গুচ্ছকবিতায় উজ্জ্বল সামন্ত

১। জাত-ধর্ম-রাজনীতি

জন সমুদ্রে আমি শুধুই মানুষ দেখি
যার নেই কোন জাত পাত ধর্ম বর্ণ
রক্তের রং লাল নেই বিভেদে বিবর্ণ
মানুষই সত্য মনুষ্যত্ব আসল ধর্ম
জাতপাত ধর্ম নিয়ে রাজনীতি
সাধারণ মানুষ সংবিধানের মৌলিক অধিকারী
চুলচেরা বিশ্লেষণ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত
যাদের ভোটে জিতে তারা আজ পরবাসী ?
রাজনীতির নোংরা খেলায় কলুষিত গণতন্ত্র
বিবেক মনুষত্ব ভুলে শিকার হিংসার ষড়যন্ত্র
শিক্ষার অভাব কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ?
রাজনীতির জাঁতাকলে পেশাই চলছে মনুষ্যত্ব
উন্নয়ন যখন মুখ থুবড়ে কালো টাকা বিদেশে
গরিব স্বপ্ন দেখে একাউন্টে 15 লাখের
ডিজিটালাইজড চিন্তাভাবনা মতাদর্শ পার্থক্যে
নাগরিকত্বের প্রমাণ কি শুধুই আইডেন্টিটি কার্ডে ?
রাজনীতি বুদ্ধি জীবিদের খেলার ছলে
ধর্ম জাতপাতের উস্কানি মনুষ্যত্বের বিভেদে
উন্নয়নের উদ্যোগে দোহাই দিয়ে বেকুব বনে
দেশের দশের সর্বনাশে উদ্যত নিজস্বার্থ সিদ্ধিতে…

২। দৃষ্টি

এনআরসি ও ক্যাবের উস্কানি
মানুষ মনুষত্বের বিবেকের হয়রানি
উদ্বাস্তু কিছু মানুষ আজ বিপন্ন
বাস করে পরদেশে চিন্তায় মগ্ন ।
মানুষের বেড়াজালে দেশ বিভক্ত
গণতন্ত্র মৌলিক অধিকার সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
রাজনীতির রঙে বেকুব বনে নানা ঢঙে
সমাজ মানব জাতি মনুষ্যত্বের খননে
ভেদাভেদ সৃষ্টি লুপ্ত মৌলিক দৃষ্টিতে
জাতি-ধর্ম-বর্ণ যাঁতাকলে পিষছে ।
কিছু মানুষ অসহায় বোবা কান্নায়
এগিয়েছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে
বর্ধিত ভেদাভেদ নেই মনে কোনো খেদ
ধর্মভীরু ও কুক্ষিগত দের করতলে দেশ ।
ঈশ্বরের সৃষ্টি মানুষ মনুষ্যত্বে
নেই কোন ধর্মের প্রলেপ
চলছে রাজনীতি বাড়ছে বিক্ষোভ
আহত নিরীহ জনসাধারণ ব্যাহত জনসংযোগ
রেল লাইনের ধারে নিরীহ যাত্রী ক্ষত বিক্ষত পাথর নিক্ষেপে।
ঠিক ভুলের সংঘাতে অসহায় মনুষ্যত্ব বিবেক
মানবতা মনুষ্যত্ব প্রাধান্যে ।
শেষ হোক ধর্ম ও জাতির নামে হানাহানির রেশ
উন্নয়ন হোক হাতিয়ার জয়ী হোক মৌলিক অধিকার
প্রতিবাদের ভাষা হোক উন্মুক্ত আন্দোলনে
মানুষের মূল্যবোধ মানবিকতার সহিষ্ণু দৃষ্টিতে…

৩। অমানুষ

মানুষ কি লেখা থাকে ? সুদর্শন / কুৎসিত শরীরে
আভিজাত্য ,পোশাকে, সাজসজ্জায় আড়ম্বরে
সহাস্য মুখমন্ডলে জ্ঞানের বুলি উগরে
আমিই সেরা আমিই শ্রেষ্ঠ আমার আমিত্বে
ব্যবহারই মানুষের পরিচয় মনে করিয়ে
মানবধর্মই শ্রেষ্ঠ মানুষ মনুষ্যত্বের বিকাশে
অমানুষ অহংকারে অন্ধ অর্থ ক্ষমতার দম্ভে
চাটুকারিতা অহরহ তেলা মাথায় তেল দিয়ে
মনুষ্যত্ব অসহায় রাস্তাঘাটে কর্মস্থলে
যদি কোন বিপর্যয় ঘটে অ্যাক্সিডেন্টে
মানুষের মুখোশধারীরা মুখ ফিরিয়ে
সেলফি তোলায় ব্যস্ত সাহায্যের হাত সরিয়ে
সেবাই পরম ধর্ম, অন্যায়ের প্রতিবাদ ভুলে
মনের অন্তর দৃষ্টিতে বিবেকের প্রশ্নে
আয়নায় মুখোমুখি সমতল দর্পণে
উল্টো দিকের ছবিটা কি মানুষ, মনুষ্যত্বের পরিচয়ে
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে আধুনিক সমাজে !

