দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১৪৪)

পর্ব – ১৪৪

সন্ধ‍্যা নেমে গিয়েছে।  বাবা মা সবাই অনেকক্ষণ ধরে  চুপ করে আছে দেখে শ‍্যামলী বলল, কি গো, তোমরা চা খাবে না? যাই আমি গিয়ে চা করে আনি।
বাসন্তীবালা রুক্ষস্বরে বলে উঠলেন, তোর জ্বালায় গা ধুতে ভুলে গেলাম। সন্ধ্যা দিতে হবে। বলে তিনি দৌড়ে কলঘরে গেলেন। সবিতাও নিচে গেলেন গা ধুতে। শ‍্যামলী বলল, বাবা, আমি তোমার জন‍্য চা করে আনি?
শশাঙ্ক পাল বললেন, শ‍্যামলিমা, বোস্।
শ‍্যামলী একটা টুল নিয়ে বাবার খাটের কাছে এসে বসে বলল, বলো বাবা।
গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে শশাঙ্ক পাল বললেন, হ‍্যাঁ রে মা, তুই যে এসব আবোলতাবোল বকছিস, তুই বল্ তো, এইসব ভুলভাল কথা পাঁচ কান হলে আমি তোর বিয়ে দিতে পারব?
শ‍্যামলী বলল, আমি কি ভুলভাল বললাম বাবা?
শশাঙ্ক পাল বললেন, এই যে তুই বলে বসলি, বিয়ে মানে বেশ‍্যাবৃত্তি, এর ফল কি হতে পারে জানিস্?
শ‍্যামলী বলল, বাবা, পার্ল এস বাক নামে একজন লেখক ছিলেন।
শশাঙ্ক পাল বললেন, ভদ্রলোক কোন্ দেশের ?
শ‍্যামলী বলল, না বাবা উনি মহিলা। চীন দেশে থেকেছেন, কাজ করেছেন।
শশাঙ্ক পাল বললেন, মহিলা? এই যে তুই বললি লেখক!
শ‍্যামলী বলল, ঠিকই তো বলেছি বাবা, ভদ্রমহিলা লিখে বিখ্যাত। তাই লেখক।
শশাঙ্ক পাল বললেন, সেক্ষেত্রে তোর লেখিকা বলা উচিত ছিল।
শ‍্যামলী বলল, কেন? একজন ভদ্রমহিলা হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাতে কি ওই পদের নাম তুমি বদলে দাও? আমাদের পশ্চিমবঙ্গে একজন ভদ্রমহিলা ছিলেন। পদ্মজা নাইডু। তিনি কি দায়িত্বে ছিলেন মনে করো তো?
শশাঙ্ক বললেন, ওই তো ধরমবীরের আগে দশ বার বছর ধরে আমাদের রাজ‍্যপাল ছিলেন।
শ‍্যামলী বলল, হ‍্যাঁ বাবা, ঊনিশ শো ছাপ্পান্ন সালে নভেম্বরের এই সময় থেকে সাতষট্টি অবধি তিনি চেয়ারে ছিলেন। পঁচাত্তর সাল অবধি বেঁচে ছিলেন। দ‍্যাখো বাবা, পদ্মজা নাইডুকে তুমি ঠিক ঠিক রাজ‍্যপালই বলেছ। স্ত্রীলিঙ্গ বানাও নি। বাবা তুমি বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতকে মনে করতে পার?
শশাঙ্ক বললেন, কেন পারব না? উনি যে জ‌ওহরলাল নেহেরুর বোন। ইন্দিরাজির পিসি।
শ‍্যামলী বলল, আমি হলে বলতাম , তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে, লণ্ডনে, রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বাবা, উঁচুপদে মেয়েরাও পুরুষের সমান যোগ্যতায় পুরুষের সমান দায়বদ্ধতা দেখিয়ে কাজ করতে পারে। তাই চেয়ারের নাম না বদলে আমরা তাঁদের প্রধানমন্ত্রী, রাজ‍্যপাল ও রাষ্ট্রদূত, এইভাবে বলি। পদের নামের পরিবর্তন করতে দিই না। তাহলে কেন লেখিকা বলব? কেন অধ‍্যাপিকা, শিক্ষিকা এইসব বলব?

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।