দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ২৮)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ২৮
১২৭
“নাও, হয়েছে! এবার একটু থামো মহারাণী। বাপ রে বাপ, মেয়েছেলের মুখে এত চোপা ভাল না। চলেছে তো চলেইছে। লাগামের কোনো বালাই নেই ! ”
সবিতা পিসির কথায় সম্বিৎ ফেরে শ্যামলীর। ফলের প্লেটটা নেয় তার হাত থেকে। শশাঙ্ক পাল আধশোয়া হয়ে বসেন। বলেন “তবু বলবো মা, জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে যুদ্ধ করে লাভ নেই। এই যে তুই সাত সকালে একটা হাঙ্গামা জুড়লি, তাতেও কিন্তু কারবারের ক্ষতি হল। একটু আধটু লোকসান মেনে নিয়েই চলতে হয় মা!”
সবিতা ঝঙ্কার দিয়ে বলে” সে কাজের বিদ্যে তোমার মেয়ে শেখে নি। যেদিন বাড়িতে থানার দারোগা এল, তোমার মেয়ে তাকে ধমকালে। আমার তো হাত পা পেটের ভেতর সেঁধিয়ে গেছে, বাপ রে বাপ, দারোগা বলে কথা। তার হাঁকাড় শুনলে আচ্ছা আচ্ছা চোর ডাকাতের প্যান্টে ইয়ে হয়ে যায়, আর শ্যামলী না কি তাকেই ধমক দিচ্ছে! সেদিন থেকেই জানি, এ মেয়ে একদিন না একদিন ঠিক একটা আগুন লাগাবে !”
শ্যামলী হেসে বলে, “পিসি, তুমি কিন্তু সেদিন দরজার খিলটা নিয়ে দারোগার মাথায় বাড়ি মারবে বলে ছুটে এসেছিলে। আর বামুন মা সেই দেখে বলে আঁশ বঁটি টা আনবো ? সেদিন তো তোমাদের দেখে রণ রঙ্গিনী মনে হচ্ছিল!”
“কি জানি মা, লোকে বলে সোনার সঙ্গে থাকতে থাকতে লোহাতেও সোনার রঙ ধরে !”
“তুমি দেখেছ না কি পিসি?”
“দেখবো আর কি করে? বর মরে যেতে ছ মাস ঘুরলো না ভাসুরেরা এক কাপড়ে দূর করে দিল। যে দিন তিনি চলে গেলেন, সেদিন থেকেই হাতে লোহা নেই। আর লোহা নেই, তো সোনাও নেই। জা জেউড়িরা সব গা থেকে খুলে নিল। বলল কড়ে রাঁড়ির নাকি ওসব পরতে নেই। সায়া সেমিজটা অব্দি পরতে দিত না। আমি ছোট মেয়েটা, থান কাপড় সামলাতে পারি ? এদিক টানি, ওদিক আলগা হয়ে যায়। সবাই বকাবকি করে, বেহায়া মেয়েছেলে বলে। আমার আর সোনাই বা কি, লোহাই বা কি?” বলে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। তার ফোঁপানিতে ঘরে একটা স্তব্ধতা নেমে আসে।