৪। ক্যানভাস

জীবনের ছবি আঁক ছিলাম মনের ক্যানভাসে
রং তুলি গুলো হারিয়ে গেল দমকা হাওয়ায় কোন ফাঁকে
ভেবেছিলাম রামধনুর রঙে রাঙাবো ছবিটাকে
সৃষ্টিকে জীবন্ত হয়ে দেখবে গোধূলির আলোর সাজে
ছবিও কথা বলে তুলির স্পর্শে রঙের টানে কান পাতলে শোনা যায় না বলা কথা গুলো
সুনিপুণ সৃষ্টিতে ক্যানভাসের সীমারেখা গণ্ডিতে
শিল্পীর ভাবনায় শৈল্পিকতা ধরা পড়ে দৃষ্টিতে
জীবনের ক্যানভাস সোনালী ফ্রেমে বন্দী দেয়ালে আটকে
পরিবারের সদস্যদের মুখগুলো হাসিমুখে মুহূর্তরা ধরা আছে
একান্নবর্তী পরিবার টুকরো হয়ে ক্যানভাসে জমেছে ধুলো
ফুঁ দিয়ে কি ওড়ানো যায় না জমাট সম্পর্কের অন্ধকার গুলো ?
দেয়ালের ঐ পেরেকটা মুক্তির পথ যেন চেয়ে আছে
কতকাল সে আটকে থাকবে একাকীত্বের সাক্ষী হয়ে ?
মুক্তির আস্বাদ অল্পেতে তারও তো সাধ জাগে
দেয়াল হতে বেরিয়ে সম্পর্কের বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়তে …

৫। জীবন- উপন্যাস

জীবন অনেক বড় কে কয়দিন বাঁচে ?
বাঁচার আশা শুধু ঋণী থাকে মুহূর্তের কাছে
মুহূর্তরা পাড়ি দেয় নতুন আশার খোঁজে
আশা স্বপ্ন বোনে অলক্ষ্যে মনের গভীরে ডুবে
জীবন কখনো ছোটগল্পের সার্থক রহস্যে
রহস্য যেখানে দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মাণে আগ্রহে
প্রাচীর যেখানে সুদীর্ঘ উচ্চতার শিখরে আছে
শিখরের আহ্বান হাতছানি দেয় সৃষ্টির কাছে
সৃষ্টি সেখানে ঋণী থাকে স্রষ্টার কাছে
স্রষ্টা সেখানে রচয়িতা নতুনত্বের চরিত্রে
চরিত্র নিয়ে সব সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিশ্বাসে
বিশ্বাস কখনো বিশ্বাসী কখনো বা অবিশ্বাসে
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের আত্মহত্যা জড়িয়ে সম্পর্কে
সম্পর্ক কখনো ক্ষণস্থায়ী আধুনিক সমাজে
আধুনিক সমাজ বড় স্বার্থপর কে কাকে মনে রাখে
মন ও জীবন দুই মেরু কখন উপন্যাসের গল্প লেখে ?

৬। ছাই

সিগারেটের ধোঁয়ায় গাঢ় আগুনটা তীব্র দহনে
আনমনা সুখ টানে পুড়তে পুড়তে ছাই জমেছে
ঠোঁটের সঙ্গে সম্পর্ক বহুদিনের আনন্দে দুঃখে
নিজেও পুড়েছে ওড়াচ্ছে ধোঁয়া দহন ফুসফুসে
তিন ইঞ্চির মোড়কে সঙ্গী ক্যান্সারের আহবানে
ছাই হয়ে উড়েছে জীবনের অনুভূতি অতৃপ্ত আবেগে
ভালোবাসা যেন তীব্র দহনে ছাই হয়ে ঝরে পড়ছে
অনুভূতি নিমেষেই মিশছে ওই মায়াবী নীলাম্বরী চোখে
ছাই কি কখনো প্রিয় হতে পারে তোমার শরীরে
অত্যাচারীর জ্বলন্ত সিগারেট যখন দেহ স্পর্শ করে
অবলা অসহায় অত্যাচার কখনো সহ্য করে মুখ বুজে
বিষাক্ত স্মৃতির পাতায় চিহ্ন রেখে যায় ওই কালো দাগে
আগুনের লেলিহান শিখায় ক্ষমা নেইকারো কখনো
সব আগুন কি নেভানো যায় অজান্তে চলে দহন
সুন্দর শরীর দু মুঠো ছাই শ্মশানের চিতায় ভষ্মিভূত
ছাই উড়িয়ে অমূল্য রতন কি পাওয়া যায় জাগে মনে প্রশ্ন!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।