালোবাসা শব্দের কঠিন দিকটাও দেখতে শিখিয়ে গেল! দিল্লি ফেরার সময় কলকাতা এয়ারপোর্টের বাইরে একটা ব্যানারে লেখা-“ভালো থাকবেন” কথাটা দেখে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল। সেই ব্যানারে লেখা কথাটা কাকে যে সান্ত্বনা জানাচ্ছিল, সেটা আমার সত্যি জানা নেই।

পাঁচটা বছর কেটে যাওয়ার পরও আমি সায়রা এবং ওর দিয়ে যাওয়া আঘাতটা কিছুতেই ভুলতে পারিনি, যেমন ভুলতে পারিনি ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটা। তাই আজ আবারও দিল্লি ফিরে যাওয়ার আগে শুধু এইটুকুই বলব, হ্যাঁ! সায়রার তুমি ভালো থেকো, তোমার স্বামী আর সংসার নিয়ে।
ফ্লাইটের সময় তখনও হয়নি কিন্তু আমি পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলটা শেষ বারের মত আরেকবার ঘুরে দেখার জন্য একটু আগেই হোটেল থেকে চেক আউট করেছিলাম। ঘুরতে ঘুরতে এসে দেখি হোটেল ‘New Tulip’ এখন বদলে হয়েছে ‘Sonika’s Palace’ এবং খানিকটা এগোতেই রাস্তার ওপর দিকে একজন মহিলাকে আমার উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে দেখে একটু অবাক হলাম। তবে সে সামনে আসতেই তাকে চিনতে পারলাম। পৌলমী, হ্যাঁ! সে এখন ‘Sonika’s Palace’-এর প্রধান রিসেপসনিস্ট। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দু-চার কথা বলে যখন এগিয়ে যাচ্ছি এমন সময় সে পিছন থেকে ডেকে বলল,
-আপনার সায়রা আপনার সঙ্গে বেইমানি করেনি, স্যার।
কথাটা শোনা মাত্রই মাথাটা কেমন যেন ঘুরে গেল এবং ছুটে গেলাম পৌলমীর কাছে এবং জানতে চাইলাম কেন সে এরকম কথা বলে আমাকে আবারও পুরনো সরণিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইল?
– (পৌলমীর ছোট্ট একটা জবাব) পুরো ঘটনাটা জানতে হলে আমার সঙ্গে চলুন।
পৌলমীর সঙ্গে তারপর আমি এগিয়ে চললাম আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক অজানা সত্যের দিকে। আকাশে সূর্যটা যেন সেদিন ইচ্ছাকৃত ভাবেই অস্ত যেতে দেরি করছে। মানিকতলা হয়ে যখন আমরা বাগমারি মুসলিম কবরস্থানের পাশ দিয়ে হাঁটছি, তখন কেন জানি না মনটা খুব অশান্ত লাগছিল এবং কবরস্থানের ঠিক মূল ফটকের সামনে এসে যখন উপস্থিত হলাম, তখন আমার হাত-পা সব যেন কেমন অবশ হয়ে যাচ্ছিল। যেটা কখনো কল্পনাও করিনি, সেটাই কিনা আদতে বাস্তবে ঘটল।
-(সেখানকার একটি কবরের সামনে গিয়ে পৌলমী আমাকে হাত দেখিয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলল) এখানেই সায়রা বিগত পাঁচ বছর ধরে ঘুমিয়ে আছে। সেদিন রবীন্দ্র সদনে আপনাকে বলা আমার প্রতিটা কথাই ছিল সায়রার শিখিয়ে দেওয়া মিথ্যে। সায়রার পরিবার ওর বিবাহ ঠিক করেছিল ওর নানুজানের দেখে দেওয়া এক পাত্রের সঙ্গে সুতরাং হাজার বলা সত্ত্বেও ওর পরিবার সেই বিবাহ ভাঙতে রাজি ছিল না। আর সায়রার পরিবার কখনোই হিন্দু ঘরের ছেলের সঙ্গে ওর বিবাহ দিতে রাজি হত না সুতরাং একদিকে আপনার প্রতি ওর ভালোবাসা আর ওপর দিকে নিজের পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা, কোনওটাকেই যে সায়রা উপেক্ষা করার স্পর্ধা দেখাতে পারেনি। ফলে, রোজ নিজের সঙ্গে লড়াই করে গেছে মেয়েটা আর শেষে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমাকে দিয়ে সেদিন আপনাকে মিথ্যে বলিয়ে, আপনাকে ওর জীবন থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দেবে যাতে সাময়িক কষ্ট পেলেও, আপনি সময়ের সঙ্গে ওকে ভুলে গিয়ে পরে নিজের জীবনে ভালো থাকতে পারেন।
– (আমি সমস্ত কৌতূহল নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম) কিন্তু এভাবে নিজেকে শেষ কেন?
– (উত্তরে পৌলমী বলল) এর সঠিক ব্যাখ্যা হয়ত আমার পক্ষেও দেওয়া সম্ভব নয়,স্যার। আমি জানতাম ওইদিনের পর সায়রা কলকাতা থেকে অনেক দূরে কোন এক গ্রামে গিয়ে সেখানকার এক অনাথাশ্রমে দেখাশোনার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করবে। কিন্তু সেই গ্রাম যে আলোকবর্ষ দূরে হবে, সেটা বুঝতে পারিনি।
পৌলমী কথা শেষ করে ওই স্থানে আমাকে একা রেখে সে বেড়িয়ে গেল। সূর্য প্রায় ডুবে গেছে, পাখিরাও যে যার মত ঘরে ফিরে যাচ্ছে আর আমি? না! ফ্লাইট ভুলে তখন আমি অবাক চোখে দাঁড়িয়ে রইলাম কবরস্থানের ওই জায়গায়। হ্যাঁ! সেখানেই তো নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে আমার সায়রা।
এতবছর ধরে ভালোবাসার প্রতি যে ঘেন্না জন্মেছিল আমার মনে, আজ যেন সবটাই এক ঝটকায় গুড়িয়ে গেল। অনেক কষ্টে নিজের চোখ দুটোকে ধরে রেখেছিলাম কিন্তু ক্রমশ তারা ঝাপসা হয়ে এল আর ধীরে ধীরে চোখের কোনা দিয়ে জল পড়তে লাগল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, চোখের জল মাটি স্পর্শ করবে এমন সময় অদ্ভুত ভাবে ওই কবরের ওপর বেড়ে ওঠা ফুল গাছটি থেকে একটি ফুল মাটিতে খসে পড়ল আর আমার চোখের জল স্থান পেল সেই ফুলটির কোলে।
বহু বছর আগে ময়দানের খোলা আকাশের নীচে আমি সায়রার কোলে মাথা রেখে নিজের জীবনের অনেক দুঃখ কষ্ট ঠিক একই ভাবে কান্নার মাধ্যমে উজাড় করে দিতাম। আজকের দিনটা তাই বেদনার হলেও, আমার কাছে এর মূল্য অনেক। কে বলে ভালোবাসা মিথ্যে? ভালোবাসা মানে দুঃখ? আমি মনে করি ভালোবাসতে জানলে, সারা পৃথিবীতে ভালোবাসার চেয়ে মধুর বোধহয় আর কিছু হয় না। ফলে, একে-অপরের প্রতি ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তাহলে বলব- হ্যাঁ! ভালোবাসা, এভাবেও ফিরে পাওয়া যায়।

(সমাপ্তি)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।