• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১২৪)

পর্ব – ১২৪

শ‍্যামলী বাড়ি ফিরে এলে তার বাবা বললেন, তোকে না বেরোতে বারণ করেছি?
শ‍্যামলী বলল, বাবা, কয়দিন হয়ে গেছে, ওরা বেল পেয়ে বাড়ি এসেছে। কিন্তু কে উকিল, কত টাকা ফিজ় নেবে জানা হয় নি। শ‍্যামলীর কথায় শান্তু অন্তু দুইভাই অস্বস্তি বোধ করছিল। বাসন্তীবালা বললেন, তোর ওই এক কথা। একটা জিনিস মিটে গেছে, পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে, তুই কেন আবার পুরোনো কথা খুঁচিয়ে তুলছিস?
শ‍্যামলী মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে বাবাকে বলল, ওদের অ্যারেস্ট হবার খবরটা পুলিশ আমাকে দিয়েছিল। আমি জানিনা পুলিশ আমাকে ফোন করে ডেকে পাঠাল কেন?
 শান্তু উসখুস করে উঠে যেতে চাইছিল। শশাঙ্ক পাল তাকে বললেন, বোস্, তোদের দরকারের জন‍্যেই ও থানায় গিয়েছিল।
অতনু বলল, যাতে আমাদের আবার ধরে নিয়ে যায়, তাই জন‍্যে পুলিশকে কলকাঠি নাড়তে বলে এসেছিস তো?
শশাঙ্ক পাল তাঁর ছোটছেলে কে ধমক দিলেন। যা জানিস না, বুঝিস না, সে নিয়ে কথা বলিস কেন বাঁদর?
অতনু বলল, সব লেখালেখি করে সই সাবুদ করে দিলাম বলেই তো ছেড়ে দিল। ওর আবার কি দরকার পড়ল নতুন করে ঝামেলা করবার?
বাবা হেসে বললেন, তোরা দুটো মাথাতেই লম্বা হয়েছিস। আইন আদালত কিচ্ছু বুঝিস না।
বাসন্তীবালা স্বামীর দিকে চোখ পাকিয়ে বললেন, তুমি যেন কী, সবাই কি সব জানে?
 শশাঙ্ক পাল বললেন, জানে না যদি, জেনে নিতে চায় না কেন?
শ‍্যামলী বলল, বাবা, আমি পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। কিছু জেনে এসেছি। কিন্তু ওরা যখন তাতে এত বিরক্তি দেখাচ্ছে, তখন সে কথা আমার থাক। ওদের নিজের মতে চলার পুরোপুরি অধিকার ওদের আছে। বাবা, পুলিশ প্রথমেই আমাকে বলেছিল বেল নেবার জন্য উকিলবাবুর সাহায্য নিতে হবে। যেহেতু উকিলের ফি দেবার মত আর্থিক অবস্থা আমার নেই, আমি তোমাকে বিষয়টা বলি। তারপর তুমি গিয়ে ওদের বাড়িতে এনেছ। তুমি চিন্তা করছিলে উকিল কে, বেলের জন‍্য কত টাকা দিতে হবে, তাই আমি থানায় গিয়েছিলাম।
শশাঙ্ক পাল বললেন, তা জানতে পারলি কিছু?
শ‍্যামলী বলল, বাবা, সে কথা তোমাকে পরে বলছি। আপাততঃ সবকিছু আমি সামলে দিয়ে এসেছি, এটা জেনে এখন এ বিষয় টা থামাতে চাইছি।
বাসন্তীবালা বললেন, অ সামলে দিয়ে এসেছিস? তাহলে চিন্তার আর কোনো কিছু নেই তো?
শ‍্যামলী বলল মা, আমি সামলে দিয়ে এসেছি। দুপুরে কথা দিয়েছিলাম আমি আজ রেঁধে খাওয়াব। এখন আমি রাঁধতে চললুম। তোমরা গল্প করো।
শশাঙ্ক পাল বললেন, সকালে বড়ি দিয়ে লাউয়ের তরকারি আর ডিমের ডালনা, দুটোই ভারি ভাল রেঁধেছিলি। এ বেলা কি রাঁধবি?
শ‍্যামলী বলল, ঘুগনি আর হিঙের কচুরি।
বাসন্তীবালা বললেন, কচুরি খাবার শখ হয়েছে তো সবিতাকে বল্ না। করবে এখন।
শ‍্যামলী বলল, আজ কারখানা খোলা হয়নি তাই। আমি কি কারবার ফেলে আসতে পারতাম?
তারপর বলল, বাবা, তুমি যদি আমার রান্না করা দেখতে চাও তো এসো। এরপর শ‍্যামলী গেল কাপড় বদলে আসতে।
রান্নাঘরে গিয়ে সে দেখল সবিতাপিসি ময়দা মেখে লেচি কেটে রেখেছেন। ঘুগনির মটর আগেই ভিজিয়ে রেখে গিয়েছিল। এবার ঘুগনি রান্নার পর কচুরির পুর তৈরি করতে শুরু করল শ‍্যামলী। বাসন্তীবালা বললেন দাঁড়া, হিং কোথায় আছে দেখি। আগে থেকে না গুছিয়ে পট করে রান্নাবান্না শুরু করে দিলে কি হয় রে?
শ‍্যামলী বলল, হিং আমি যোগাড় করে এনেছি মা। তুমি শুধু বসে বসে দ‍্যাখো।
শশাঙ্ক পালও এসে জুটলেন রান্নাঘরে।
শ‍্যামলী বলল, বাবা হিং জিনিসটা কি বলো তো?
শশাঙ্ক পাল বললেন, গাছে হয় শুনেছি। কাবুলিওয়ালারা আনত। নিশ্চয়ই ওদের দেশে হয়।
শ‍্যামলী বলল, বাবা, একটা ছড়ায় ছিল, হিঙ্গুল গাছে বেঁধে থো। হিংকে ইংরেজি ভাষায় বলে আসাফিটিডা। এটা ফেরুলা নামে একরকম গাছের আঠা‌। সাড়ে তিন থেকে জোর পাঁচ ফুট লম্বা হয় গাছটা। হিং তারই আঠা। এতে সালফার আছে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।