গুচ্ছ কবিতায় বাপ্পাদিত্য রায়বিশ্বাস

১। সত্যিভূতের রোজনামচা

বাস থেকে নেমে
রিকশাকে পাত্তা না দিয়ে
নিরামিষ তেলেভাজার সঙ্গে
বাণিজ্যিক চুক্তি সারার পর
সিজারের ঠাটে হাঁটতে হাঁটতে নবাবপুত্তুর বুঝলেন
ক্লিওপেট্রা চারদিক ভাসিয়ে দিচ্ছে
রূপোলি জ্যোৎস্নায়
একঠোঙা পৃথিবীর সমস্ত জৌলুস
টুকরো করে মুখে ফেলতে দেখে
চোখ তুলে গোঁফ চাটছে টলেমির বেড়াল
রাস্তাটা সহজ হয়ে উঠতে না উঠতেই
পথের সীমারেখা জুড়ে বৃষ্টি…
সুবল স্যারের রোয়াক ধুয়ে বেরিয়ে আসছে
একযুগ কাটিয়ে দেওয়া কষ্টিপাথর
এরপর তো ব্রুটাসকে আসতেই হয়
আর সম্রাট সমাদ্দার বছরের পর বছর
দিস্তা দিস্তা খেরোপাতায় লিখে চলেন
স্বপ্নসাম্রাজ্যের পতনের কারণ

২। ব্ল্যাকআউট

অন্ধকার হয় না অনেকদিন
টর্চ আর টেবিলল্যাম্পের ছোট বড় লোডশেডিংগুলোর
শীতঘুমে চলে যাওয়া
আমরা কেউ টের পাইনি
দোতলার টানাবারান্দা থেকে
রাস্তা ঝলসে যায় পিঙ্গল আলোয়
সামনের বাবলা-বাবাই বাড়িটা
প্রমোটারের হাতে চলে গেছে
খোঁড়া ভিত থেকে লোহার আঙুল উঠে
ঘন রাতে হাউমাউ করে বলে
শ্রাবণী জ্যোৎস্নার চাঁদজল দেয়ালের গা বেয়ে
এখানেই মিশেছিল
একটুও পড়ে নেই কেন?
গলায় পাথর নামে
বোবাচোখে দেখি
আলোয় ঝলসে যাওয়া গলি
বাঁকতে বাঁকতে পিচ্ছিল হয়ে উঠছে
আর রোয়াকের শেষ ভরসারা
কেটে রাখা গহ্বর থেকে আলকাতরা তুলে
ঢালছে একের পর এক জানলায়।

৩| কারফিউ তোলার পরে

একটা জরুরী ঠিকানায় যাব বলে বেরিয়েছি
পুলিশের ভলান্টিয়ার আমায় ঘুরিয়ে মারছে
এ গলির থেকে সে গলি — অন্ধ থেকে চোরা
চোস্ত কোনো অজুহাতে ওকে ঝেড়ে ফেলা যায়নি
ক্রমাগত আমাদের পেরিয়ে
কাঙ্খিত ঠিকানায় পৌঁছে যাচ্ছে অদৃশ্য পা
পর্দার ওপার থেকে ভেসে আসছে
অতীত ও ভবিষ্যতের বহুশ্রুত প্রচারতরঙ্গেরা
সাফাইবিদ্যায় পারদর্শী আমার সঙ্গীটি
একটা ন্যাড়া দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াল
হঠাৎ ওঠা দমকা হাওয়ায় লতপত করতে লাগল
ফ্লুরোসেন্ট কাগজে মাসাজের প্রতিশ্রুতি
কাঁধে হাত রেখে খেল-খতম বলেছি কি বলিনি
ঘড়ঘড় শব্দে সিমেন্টের চাঙড় সরে হাজির হ’ল
টিয়াপাখির খাঁচা ঝোলানো ঢাকা বারান্দা
যার একপাশে মুখোশ আর স্যানিটাইজার হাতে
ঠায় দাঁড়িয়ে তোমার বকুলফুল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।