গল্প কথায় সঞ্চিতা কর

সঞ্চিতা কর.... একাধারে একজন প্রযুক্তিবিদ, বাচিক শিল্পী ও লেখিকা। বর্তমানে একটি আর্কিটেকচারাল সংস্থায় কর্মরতা। তার জন্ম উত্তর কলকাতায় ,বেড়ে ওঠা দক্ষিণ কলকাতায়.... ছোটবেলা থেকে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড়ো হয়ে ওঠা তাকে কলম ধরতে আগ্রহী করেছে। আদ্যন্ত প্রকৃতি প্রেমিক সঞ্চিতার লেখায় বার বার ফিরে আসে প্রকৃতির কথা। আশাকরি তিনি তার লেখনী দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করবেন। ' মধুর রূপে বিরাজ' নামক একটি সমাজ সেবা ও সংস্কৃতি মনস্ক সংস্থার তিনি প্রতিষ্ঠাত্রী ও পরিচালিকা।

মাসুদ মিস্ত্রি

মাসুদ মিস্ত্রী পালিয়ে গেল।
লক্ ডাউন তাকে থামিয়ে
রাখতে পারেনি।
পুলিশের ডান্ডার ভয়ও না।
প্রোমোটারের প্রতিশ্রুতি,
চাল ,ডাল, নুন,তেল,
নিজের হাতে ঢালাই করা ছাদ আর প্লাস্টার হীন দেওয়ালের সাময়িক আশ্রয়ও হেরে গেছে ওর আবেগী মনের কাছে।
আসলে ভুলেই গেছিলাম ওরও একটা মন আছে।
অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। হামেশাই ভুলে যাই কাজের লোক, মিস্ত্রী, ঝাড়ুদার,
জমাদার এদেরও মন থাকে, সংসার থাকে, স্ত্রী বা স্বামীর প্রতি একটা নির্ভেজাল প্রেমও থাকতে পারে।
দীর্ঘদিন না দেখা সন্তানের প্রতি পিতৃ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
মাসুদ মিস্ত্রী চলে গেছিল। নিজের জীবন বিপন্ন করেই গেছিল শুধু এই বিপদের দিনে বাবা, মা,স্ত্রী আর সন্তানের সাথে থাকবে বলে। মরতে হলে না হয় এক সাথেই মরবে। ওর মূর্শীদাবাদের ওই
মাটির বাড়ীটাকে শেষবারের মতোই নাহয় প্রাণভরে দেখে নেবে।
পরিবারের সাথে সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে ভাবছিলাম মাসুদ মিস্ত্রী কি বোকা রে বাবা, একবারও ভাবলো না
এই লক্ ডাউনের মধ্যে বাড়িতে যাবে কি করে? পৌঁছবার আগে তো মরেই যাবে।
আসলে আমি তো বিরহ যন্ত্রণা যে কি, তাই তো জানলাম না কোনোদিন।
জানলে বুঝতাম, প্রিয়জনকে অনেকদিন না দেখলে বুকের ঠিক কোনখানে রক্ত ঝরে পড়ে, কোন জায়গায় যন্ত্রণাটা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। হাহাকার করা বুকে কতটা জোড়ে সন্তানকে চেপে ধরে রাখতে ইচ্ছে করে, প্রিয়তমার মুখটা আলতো হাতে ধরে, নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকতে থাকতে মরেও যাওয়া যায়।
শুধু একটিবার পরিবারকে দেখা র জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা তো কোন্ ছাড়, শুধু ভালবাসা আর তীব্র ইচ্ছাশক্তির জোড়ে পৃথিবী ওলোট পালোট করে দেওয়া যায়।
সমস্ত ঝড় থামিয়ে, একটা শান্ত পৃথিবী গড়ে তোলা যায়।
শুধুই ইচ্ছে আর ভালবাসা দিয়ে।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।