গল্পসল্পে অলিভা

অভাব

বছর ২০ আগের কথা| রাণী জন্মাল এক কন্যাসন্তান হয়ে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে খুশির বার্তা হয়ে| বাবার আদুরে ছোট্ট মেয়েটি ঘরের লক্ষী | তাই সকাল ৯ টায় বাবা রোজ ডাল-ভাত খেয়ে , রাণীর কপালে চুমু খেয়ে অফিসে বেরোয়,” মা রে আসি,কাজে না গেলে পেট চলবে কী করে?কাঁদেনা মা, কথা দিলাম তাড়াতাড়ি ফিরে এসে খেলা করব|” বাবা বিদেয় নিতেই মা ঘুম পাড়িয়ে ঘরের কাজ সারে| কাজ শেষে মা-মেয়ে তে অপেক্ষায় থাকে পথ চেয়ে,কখন কর্তা ফিরে আসবে?
Private কোম্পানির কাজ তো; কাজের চাপে রাণীর বাবা মাথা তুলতে পারেনা| তাও মেয়ে বউ এর মুখ চেয়ে রক্ত জল করে উপার্জন করে। তার আশা ছিল সংসারে একদিন অর্থোন্নতি হবে| এদিকে বাজার দর আগুন, মেয়েরও ৩ বছর হয়ে গেল দেখতে দেখতে|
রাণী টা হয়েছে বড্ড আদুরে স্বভাবের| তাই বাবা বাড়ি ফিরতেই চোখ লাল করে কেঁদে বাবার গলা জড়িয়ে বলে “বাবাই বাবাই,মা আমায় খুব মেরেছে পড়া পারিনি বলে,তুমি মা কে বকে দাও|”
মায়ের শাসনে আর বাবার আদরে বড় হয়ে ওঠে রাণী; ভরতি হল সরকারী স্কুলে|মা-বাবার কষ্ট টা ভালই বোঝে সে| তাই মুখ ফুটে কখনও আবদার করেনা মা/ বাবাই অমুকটা চাই| স্কুলে সব বন্ধুদের চোখের মণি ক্লাসে rank করা রানী|
বাবার মাথায় পাথর চাপা টেনশন; এই সীমিত মাইনেয় এই চড়া বাজারে খরচ মিটিয়ে কী করে রাণীকে নিজের পায়ে দাঁড় করাবে ? দিনে টেনশন ,রাতে ঘুম নেই ,স্বাভাবিক ভাবেই হাই ডায়াবেটিস্ ,হাই প্রেশার এর হাতে পড়ল রানীর বাবা|
ডাক্তার দেখাবে?? নাহ্ থাক, সেই পয়সায় মেয়ের পড়াশুনো হোক|
রানীর মা বড়ই রাগী| অতিরিক্ত শাসনে আটকে থাকা রানীর সাথে মায়ের সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে |হবেই তো, যদি কোনো মা নিজের মেয়েকে বোঝা মনে করে খরচের হিসেব দেয়|
Graduation পড়ছে রাণী| ওর বাবার চেহারা অর্ধেক ,যা হয় আর কি বেশি স্ট্রেস নিলে| শীর্ণ হাড় জিরজিরে চেহারায় মনের জোরে চলে| স্বামী হারানোর ভয়ে আর সংসার চলবে কী করে ? এই ভেবে মা ও গুমরে থাকে| রানী তো বড় হয়েছে , সবই বোঝে আর এক কোণায় আড়ালে কাঁদে “হে ঠাকুর , আমায় মানুষ করতে গিয়ে বাবাই আজ মৃত্যুপথযাত্রী ??”
মা-বাবার একমাত্র ছোট্ট রাণী আজ উপার্জনের চেষ্টায়| ঘুমে সে স্বপ্ন দেখে বাবাই কে বলছে “এই নাও বাবাই ,,প্রথম মাসের মাইনে পেয়ে তোমার জন্ন ২ টো সুতির জামা কিনে আনলাম”!! আর বাবাই ও স্বপ্নে মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে কাঁদে ” আমার মা লক্ষী রে, বেঁচে থাক মা, ওগো রাণীর মা দেখো আর অভাব নেই গো আমাদের”|
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।