একটা সময় ছিল যখন আত্মদহনের আগুন খুঁজতে খুঁজতে আলো নিভে এলে সকলেই ফিরে যেতাম। কেউ কারোর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাবার সময় পেতাম না। তবে সকলেই দেখতে পেতাম এশ্বরিক গাছগুলোকে, চিরকাল নিখুঁত হয়ে বসে থাকত সন্ধ্যার দিকে। যারা শোক সভায় দাবানলে পুড়ে গেছে, যাদের পা থেকে মাথা অবধি ক্ষত্রিয় রক্ত, প্রত্যেকেই আগুন খুঁজতে খুঁজতে ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছে সামনের দিকে। এইসব সৌভাগ্য হঠাৎ করে উড়ে আসে মাথার উপর, যখন আমাদের মাথা বলে কোনকিছু থাকে না আর। সেবার গ্রামে বনকুমারের জন্মদিনে কতজন বলেছিল আগুন দেবে, তাদের মাথা দান করবে আমাকে। সামান্য একটা পুড়ে যাওয়া মাথা, যা আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারল না। পুড়ে যাওয়ার নেশা আমাকেইবা এতোটা আচ্ছন্ন করে কেন মেঘা দিদি?
এই সমস্ত সামান্য চাওয়াগুলো কারনে-অকারনে অসামান্য হয়ে যায়। ভালোবাসার পিচ রাস্তায় আচ্ছন্ন হয়ে শুয়ে থাকে মধ্যবিত্ত কুয়াশার মেয়ে। এমন চরম সত্যি জেনেও দিনের পর দিন কালচে ছোপ ছোপ পিচে আগুন খুঁজে চলি। বুকে ঝামা ইটের মতো পাথর নিয়ে হেঁটে যাই পাথুরে দেশে। যেকোনো বয়েসের একটা কালেরপাথর, যে এখনও ক্ষমতা রাখে দাঁতে দাঁত চেপে আগুন জ্বালাতে। এমন যেকোনো মূল্যের সামান্য একটু আগুন পেলে হয়তো আমিও মেঘা দিকে একটা ঘর বানিয়ে দিতে পারতাম! সেই কবে থেকে স্বপ্ন দেখতে দেখতে মেঘা দি এখন গলা পিচ রাস্তার মতো হয়ে গেছে।
এতো আগুন বুকে লুকিয়ে মেঘাদিও কি কোনদিন পাথর হতে চায়নি? আঁচলের আড়ালে মেয়ের ভবিষ্যৎ লুকিয়ে সেও তো আমাকে কতবার পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল প্রকাশ্য দিবালোকে। বেড়াকলমীর পাতার মতো একটা সরু রাস্তা সেই থেকে নিশ্চুপ হয়ে আছে। অথচ এই আগুন জ্বালানো হাতগুলো প্রতিনিয়ত অসহায় ভাবে ঘোরাঘুরি করছে আমাদের আনাচে কানাচে। হয়তো তারা কেউই মুখ ফুটে বলতে পারছে না কুমলাপতার সংকলনের কথা। এমন প্রশ্নের উত্তর বোধহয় মেঘাদিরা ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কেউ বলতে পারে না!
সেইথেকে আগুন খুঁজতে খুঁজতে সমগ্র পৃথিবীতে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। পথে পথে বাতি নিয়ে কয়েকশো বছর ধরে হেঁটে গেলো রঙবেরঙের বাতিওয়ালা ছেলে মেয়ে গুলো। পৃথিবীতে এতো এতো আলোর মাঝে তেমন একটা হাত এগিয়ে দেওয়ার কাউকে পেলাম না আজও, যার হাতে মৃত অক্ষরগুলো তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে বলতে পারতাম, ‘একদিন তুমিও মেঘাদির মতো বোধিবৃক্ষ হবে’। এইটুকু চাওয়া-পাওয়ার ভেতরে আমরাও, পরস্পর উড়ে যেতাম গন্তব্যের দিকে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন