গল্প কথায় হেমন্ত সরখেল
গমন
মন্দ্রীম আলো। মান্না দে’র প্রেম শরীরের লোমকূপ ভেদ করে ভেতরের আনাচ কানাচ নাড়িয়ে দিচ্ছে। ঝংকার কখনো পায়ের পাতায় কখনো ঘাড়ে। কৃষ্টি ভেতরে ভেতরে এতোটাই উত্তেজিত যে নিজের পারফরমেন্স সম্পর্কে কন্ফিডেন্স হারাচ্ছে। বছরে তো এই গোনা গুনতি একটা মাস পায় ও, নিজেকে চেনার, জানার, প্রমান করার। সযতনে বাকি দিনগুলোতে শুধু নিজেকে সাজিয়ে রাখা অরূপের জন্য। বেচারাও তো হাড়ভাঙা পরিশ্রমে এই জোয়াল টেনে চলে এই মাসটা ছাড়া সারাবছর। বড়ো পরিবার। দূরত্বের দাম্পত্য। শিষ্টাচার। নিজেকে দুপুরের আধঘন্টার ভাত-তন্দ্রায় কোলবালিশে পিষে বাঁচা। এই তো পেল তিনটে বছর ধরে। এ রাজ্যে না ফিরে সন্তান নেবে না অরূপ। চেষ্টাও করছে প্রচুর। তবু বেসরকারীতে পালিস আর ব্যাকআপবিহীন কর্মীরা পিঠেই প্রশংসা পায়। মনে তার উদযাপন নৈব নৈব চ।
মেয়ে দেখতে গিয়ে অরূপের প্রথম প্রশ্ন ছিল – লেখালেখিতে আগ্রহ আছে?
– অল্পবিস্তর।
– তবে তো মুশকিল। ঘরের কাজ কখন হবে?
– নেশা নেই। ভালো লাগে।
– সবটা সেরে ওটা চলতে থাকলে আমার আপত্তি নেই।
পরে জেনেছিল, অরূপের সে নেশাটা মারাত্মক পর্যায়ের। ওকেও কখনো বারণ করা হয় নি। শুধু ওটা জানার জন্যই নাকি প্রশ্নটা ওভাবে করেছিল অরূপ। এই একটাই নাকি গোপন শর্ত ছিল অরূপের, মেয়েকে এ ব্যাপারে আগ্রহী থাকতে হবে। অসুবিধা হয় নি। যা ই লিখুক, দুজনের অ্যাপে সর্বাগ্রে দুজনের লেখা পৌছে যেত সুপ্রভাতী ঢঙে। এটাই হয়তো জানান দেওয়া- তোমাতেই যাপিত আমি!
প্রায় এগারোটা। তাও ছাদ থেকে না ফিরতে দেখে আরো একবার ফ্রেসনারটা ঘরে ছড়িয়ে কৃষ্টি সিঁড়িতে পা রাখলো। সিঁড়ির বাঁকটা ঘুরতেই অন্ধকারে ওকে একটানে নিজের বুকে ঢুকিয়ে নিল অরূপ। দ্যর্থহীন ঠোঁট পুঁতে দিল ঠোঁটে। কোনক্রমে নিজেকে ছাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল ‘- এখানে নয়, ঘরে’। আজ্ঞাবহ পুরুষ চলে প্রকৃতির ইচ্ছেয়, অন্ধকার থেকে আলোতে।
প্রায় ছুঁড়েই ফেলে দিল কোল থেকে বিছানায়! তাও ভালো লাগে কৃষ্টির। এ পতনেও সুখ। মিশে যেতে চাইছে মানুষটা। ও ও তো চাইছে নিজেকে গলিয়ে দিতে। আদরের একটা মুহূর্তে কেন জানি ওর মনে হল ঠিক যতোটা প্রাণ এ ক্ষণে থাকা উচিত অরূপের সেটা নেই। উদ্দীপনাটা কখনো কখনো যান্ত্রিক যেন। মুদ্রা পরিবর্তনেও বোধটা থাকছে ! ভাবছিলই সবেমাত্র এটা, অরূপ হঠাৎ সরে গেল। বেড সুইচটা অন করতেই চাদরটা টেনে নিল কৃষ্টি গায়ে উপর।
– কী হল?
– দাঁড়াও।
টেবিলের উপরে রাখা ডায়রিটা খুলে কি যেন লিখছে অরূপ। ধবলে স্বেদ চুঁইয়ে পড়ছে। ওর পিঠের দৃশ্য আবার প্রাণ দিল কৃষ্টির ইচ্ছেকে। ফিরল অরূপ।
– কী লিখলে?
– কাল দেখে নিও।
বেড সুইচে হাত গেল অরূপের।
তৃপ্ত। তবু ঘুম আসছে না কৃষ্টির। এমন একটা মুহূর্তে অরূপের হঠাৎ উঠে যাওয়াটা হরেকরকমবা-র মুখে ফেলেছে ওকে। এমন অবস্থায় কেউ ওভাবে সরে যেতে পারে? কি লিখবে বলে সরে গেল? অত গুরুত্ত্বপূর্ণ কী ই বা হতে পারে যা ওকে সরিয়ে নিয়ে গেল? পাশ ফিরে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। ও চুপচাপ উঠে নিজের মোবাইলের মৃদু আলোতে লেখাটা পড়ল।