জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর।
বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন।
চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।
নোনা স্বাদের দিন
মণিদীপার ডিভোর্স হয়ে গেল । বেশ একটা ধুন্ধুমার কাণ্ডের ভেতর দিয়ে হোলো। বেশ কদিন ধরে ফ্যামিলি কোর্টে শুনানি চলেছিল। মণিদীপা কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করে নি। সে শুধুমাত্র একটা অশান্তির সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল।
শুভব্রত তাকে ছেড়ে দিতে চায় নি। মণিদীপা কলেজে পড়ায় । কলকাতায় বাপের বাড়ির একটা অংশ আইনতঃ মণিদীপা একদিন পাবে। এমন চাঁদপানা বৌ কেন কেউ ছাড়তে চাইবে। বিয়ের আগেই যে মেয়ে হবু বরকে ব্ল্যাংক চেক দিয়ে ফেলে, সে রকম বৌকে ছাড়বে কোন আহাম্মক ?
ফ্যামিলি কোর্ট সাধারণতঃ মিল মিশ করিয়ে দিতে চায় । মণিদীপার সাথে শুভব্রতের মিলমিশ ঘটাতে চেয়েছিল তারা।
মণিদীপার মনে হয়েছিল শুভব্রতের সাথে জাস্ট থাকা যায় না। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে অনর্গল মিথ্যে বলে শুভব্রত । আর তার বাবা মা মণিদীপাকে একটা জ্যান্ত মানিব্যাগ বলে মনে করে।
মণিদীপা প্রথমটা থমকে গিয়েছিল। নিজের বাড়িতে স্নেহে প্রশ্রয়ে মানুষ হয়ে সে জানতো না, আপনজনের মুখোশ পরে কেউ সর্বদা তার টাকা হাতিয়ে যাবার প্ল্যান ভেঁজে যেতে পারে। শুভব্রতের বাড়িতে তার না আছে প্রাইভেসি , না আছে সিকিউরিটি। তাই বিয়ের মাস চারেকের মধ্যেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে ফিরে এসেছিল বাড়িতে। ভেবেছিল কিছুদিন চুপচাপ কাটিয়ে দেবে।
একদিন অনেক সাহস সঞ্চয় করে মণিদীপা শ্বশুরবাড়ি গিয়ে নিজের বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া গয়নাগুলো আনতে গেল। আর মায়ের দেওয়া তৈজসপত্র । শ্বাশুড়ি রীতিমতো আপত্তি করলেন। বললেন – না, শুভব্রতের সাথে আলোচনা না করে ওগুলি তুমি নিয়ে যেতে পারো না। মণিদীপা বলার চেষ্টা করলো, ওগুলি আমার যৌতুক, ও আমারই স্ত্রীধন। ওতে শুভব্রতের কিসের দাবী ?
গয়না বা বাসন কিছুই ফেরত আনতে পারে নি মণিদীপা। শুধু নিজের মার্ক শীট আর ভোটার কার্ডটা নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল।
তারপরে ফ্যামিলি কোর্টে ডিভোর্সের মামলা দায়ের করলো মণিদীপা। তার পালটা মামলা করলেন শ্বাশুড়ি। মণিদীপা না কি তাঁর উপরে চড়াও হয়েছিল । হাঙ্গামা করে তাঁর বাড়ি থেকে তাঁর গয়নাগাঁটি লুটপাট করে এনেছে। মেরেছে, আর লোক লেলিয়ে ধর্ষণ করাতে চেয়েছে।
ওয়ারেন্ট জারি হয়ে গেল মণিদীপার বিরুদ্ধে। বেল নিতে হলো। বেল বাবদে কুড়ি হাজার টাকা বিনা রশিদে চেয়ে বসলেন মণিদীপার নিজের উকিল। চোখের জল নীরবে মুছে মণিদীপা কুড়ি হাজার টাকা বের করে দিল। থুতু দিয়ে টাকা গুণে নিলেন তার নিজের আইনজীবী। ক্রিমিনাল কোর্টে ডেটের পর ডেট পড়ে। মণিদীপার খেয়ে শুয়ে সুখ নেই । ঠোঁটের হাসিটি মিলিয়ে গিয়েছে।
ফ্যামিলি কোর্টে নিজের উকিলের শেখানো বুলি ফেলে দিয়ে মণিদীপা বলে বসলো ক্রিমিন্যাল কোর্টে মামলার প্রসঙ্গ। সোজা সরল চোখে বিচারকের দিকে তাকিয়ে বললো – ক্রিমিন্যাল কোর্টে শুভব্রতের বাড়ির তরফে লুটপাট, হাঙ্গামা, এমন কি ধর্ষণের চক্রান্তের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সত্য হলে, তেমন বৌ এর সাথে শুভব্রতের ঘর করতে চাওয়া অনুচিত। আর মামলাটি যদি মিথ্যে হয়, তেমন পরিবারে মণিদীপাকে ফিরে যেতে বলা অন্যায়।
ফ্যামিলি কোর্টে বিচারক জুল জুল করে চেয়ে রইলেন। নিজের উকিলকে একটুও পাত্তা না দিয়ে ক্রিমিন্যাল কোর্টে শুভব্রতের বাড়ির তরফে করা মামলার কাগজ তুলে ধরলো সে।
বিয়ে তো ভেঙ্গে গেল। মণিদীপা এখন স্বাধীন।
ফ্যামিলি কোর্টে কাগজ তুলতে গিয়ে সে পড়লো ফ্যাসাদে। পেশকার একজন মহিলা। তিনি অগাধ টাকা চেয়ে বসলেন।
তার নিজের উকিল তাকে বললেন আপোস করতে । শেষমেশ পাঁচশো টাকা বেফালতু দিয়ে, তবেই আদালত থেকে কখানা কাগজ পেল মেয়ে।
কাগজকটা হাতে নিয়ে বাইরে এসে উকিলের সাথে আর একটিও কথা বলতে ইচ্ছে হল না মণিদীপার। একদলা থুতু উঠে এল গলায়। তার স্বাদ নোনতা।